ঘটনার তদন্তে জলপাইগুড়ি মেডিক্যালের এক কর্তাকে মাথায় রেখে তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। প্রতীকী ছবি।
হাসপাতাল থেকে বৃদ্ধার দেহ কাঁধে নিয়ে ছেলে ও বাবার হেঁটে যাওয়ার দৃশ্যে হইচইয়ের পরে, নড়াচড়া শুরু হল বিভিন্ন মহলে। অভিযোগ, বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল চত্বরের বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা তিন হাজার টাকা ভাড়া চাওয়ায়, তা দিতে পারেনি মৃত লক্ষ্মীরানি দেওয়ানের (৭২) পরিবার। তাই ছেলে-বাবা মৃতদেহ নিয়ে হাঁটা দেন। পথে শববাহী গাড়ি দিয়ে তাঁদের সাহায্য করে জলপাইগুড়ির এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এ দিন জেলার স্বাস্থ্য-কর্তাদের সঙ্গে ভিডিয়ো বৈঠক করেন খোদ রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। তার পরে, ঘোষণা হয়েছে একগুচ্ছ নিয়ম। ওই হাসপাতাল স্বাস্থ্য-প্রশাসনের হিসাবে জলপাইগুড়ি মেডিক্যালের অধীন। মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের নির্দেশ, যে কোনও দেহই হাসপাতাল থেকে ‘সম্মানজনক’ ভাবে বার করতে হবে। ঘটনার তদন্তে জলপাইগুড়ি মেডিক্যালের এক কর্তাকে মাথায় রেখে তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে কমিটিকে। হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখছেন কর্তৃপক্ষ।
স্বাস্থ্যসচিব পরে বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর এই বিষয়ে বিশদ রিপোর্ট সংগ্রহ করছে। জেলা প্রশাসনের কাছেও বিস্তারিত রিপোর্ট জানতে চাওয়া হয়েছে। হাসপাতাল থেকে মৃতদেহ বার করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম বেঁধে দেওয়া হচ্ছে।’’ ঘটনাটিকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে দাবি করেছিলেন বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা। অ্যাম্বুল্যান্স পরিচালন সমিতির পক্ষ থেকে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ মাহাতো বলেন, ‘‘অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। এ ছাড়া, পুলিশ গোটা ঘটনা খতিয়েও দেখছে।’’ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক অঙ্কুর দাসের দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। পাশাপাশি, বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা হাসপাতাল চত্বরে ভাড়ার তালিকা প্রকাশ্যে টাঙাতে উদ্যোগী হয়েছেন। চালকদের নিয়ে এ দিন বৈঠক করেন আইএনটিটিইউসি-র জলপাইগুড়ি শহর ব্লক সভাপতি পুণ্যব্রত মিত্র। সংগঠনের সম্পাদক দিলীপ দাসের দাবি, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যেন না ঘটে, তা দেখা হবে।
এ দিন সন্ধ্যায় ‘ভার্চুয়াল’ বৈঠকে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব ছাড়াও, ছিলেন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য, স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী। হাসপাতাল থেকে মৃতদেহ বার করার ক্ষেত্রে এখন থেকে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলার নির্দেশিকাও জারি করা হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।
মেডিক্যালের সুপার তথা ভাইস প্রিন্সিপাল কল্যাণ খান বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্তে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। রিপোর্ট দেখে পদক্ষেপ করা হবে। শববাহী গাড়ি বা মৃতদেহ বহন করার জন্য উপযুক্ত পরিবহণ আসার পরেই হাসপাতাল থেকে দেহ ছাড়া হবে। এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তারক্ষীরা তদারক করবেন।’’