অনেক প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকই অবশ্য জানাচ্ছেন, ২৮ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভার বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে। সেখানে বিধানসভা ডাকার প্রস্তাবটি সংশোধন করে ফের পাঠানো হতে পারে রাজভবনে। রীতি অনুযায়ী তখন মন্ত্রিসভার বার্তাকে মান্যতা দেওয়ারই কথা রাজ্যপালের।
ফাইল চিত্র।
ফোন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভুল স্বীকার করে বিষয়টি সংশোধন করে নেওয়ার আর্জি জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। তবু নিজের সিদ্ধান্তে অনড় রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। মুখ্যসচিবের পাঠানো চিঠি কার্যত আগ্রাহ্য করে তিনি ফের জানিয়ে দিলেন, মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত ছাড়া বিধানসভার অধিবেশনের দিনক্ষণ সংক্রান্ত কোনও আদেশনামায় তিনি সই করবেন না।
বিষয়টি শুধু রাজনৈতিক মহলে নয়, প্রশাসনেও প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। রাজভবন ও সরকারের মধ্যে সম্পর্কের বিন্যাস বিষয়ে অবহিত, এমন বহু আমলাও মনে করেন, যেখানে ছাপার একটি মাত্র ভুলই টানাপড়েনের কেন্দ্রে, সেখানে রাজ্যপাল বিষয়টিকে এত দূর না-টেনে অঙ্কুরেই মীমাংসা করে নিতে পারতেন। রাজভবনে দায়িত্ব পালন করে আসা এক প্রাক্তন অফিসারের মন্তব্য, অনেক সময়েই এমন ছোটখাটো অনেক বিষয় রাজভবন ও সরকারের ফোনালাপেই মিটে যায়।
কিন্তু ঘটনাচক্রে ধনখড় যে-ভাবে বিষয়টিকে সাংবিধানিক জটিলতার স্তরে নিয়ে যাচ্ছেন, সেটা রাজনৈতিক বলে মনে করছেন শাসক দলের অনেকেই। রাজ্যের এক মন্ত্রী তথা শাসক দলের নেতা শুক্রবার বলেন, “বিষয়টি নিয়মমাফিক করার জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠক ২৮ ফেব্রুয়ারি ডাকা আছে। সেটি এক দিক। কিন্তু রাজ্যপাল বিষয়টিকে প্রকাশ্যে এনে গত দু’দিন ধরে প্রকাশ্যে এনে যে-ভাবে বিতর্কের আবহ তৈরির চেষ্টা করলেন, সেটা তাঁর পদের পক্ষে কখনওই অভিপ্রেত নয়।”
বিরোধী বিজেপি প্রত্যাশিত ভাবেই রাজ্যপালের এই ভূমিকাকে ‘উচিত’ কাজ বলে মনে করে। ওই দলের এক নেতার মন্তব্য, “রাজ্যপাল সংবিধানের রক্ষক। সংবিধানসম্মত ভাবে যা করা উচিত, সেটাই তিনি করছেন।”
বিধানসভার বাজেট অধিবেশন ৭ মার্চ শুরু করতে চেয়ে সরকারের পাঠানো প্রথম প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিল রাজভবন। মন্ত্রিসভার অনুমোদন থাকা পরের প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন রাজ্যপাল। কিন্তু তাতে ‘টাইপোগ্রাফিক’ ভুলে ৭ মার্চ বেলা ২টোর (পিএম) পরিবর্তে রাত ২টো (এএম) ছাপা হয়ে যায়। ‘ভুল’ ধরেও রাত ২টোতেই অধিবেশন ডেকে নির্দেশিকা প্রকাশ করে রাজভবন। বিষয়টি নজরে আসতেই মুখ্যমন্ত্রী নিজে ফোন করেন রাজ্যপালকে। পরে লিখিত ভাবে ‘টাইপোগ্রাফিক’ ভুলের কথা উল্লেখ করে তা সংশোধনের আবেদন জানিয়ে রাজ্যপালকে চিঠি লেখেন মুখ্যসচিবও। তা সত্ত্বেও রাজভবন জানিয়ে দেয়, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার দিক থেকে সেই অনুরোধ মানা সম্ভব হচ্ছে না। বরং মন্ত্রিসভার পাঠানো প্রস্তাব অনুযায়ী জারি করা নির্দেশিকা বহাল থাকছে।
বিষয়টি নজরে আসার পরে রাজ্যপাল আলোচনার জন্য মুখ্যসচিবকে ডেকেছিলেন। রাজ্যপাল দাবি করেন, মুখ্যসচিব না-যাওয়ায় মন্ত্রিসভার ওই সুপারিশেই তিনি সই করার সিদ্ধান্ত নেন। তাই মুখ্যসচিবের না-যাওয়াই এই ‘দ্বন্দ্ব’ আরও বাড়িয়ে দিল কি না, তা নিয়ে জল্পনা চলছে প্রশাসনের অন্দরে। তবে শুক্রবার রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন রাজ্যপাল।
অনেক প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকই অবশ্য জানাচ্ছেন, ২৮ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভার বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে। সেখানে বিধানসভা ডাকার প্রস্তাবটি সংশোধন করে ফের পাঠানো হতে পারে রাজভবনে। রীতি অনুযায়ী তখন মন্ত্রিসভার বার্তাকে মান্যতা দেওয়ারই কথা রাজ্যপালের। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রশাসনের শীর্ষ কর্তার যোগাযোগের পরে বিষয়টি মিটে গেলে সৌজন্যের বার্তা দেওয়া যেত।