ফাইল চিত্র।
সল্টলেক বা বিধাননগর পুর নিগমের ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হবে কি না, সেই বিষয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সিদ্ধান্ত নেবেন বলে বৃহস্পতিবার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। উচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, কোর্টের নির্দেশের ১২ ঘণ্টার মধ্যে রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং পুলিশের ডিজি-র সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কমিশন যদি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন না-করে, তা হলে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট করানোর ব্যাপারে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারই ব্যক্তিগত ভাবে দায়বদ্ধ থাকবেন।
আধাসেনা নিয়ে কমিশন উচ্চবাচ্য করছে না। রাজ্য পুলিশেই ভরসা রাখছে তারা। কেউ সরাসরি মুখ না-খুললেও কমিশন সূত্র জানাচ্ছে, পুলিশ দিয়েই ভোট হবে। দরকারে পুলিশের সংখ্যা বাড়াবে সরকার। এ দিন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, ডিজি, বিধাননগরের পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কমিশনের বৈঠকে এই মর্মেই আলোচনা হয়েছে। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত আদালতে জানানো হবে।
ভোটে নিরাপত্তার দায়িত্বে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ আদালত দিতে পারে কি না, বুধবার সেই প্রশ্ন তুলেছিল কলকাতা হাই কোর্টই। এ দিনেও তারা বা বিধাননগরের পুরভোটে আধাসেনা মোতায়েন নিয়ে সরাসরি কোনও নির্দেশ দেয়নি। তবে কোর্টের নির্দেশ, রাজ্য সরকার মনে করলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কিংবা সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। এই মামলার শুনানিতে কেন্দ্রীয় সরকারের কৌঁসুলি আদালতে জানিয়েছিলেন, বাহিনী পাঠাতে তাঁদের সমস্যা নেই।
কাল, শনিবার বিধাননগর-সহ চার পুর নিগমের ভোট। বিধাননগরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে হিংসার অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন বিজেপির একাংশ। মামলাকারীর আইনজীবীরা ২০১৫ সালে বিধাননগর পুরভোটের কথাও আদালতে তুলে ধরেন। সেই ভোটে সন্ত্রাসে শুধু বিরোধী দলের প্রার্থী নয়, আমজনতা এবং সাংবাদিকদেরও নির্বিচারে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। হিংসায় নাম জড়িয়েছিল শাসক দলের এক মন্ত্রী এবং কয়েক জন বড় নেতার বিরুদ্ধেও। তাই মামলাকারীদের আর্জি ছিল, শান্তিপূর্ণ ভোট করতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হোক। সেই মামলাতেই কোর্ট এ দিন নির্দেশ দেয়, দায়িত্ব রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের। কলকাতা পুরভোটের ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে কি না, সেই বিষয়ে কমিশনকেই সিদ্ধান্ত নিতে বলেছিল হাই কোর্ট। বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, কমিশন কলকাতায় শান্তিপূর্ণ ভোট করাতে পারেনি। বিরোধীদের অভিযোগ কি কমিশনের ব্যর্থতাকেই তুলে ধরে না, সেই প্রশ্ন করেছিল হাই কোর্টও।
এই মামলায় পোলিং এজেন্ট এবং ভোটগণনার দিন নিয়েও কিছু আবেদন ছিল। এক মামলাকারীর আর্জি, সব পুরভোটের গণনা এক দিনে হোক। সেই সিদ্ধান্তও কমিশন নেবে বলে এ দিন জানিয়ে দিয়েছে কোর্ট। পোলিং এজেন্টকে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের বাসিন্দা হতে হবে বলে কমিশন যে-নির্দেশ দিয়েছে, তার বিরুদ্ধেও কোর্টে আবেদন জমা পড়েছিল। কোর্ট কমিশনের সিদ্ধান্তই বহাল রেখেছে।
বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, রাজ্য নির্বাচন কমিশন তৃণমূলেরই শাখা সংগঠন। তাই কমিশনের উপরে তাঁদের আস্থা নেই। হাইকোর্ট ঘুরিয়ে আধা-সামরিক বাহিনীই মোতায়েন করতে বলেছে বলে মন্তব্য করে শুভেন্দু বলেন, ‘‘হাই কোর্ট এটাও বলেছে যে, এই ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন না-করলে এবং তার পরে কোনও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটলে তার দায় কমিশনকেই নিতে হবে। আশা করব, কমিশন হাই কোর্টের ভাষার মর্যাদা রাখবে, সিএপিএফ আসবে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।’’