জগদীপ ধনখড়।
রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের কোচবিহার সফর নিয়ে বুধবার থেকেই রাজ্যের সঙ্গে নতুন করে সঙ্ঘাতের আবহ তৈরি হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে কোচবিহারে পা রেখেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করলেন ধনখড়। পাশাপাশি রাজ্য সরকারের উদ্দেশে তাঁর তোপ, ‘‘কোনও প্রশাসনিক নির্দেশ সংবিধানকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।’’
বৃহস্পতিবার রাজ্যপালের কোচবিহার সফর ঘিরে রাজভবন এবং নবান্নের মধ্যে সঙ্ঘাতজনিত উত্তাপ বাড়ছিল। ভোট পরবর্তী হিংসার বিষয়টিকে সামনে রেখে রাজ্যপালের কোচবিহার সফরকে সরকারি ‘বিধি এবং রীতি’ ভেঙে একতরফা সিদ্ধান্ত বলে আখ্যা দিয়েছিল নবান্ন। যদিও তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে রাজ্যপাল জানিয়ে দেন, সাংবিধানিক বিধি মেনেই শীতলখুচি-সহ কোচবিহারের বিভিন্ন এলাকা সফরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এমতাবস্থায় রাজ্যপাল কোচবিহারে গিয়ে কী বার্তা দেন তা নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২ টার কিছু পরে বিএসএফের কপ্টারে কোচবিহার বিমানবন্দরে পৌঁছন ধনখড়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক, শীতলখুচির বিধায়ক বরেনচন্দ্র বর্মণ এবং মাথাভাঙার বিধায়ক সুশীল বর্মণ। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে ধনখড় বলেন, ‘‘আমি মুখ্যমন্ত্রীর চিঠির জবাব দিয়েছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী আমাকে চিঠি লিখেছিলেন। কিন্তু তার আগে সংবাদমাধ্যমে তা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন নিজের বক্তব্য তুলে ধরার জন্য। আমি বলেছি, কোনও প্রশাসনিক নির্দেশ সংবিধানকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ইতিহাস আমাদের বিচার করবে। ইতিহাস মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়, দেশের আমলাতন্ত্র এবং সংবাদমাধ্যমের বিচার করবে।’’
ভোট পরবর্তী হিংসা দমনে উচ্চ আদালত রাজ্যের ভূমিকার প্রশংসা করেছে। যদিও ধনখড়ের প্রশ্ন, ‘‘উচ্চ আদালত রাজ্য সরকারকে ক্লিনচিট দিয়েছে। কিন্তু আমি ক্লিনচিট দেওয়ার মতো কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। আমিও তদন্ত করে দেখলাম। কিন্তু বুঝতে পারছি না কী হল। আমি উচ্চ আদালতকে সম্মান করি। তবে যখন রায় ঘোষণা হবে তখন সকলে জানতে পারবেন।’’
রাজ্যপালের আরও দাবি, তিনি সংবিধানের রক্ষা করবেন এবং দেশের সেবা করবেন। এই দাবিকে সামনে রেখেই ধনখড় বলছেন, ‘‘বাধা এলেও আমি প্রভাবিত হব না। দেশের সামনে করোনার সঙ্কট করোনার। আবার পশ্চিমবঙ্গে করোনার সঙ্গে রয়েছে অন্য সঙ্কট— ভোট পরবর্তী হিংসা। আমি মুখ্যমন্ত্রীকে সহযোগিতার কথা বলেছি। আমার একটাই বিচার, গণতন্ত্রে যেন কুঠারাঘাত না হয়। যারা আইন হাতে তুলে নিচ্ছে তারা যেন শাস্তি পায়। কিন্তু সরকারের তরফে এমন ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে রাজ্যপাল রাজভবনে বসে থাকবেন এমনটা হতে পারে না।’’
রাজ্যপালের সাংবিধানিক ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে ধনখড় আরও বলেন, ‘‘আমি আগামিকাল অসম যাচ্ছি। ভোট পরবর্তী হিংসার জন্য পশ্চিমবঙ্গ থেকে অনেকেই অসমে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে দেখা করে আমি বার্তা দিতে চাই, আপনারা পশ্চিমবঙ্গে আসুন। সে জন্য যদি আমাকে বুকে গুলি খেতে হয় তাও খাব।’’ প্রসঙ্গত, এ রাজ্য থেকে ঘরছাড়া হয়ে অনেকেই অসমে প্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছে বলে অভিযোগ করছে বিজেপি। যদিও সেই এ রাজ্যের বাসিন্দাদের অসমর ত্রাণশিবিরে থাকার অভিযোগ ভুয়ো বলে পাল্টা জানিয়েছে তৃণমূলও।
শীতলখুচি কাণ্ডের পর মুখ্যমন্ত্রীর ‘ভূমিকা’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ধনখড়। তাঁর মন্তব্য, ‘‘কোচবিহারের ঘটনা ঘটতেই মুখ্যমন্ত্রী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দিলেন, ‘গণহত্যা, ঠান্ডা মাথায় খুন’ এ ধরনের আচরণ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কাম্য নয়।’’
বৃহস্পতিবার ধনখড়ের কোচবিহার সফর অবশ্য মসৃণ হয়নি। শীতলখুচির জোড়পাটকি এলাকায় তাঁকে কালো পতাকা দেখান স্থানীয় নাগরিক মঞ্চের সদস্যরা। রাজ্যপালের কোচবিহার সফর ঘিরে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে তৃণমূলও। তৃণমূল নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর শপথ নেওয়ার পরেই রাজ্যের সর্বত্রই শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় হয়েছে। কিন্তু এখন রাজ্যপাল এসে আবার শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করার চেষ্টা করছেন।’’