বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডা। ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গে টিকাকরণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুললেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডা। মঙ্গলবার তাঁর অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে দুর্নীতিগ্রস্তদের প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে বলেই এক জন সাংসদকেও ভুয়ো টিকা পেতে হয়। যদিও বিজেপির এমন অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে শাসক মহল। তাদের দাবি, খুবই দক্ষতার সঙ্গে রাজ্যে টিকাকরণ কর্মসূচি চালানো হচ্ছে। এখানে টিকার অপচয় হয়নি। তাই রাজ্যের ভূমিকা এই প্রশ্নে দেশের মধ্যে অন্যতম সেরা। পাশাপাশি শাসক মহলের আরও দাবি, ভুয়ো টিকাকরণ শিবিরের ঘটনা একেবারেই বিচ্ছিন্ন। রাজ্য সরকার এমন অসাধু প্রবণতাকে প্রশ্রয় দেয় না এবং তথ্য প্রকাশ্যে আসার পরে উপযুক্ত পদক্ষেপ করেছে প্রশাসন।
এ দিন বিজেপির রাজ্য কমিটির বৈঠকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। সেই বৈঠকে নানা বিষয়ের সঙ্গে নাম না করেও অভিযুক্ত দেবাঞ্জন দেবের টিকা-কাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে আনেন নড্ডা। বলেন, “করোনার টিকা নিয়ে দুর্নীতি একমাত্র পশ্চিমবঙ্গে হয়েছে। সাংসদ মিমি চক্রবর্তীকেও ভুয়ো টিকা দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতিগ্রস্তদের প্রশ্রয় দিলে এ রকমই হয়—সাংসদকেও ভুয়ো টিকা পেতে হয়!” এমনকি, দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেই সবচেয়ে কম টিকাকরণ হয়েছে বলেও নড্ডা অভিযোগ করেন। ওই বৈঠকেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ কসবা-কাণ্ড নিয়ে বলেন, ‘‘টিকা নিয়ে দুর্নীতির সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এর শিকড় অনেক গভীরে। মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতা, আধিকারিক, অন্যান্য মন্ত্রী— সকলেই এতে যুক্ত। সেটা আড়াল করতেই এখন পুলিশের সঙ্গে সেই ব্যক্তির ছবি মুছে ফেলা হচ্ছে, রবীন্দ্রনাথের মূর্তির নীচ থেকে নামের ফলক তুলে ফেলা হচ্ছে। সিট গঠন করে যে লোক দেখানো তদন্ত হচ্ছে, তাতে কি মানুষের সন্দেহ নিরসন করা যাবে?’’
এই ঘটনার পরেই তীব্র প্রতিবাদ জানায় শাসক মহল। সরকারি তথ্যকে হাতিয়ার করে শাসক মহলের দাবি, টিকা ব্যবস্থাপনার দিক থেকে গোটা দেশের মধ্যে অন্যতম সেরা অবস্থান এ রাজ্যের। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে টিকাকরণের কাজ রাজ্যে চলছে। তাই এখানে অন্য রাজ্যের মতো টিকা নষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। শাসক মহলের আরও দাবি, মঙ্গলবার পর্যন্ত সরকারি এবং বেসরকারি মাধ্যমে ২ কোটি ১৭ লক্ষ ডোজ় টিকাকরণ করা হয়েছে রাজ্যে। কেন্দ্রের থেকে ১ কোটি ৯৯ লক্ষ ডোজ় প্রতিষেধক পাওয়া গিয়েছিল। তার মধ্যে ১ কোটি ৯৮ লক্ষ ডোজ় ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়ে গিয়েছে। এ ছাড়াও ১৮ লক্ষ ডোজ় উৎপাদকদের থেকে সরাসরি কিনতে রাজ্য ৫৯ কোটি টাকা খরচও করেছে। ফলে সুপার স্প্রেডার গোত্রের মধ্যে থাকা ৪১ লক্ষের বেশি মানুষকে টিকাকরণ করা গিয়েছে। প্রতিষেধকদানের আদর্শ আচরণবিধি এবং অনলাইন পদ্ধতি মেনে ২ লক্ষের বেশি প্রতিষেধকদান কর্মসূচি সংগঠিত করা হয়েছে। চাহিদার তুলনায় টিকার ডোজ়ের ঘাটতির কারণে আগামী দু’দিন ধরে শুধুমাত্র দ্বিতীয় ডোজ়ের প্রতিষেধক দেওয়ার কাজ হবে কলকাতায়।
এই সূত্র ধরেই শাসক মহলের দাবি, ভুয়ো টিকা-কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পরে তৎক্ষণাৎ কড়া পদক্ষেপ করেছে প্রশাসন। বিশেষ দল গঠন করে ঘটনার তদন্তও শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনের সর্বস্তরে নির্দেশ দিয়েছেন, ওই ঘটনায় যারা জড়িত এবং যারা অভিযুক্তকে সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের কাউকেই ছাড়া যাবে না। তবে অভিযুক্তের ছবি আড়াল করা নিয়ে বিজেপির তোলা অভিযোগও পুরোপুরি খারিজ করেছে প্রশাসন।
প্রসঙ্গত, সোমবারই মুখ্যমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “প্রতারকেরা কখনও মুখ্যমন্ত্রীর সই নকল করে, কখনও প্রধানমন্ত্রীর সই নকল করে। সংসদ ভবনের হামলাতেও ব্যবহার হয়েছিল সরকারি গাড়ি। ঠগবাজেরা সব পার্টির সাথেই একটা করে ছবি তুলে রেখে দেয়। এই কারণে আমি কাউকে সেলফি বা ছবি তুলতে অনুমতি দিই না।”