‘গুলি খেয়ে সঙ্গীরা গায়ে ঢলে পড়ছেন’

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এসএসকেএম হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার ইউনিটের একতলার পাঁচ নম্বর শয্যায় শুয়ে একনাগাড়ে কথাগুলো বলে গেলেন মুর্শিদাবাদের বাহালনগর গ্রামের বাসিন্দা জহিরুদ্দিন সরকার।

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৯ ০২:১৮
Share:

এখনও আতঙ্কে: এসএসকেএমে জহিরুদ্দিন সরকার। নিজস্ব চিত্র

ডান হাত এবং বাঁ পায়ে গুলি নিয়ে পাঁচ সঙ্গীকে শরীরের উপর থেকে ঠেলে সরিয়ে কোনও রকমে হাঁটা শুরু করেছিলেন। তিনি যে বেঁচে রয়েছেন সেটাই যেন বুঝতে পারছিলেন না। ঘোরের মধ্যেই প্রায় ১৫ মিনিট হেঁটে ফিরে এসেছিলেন নিজেদের আস্তানায়। ‘‘গলা শুকিয়ে কাঠ, কিন্তু এক ফোঁটা জলও খুঁজে পেলাম না ঘরে। ভয়ে? আতঙ্কে? তা-ই হবে নিশ্চয়। তারও বেশ কিছু ক্ষণ পরে সেই আস্তানা থেকে বেরিয়ে আবার হাঁটতে হাঁটতে কোনও ক্রমে পৌঁছলাম এক পরিচিতের আস্তানায়। হাত-পা থেকে রক্ত ঝরছে তখন। তিনিই ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন শ্রীনগরের হাসপাতালে।’’

Advertisement

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এসএসকেএম হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার ইউনিটের একতলার পাঁচ নম্বর শয্যায় শুয়ে একনাগাড়ে কথাগুলো বলে গেলেন মুর্শিদাবাদের বাহালনগর গ্রামের বাসিন্দা জহিরুদ্দিন সরকার। জানালেন, গত ৬ অক্টোবর একই গ্রামের পাঁচ যুবকের সঙ্গে পাড়ি দিয়েছিলেন কাশ্মীরের গুলগামে। সেখানে আপেল তোলা ও প্যাকেজিংয়ের কাজ করতে বাকিরা আগে গেলেও জহিরুদ্দিন এই প্রথম। সেখানে ২৬ দিন কাজ করে ৩০ অক্টোবর কলকাতায় ফেরার জন্য ট্রেন ধরার কথা ছিল। আগের দিন সন্ধ্যায় তাই সকলে মিলে গুলগামে নিজেদের আস্তানায় বসে গল্প করছিলেন।

আচমকা মুখ-ঢাকা একটি লোক হাতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সোজা ঘরে ঢুকেই হিন্দিতে ছ’জনকে নীচে নেমে আসার নির্দেশ দেয়। নীচে নেমে তাঁরা দেখেন সেখানে অপেক্ষা করছে আরও কয়েক জন। সকলেরই মুখ ঢাকা, হাতে আগ্নেয়াস্ত্র। তার পরেই ফের নির্দেশ তাদের অনুসরণ করার। জহিরুদ্দিনের কথায়, ‘‘প্রায় ১০-১৫ মিনিট ধরে অন্ধকারে আমাদের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে গেল জঙ্গিরা। একটা ফাঁকা জায়গায় পৌঁছলে হাঁটু গেড়ে বসতে বলে। সকলেই ভয়ে কাঁপছিলাম। বুঝে গিয়েছিলাম কেন আমাদের আনা হয়েছে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: শ্রমিক নেই, বাগানেই পচছে আপেল

আরও পডু়ন: দীর্ঘ ন’বছর পরে প্রেসিডেন্সি ফের এসএফআইয়ের

হাঁটু গেড়ে বসার পরেই সামনে থেকে একের পর এক গুলি চালাতে শুরু করে জঙ্গিরা। জহিরুদ্দিনের কথায়, ‘‘একটা গুলি আমার বাঁ হাতে লাগতেই যন্ত্রণায় শুয়ে পড়ি। এর পর একের পর এক গুলির শব্দ। একের পর এক সঙ্গী দেখি আমার গায়ের উপরে পড়ছেন।’’ বেশ কয়েক মিনিট ধরে সমানে গুলি করে যায় জঙ্গিরা। কত সময় সেটা আজ আর জহিরুদ্দিন মনে করতে পারছেন না। কিছু পরে কোনও শব্দ না পেয়ে সঙ্গীদের ডেকেছিলেন। ভেবেছিলেন তাঁর মতো হয়তো বা কেউ বেঁচে রয়েছে। বলেছিলেন ‘‘ওরা চলে গিয়েছে।’’ কিন্তু সাড়া মেলেনি। তবে তিনি কী করে বেঁচে গেলেন, তা আজও আশ্চর্য তাঁর কাছে। কলকাতায় ফিরে তাই একটাই কথা, ‘‘উপরওয়ালা বাঁচিয়ে দিয়েছেন।’’ তিনি যখন হাসপাতালে কথাগুলো বলে যাচ্ছেন তখন বাইরে অধীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন মা আর স্ত্রী। একবার চোখে দেখার জন্য।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement