ফাইল চিত্র।
রাজ্যপালের মুখে এ বার উঠে এল জলপাইগুড়ির শিশু পাচার কাণ্ড। শুক্রবার লাটাগুড়িতে আইনজীবীদের একটি কর্মশালায় বক্তৃতা দেওয়ার সময়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় বলেন, “জলপাইগুড়িতে শিশু পাচারের অভিযোগ উঠেছিল। এটি এখনও পর্যন্ত এই পৃথিবীতে ঘটা সব থেকে খারাপ অপরাধ।” ২০১৭ সালে জলপাইগুড়িতে দত্তক দেওয়ার নাম করে শিশু বিক্রির অভিযোগ উঠেছিল। সেই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়েছিল বিজেপির একাধিক নেতানেত্রীর নাম। মূল অভিযুক্ত চন্দনা চক্রবর্তীকে সহযোগিতা করার অভিযোগে বিজেপি নেত্রী জুহি চৌধুরীকে গ্রেফতারও করেছিল সিআইডি। অভিযুক্ত না হলেও বিজেপি সাংসদ কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের নামের উল্লেখ ছিল চার্জশিটে। তদন্তকারী সংস্থার দাবি, চন্দনা চক্রবর্তীর সঙ্গে বিজয়বর্গীয় এবং রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন জুহি। বিজেপির নাম যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তার কথা রাজ্যপালের মুখে উচ্চারিত হওয়ায় স্বভাবতই খুশি তৃণমূল শিবির।
কী বলেছেন রাজ্যপাল?
লাটাগুড়িতে বক্তৃতায় আইনজীবীদের এবং সাংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে বলতে গিয়ে রাজ্যপাল শিশু পাচারের প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি বলেন, “সাংবাদিকরা যে এই নিয়ে খবর করলেন, তার ফল কী হল? রাজ্য শিশু কমিশন কেন্দ্রের কমিশনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ল। বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে।’’ রাজ্যপালের মন্তব্য, “শিশু কোনও দিন পণ্য হতে পারে না। পৃথিবীর সব থেকে অপরাধ হল শিশু পাচার। একজন শিশুকে মায়ের থেকে কেড়ে নেওয়া যায় না।’’ শিশু চুরি তথা পাচারের মামলায় সুপ্রিম কোর্ট যা নির্দেশ দিয়েছেন, তা দ্রুত কার্যকর করা হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল। শিশু পাচারের মামলায় মূল অভিযুক্ত-সহ ছ’জন এখনও জেলে বন্দি। বিজেপি নেত্রী জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। মামলাটি জলপাইগুড়ি আদালতে চলছে। বহু নথি এখনও যাচাই বাকি রয়েছে বলে আইনজীবীদের একাংশের দাবি। তৃণমূলের দাবি, মামলায় বিজেপির আরও অনেকে জড়িত। সকলকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে তারা। এ দিন রাজ্যপাল শিশু পাচারের প্রসঙ্গ তোলায় তা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না তৃণমূল।
পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবের সঙ্গে অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন জলপাইগুড়ির সরকারি আইনজীবী তথা তৃণমূল নেতা গৌতম দাস। তিনি বলেন, “বিজেপি তো মনগড়া সব গল্প বানিয়ে রাজ্যপালের কাছে নালিশ করতে যায়। এ দিন রাজ্যপালের মুখে শিশু পাচারের প্রসঙ্গ শুনলাম। উনি পৃথিবীর সব থেকে অপরাধ বলেছেন শিশু পাচারকে। বিজেপি জলপাইগুড়িতে এই অপরাধে জড়িত।’’ জেলা বিজেপির পাল্টা দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই তাঁদের নেতা-নেত্রীর নাম শিশু পাচার মামলায় জড়ানো হয়েছিল। জেলা বিজেপি সভাপতি বাপি গোস্বামীর মন্তব্য, “নিরপেক্ষ তদন্ত হলেই সব প্রমাণ হয়ে যাবে। তৃণমূলের প্রশাসন কেন শিশু পাচার নিয়ে বছরের পর বছর চোখ বুজে ছিল, তা-ও জানানো হোক।”