মণ্ডপে আলো নিভিয়ে রেখে চলছে প্রতিবাদ। —নিজস্ব চিত্র।
জগদ্ধাত্রী পুজোয় গোটা চন্দননগরের আলোকিত হলেও আলো নিভিয়ে অভিনব প্রতিবাদে শামিল হল একটি পুজো কমিটি। অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের মদতে পুজোমণ্ডপের সামনে তাঁর গুমটি সরাতে রাজি নন এক ব্যবসায়ী। এর জেরে পুজো দেখতে অসুবিধায় পড়েছেন দর্শনার্থীরা। যদিও ওই তৃণমূল কাউন্সিলরের দাবি, প্রশাসনকে চাপে ফেলতেই এমন অভিযোগ করছে সংশ্লিষ্ট পুজো কমিটি। পুজো কমিটির পাল্টা দাবি, সমস্যা না মিটলে মণ্ডপে আলো জ্বালাবেন না তারা।
চন্দননগরের বাগবাজার তালপুকুর ধারের পুজোর এ বার ৩৯তম বর্ষ। প্রতি বার এ পুজোয় আলোর কারসাজি দেখতে ভিড় জমে। পুকুরের ধারে বাহারি আলো-সহ বিভিন্ন মডেলের যান্ত্রিক খেলাও চলে। তালপুকুর ছাড়াও বিদ্যালঙ্কার পুকুরপারে আলোর খেলা দেখতে ভিড় উপচে পড়ে। ওই পুজোমণ্ডপগুলির কাছে যে সব গুমটি থাকে, সেগুলি প্রতি বছরই পুজোর সময় সরিয়ে দেওয়া হয়। তবে এ বার তার ব্যতিক্রম ঘটেছে। জয়ন্ত ঘোষ নামে ব্যবসায়ী তাঁর আসবাবের গুমটি সরিয়ে নিয়ে যেতে আপত্তি করেন। অভিযোগ, পুজো কমিটির অনুরোধও শোনেননি তিনি। এর পিছনে চন্দননগর পুরনিগমের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অজয় ঘোষের মদত রয়েছে বলে অভিযোগ।
রবিবার ষষ্ঠীর দিন সন্ধ্যা থেকে যখন চন্দননগর আলোয় সেজে উঠেছে, সে সময় তালপুকুরের পুজোর আলো নিভিয়ে হল প্রতিবাদ। জগদ্ধাত্রীর সামনে মোমবাতি জ্বেলে সব আলো নিভিয়ে রাখে ওই পুজো কমিটি। পুজো কমিটির সদস্য পুলক অধিকারী বলেন, ‘‘আমাদের কমিটির বয়স্কদের অনুরোধও শোনেননি ওই গুমটির মালিক। ফলে ঠাকুর দেখতে অসুবিধা হচ্ছে। আবার পুকুরের যে সব আলো লাগানো হয়েছে, তা-ও দেখা যাবে না। আমরা ৩৯ বছর ধরে পুজো করে আসছি। প্রতি বছর আলোর কাজের জন্য আমরা পুরস্কারও পাই। বিষয়টি কেন্দ্রীয় কমিটি জানিয়েছি। সমস্যা না মিটলে আলো জ্বালানো হবে না।’’ এ নিয়ে সরব হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা পৃথা চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘‘জগদ্ধাত্রী পুজো চন্দননগরের প্রাণের পুজো। তালপুকুরের ধারে পুজোর জন্য আমরা সারা বছর অপেক্ষা করি। সকলের সহযোগিতায় এত ভাল করে পুজো হয়! আলো নিভে থাকলে মোটেও ভাল লাগবে না।’’
মণ্ডপে আলো নিভিয়ে রাখার খবর পেয়ে কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির সম্পাদক শুভজিৎ সাউ তালপুকুর ধারের পুজোয় গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘‘গুমটিমালিক এবং পুজো কমিটিকে ডেকে আলোচনা করে বিষয়টি মেটানোর দ্রুত চেষ্টা করা হবে।’’ যদিও তাঁর বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কাউন্সিলর অজয় ঘোষ। তাঁর দাবি, ‘‘জগদ্ধাত্রী পুজোকে ঢাল করে প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে পুজো কমিটি। কোনও রকম বৈধ অনুমতি ছাড়া তালপুকুরের ধারে পুজো হয়। একটা গুমটির জন্য কোনও সমস্যা হবে না জেনেও ইচ্ছে করেই আলো নিভিয়ে রাখা হয়েছে।’’