রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।
পুরভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী আনার জন্য রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে কার্যত ‘উৎসাহিত’ করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। একই সঙ্গেই জানালেন, কমিশন চাইলে ভোটের কাজে অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগের ব্যবস্থা করবেন তিনি। রাজ্যপালের মতে, হিংসার মাধ্যমে ভোটপ্রক্রিয়া বানচাল করার চক্রান্ত রুখতে এবং ভোটের কাজে প্রশাসনের অযাচিত হস্তক্ষেপ রুখতে আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করা উচিত। রাজ্যপালের এই অবস্থানের কড়া সমালোচনা করেছে তৃণমূল।
কিছু দিন আগেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাসকে রাজভবনে ডেকে পাঠিয়ে পুরভোট নিয়ে আলোচনা করেন ধনখড়। পরে সাংবাদিকদের কাছে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ তুলে পুর নির্বাচনে অশান্তির আগাম আশঙ্কা ব্যক্ত করে ধনখড় জানিয়ে দেন, রাজ্যপাল হিসেবে তিনি যে কোনও মূল্যে নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করবেনই।
এর পরেই বৃহস্পতিবার সৌরভবাবুকে চিঠি দিয়েছেন রাজ্যপাল। চিঠিতে ২০১৩ এবং ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসা এবং ‘অগণতান্ত্রিক’ ঘটনাপ্রবাহের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন ধনখড়। মনে করিয়ে দিয়েছেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশন রাজ্য সরকারের অধীনস্থ বা বর্ধিত কোনও প্রতিষ্ঠান নয়। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের মতোই ভোট পরিচালনায় তার পূর্ণ স্বাধীনতা আছে। ধনখড় চান, অতীতের ভোটের অযাচিত ঘটনাগুলির পুনরাবৃত্তি ঠেকানোর জন্য পদক্ষেপ করুন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বিশুদ্ধ রাখতে পুলিশ ছাড়াও অতিরিক্ত বাহিনী চেয়ে সময়মতো অনুরোধ জানাক কমিশন। ভোটারদের আস্থা বাড়িয়ে তাঁদের নিরাপদে ভোটদানের ব্যবস্থা করার আর্জি সৌরভবাবুকে জানিয়েছেন রাজ্যপাল। একইসঙ্গে, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে খোলা মনে আলোচনা করে তবে ভোটের দিন স্থির করার আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সুষ্ঠু নির্বাচনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। রাজ্যপাল নিজের মনোভাব তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাঁর ওই মন্তব্যেই স্পষ্ট রাজ্য সম্পর্কে তিনি চরম বৈরিতার মনোভাব পোষণ করেন।’’
তবে রাজ্যের বিরোধী দলগুলি চায় পুরভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী আসুক। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, ‘‘২০১৫-র পুরসভা এবং ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসক দলের নেতা-মন্ত্রী ও কর্মীরা প্রশাসনের সহযোগিতায় গোটা ভোটকে প্রহসনে পরিণত করেছিলেন। আমরা এ বারের পুরভোট অবাধ ও সুষ্ঠু ভাবে করার স্বার্থে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি।’’ প্রদেশ কংগ্রেসের পুরভোট সংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক শুভঙ্কর সরকারও বলেন, ‘‘গত পুরভোট এবং পঞ্চায়েত ভোটে আমরা ভোট লুট হতে দেখেছি। তাই অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের স্বার্থে পুরভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি আমরা নির্বাচন কমিশনে জানিয়ে এসেছি।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা এবং মানুষ মনে করে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া পুরভোট অবাধ এবং সুষ্ঠু হবে না।’’