বাইরে তখন ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান— নিজস্ব চিত্র।
‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি শুনেও এ বার শান্ত রইলেন আরও পরিণত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গাড়ি থেকে নেমে স্লোগানদাতাদের দিকে এগিয়ে যেতে দেখা গেল না তাঁকে। বরং কনভয় লক্ষ্য করে স্লোগান ছুড়ে দেওয়া গুটিকতক ব্যক্তিকে অবজ্ঞা করে চলে গেলেন। মঙ্গলবার কোচবিহার দেখল, ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে আর প্ররোচিত করা যাবে না।
মঙ্গলবার বিকেলের ঘটনাস্থল শহরের শিবযজ্ঞ এলাকা। পিলখানা এলাকায় মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষ করে শিবযজ্ঞ মন্দিরে পুজো দিতে যাচ্ছিলেন মমতা। তাঁকে দেখতে রাস্তার দু’ধারে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। ধীরগতির কনভয়ের একেবারে সামনে সাদা এসইউভি-তে চালকের পাশের আসনে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জনতার শুভেচ্ছার জবাবে প্রতিনমস্কার করছিলেন তিনি।
অভিযোগ, ভিড়ে মিশে ছিলেন বিজেপি-র কিছু সমর্থকও। মন্দির থেকে ৫০০ মিটার দূরে তাঁদেরই কয়েকজন হঠাৎ কনভয় লক্ষ্য করে ‘দিদি জয় শ্রীরাম’ স্লোগান তোলে। মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু তাঁর আসনেই হাত জোড় করে বসেছিলেন। স্লোগানদাতাদের দিকে ফিরেও চাননি। গাড়ির গতিও কমেনি। কনভয়ের অন্য গাড়িগুলিও এগিয়ে চলে। তবে পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে চলন্ত অবস্থাতেই পিছনের একটি গাড়ির খোলা দরজা দিয়ে ঝুলতে ঝুলতে এক নিরাপত্তারক্ষী স্লোগানদাতাদের উদ্দেশে হাত নেড়ে থামতে ইঙ্গিত করছিলেন।
শিবযজ্ঞ মন্দিরে প্রায় ২০ মিনিট সময় কাটিয়ে বাইরে অপেক্ষমান জনতার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর স্লোগান-স্থলের দিকে প্রায় ২০০ মিটার হেঁটে যান। সে সময় কোনও স্লোগান শোনা যায়নি। গাড়িতে উঠে ফের ওই পথে ফিরলেও কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঘটেনি। মঙ্গলবারের ঘটনাপ্রবাহ দেখে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, আগামী বিধানসভা ভোটে বিজেপি-র তরফে প্ররোচনার আঁচ পেয়ে ‘সংযমের অনুশীলন’ শুরু করে দিয়েছেন মমতা।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের প্রচারের সময় পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণায় প্রথম ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান শুনে মেজাজ হারাতে দেখা গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীকে। গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়েছিলেন। ‘তীব্র প্রতিক্রিয়া’ও দেখিয়েছিলেন। ওই ঘটনার জেরে কয়েক জনের বিরুদ্ধে পুলিশ পদক্ষেপ করেছিল।
লোকসভা ভোটের পরে উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে ধারাবাহিক রাজনৈতিক সংঘর্ষের প্রতিবাদে নৈহাটিতে সত্যাগ্রহ কর্মসূচির আয়োজন করেছিল তৃণমূল। গত বছরের ৩০ মে সেখানে যাওয়ার পথে ভাটপাড়ার রিলায়্যান্স জুটমিলের সামনে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান শুনে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন মমতা। কনভয়ের সঙ্গী পুলিশ আধিকারিকদের আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর নৈহাটির নদিয়া জুটমিলের সামনে ফের স্লোগান শুনে মমতা গাড়ি থেকে নেমে বলেছিলেন, ‘‘চামড়া গুটিয়ে ছেড়ে দেব।’’
আরও পড়ুন: মোদী-শাহের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ক্ষতিপূরণের মামলা খারিজ আমেরিকায়
মুখ্যমন্ত্রীর মেজাজ হারানোর সেই দৃশ্য ফলাও করে প্রচার করেছিল দেশের সংবাদমাধ্যম। ভিডিয়ো ফুটেজ ভাইরাল হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। ওই ঘটনার জেরে বেশ কয়েকজন বিজেপি সমর্থককেও পুলিশ গ্রেফতার করেছিল।
আরও পড়ুন: প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রধান অতিথি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন
মঙ্গলবার কোচবিহারে হাতে গোণা স্লোগানদাতাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। ঘটনাচক্রে, যে দফতরের ভার মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই।