Holi

করোনা আতঙ্কে মায়াপুর-নবদ্বীপে দোল পরিক্রমায় বাদ বিদেশিরা

এ ভাবে করোনার কারণে নবদ্বীপ, মায়াপুরের বিভিন্ন মঠে দোলে বিদেশি ভক্ত এবং পর্যটকদের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো কম।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২০ ১১:০০
Share:

রঙের উৎসবে মায়াপুরে।—ফাইল চিত্র।

কথা ছিল পঁয়তাল্লিশ জন আসার। এসেছেন মাত্র দু’জন। বাকিদের ইচ্ছা থাকলেও আসা সম্ভব হয়নি। আসলে ওই পঁয়তাল্লিশ জনই চিনের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দা। তাঁরা দল বেঁধে দোলের সময়ে মায়াপুর ইস্কনের নবদ্বীপ মণ্ডল পরিক্রমায় নাম নথিভুক্ত করিয়েছিলেন। কয়েক মাস আগে যখন তাঁরা এ সব পরিকল্পনা করেছিলেন, তখনও করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়নি বিশ্ব। করোনা সংক্রমণের জেরে তাঁদের আর চিন থেকে দোলের মায়াপুরে আসা হয়নি।

Advertisement

এ ভাবে করোনার কারণে নবদ্বীপ, মায়াপুরের বিভিন্ন মঠে দোলে বিদেশি ভক্ত এবং পর্যটকদের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো কম। নবদ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তের জল মন্দির কিংবা কেশবজি গৌড়ীয় মঠের এ বার এখনও পর্যন্ত বিদেশি ভক্তের সংখ্যা খুবই নগণ্য। রাত পোহালেই কেশবজি গৌড়ীয় মঠের পরিক্রমা শুরু হবে। অথচ, বিদেশি ভক্ত মেরেকেটে শ’দেড়েক। অন্য বার সংখ্যা খুব কম করে হলেও সাতশো ছাড়িয়ে যায়। দোলের দিনে তা সহস্রাধিক হয়ে ওঠে।

মঠের ভারপ্রাপ্ত মধুসুদন ব্রহ্মচারী বলেন, “করোনাভাইরাসের কারণে একের পর এক বিদেশি ভক্তের আসা বাতিল হয়ে যাচ্ছে। চিনের কেউ আসেননি। জাপান, কোরিয়া, হংকং থেকে কারও আসার কোনও উপায় নেই। শুধু বিদেশি ভক্ত বলে নয়, সামগ্রিক ভাবেই এবারে মানুষের ঢল এখনও পর্যন্ত বেশ কম।”

Advertisement

মায়াপুর ইস্কনের জনসংযোগ আধিকারিক রমেশ দাস বলেন, “অন্য বারের তুলনায় বিদেশিদের সংখ্যা কিছুটা কম। করোনার সংক্রমণ নিয়ে সারা বিশ্ব আতঙ্কিত। ফলে অনেকেই ঝুঁকি নিতে চাননি। চিনের পঁয়তাল্লিশ জনের মধ্যে যে দু’জন আসতে পেরেছেন, তাঁরা অনেক আগেই চিন থেকে ভারতে চলে এসেছিলেন।”

জানা গিয়েছে ইস্কনে সব মিলিয়ে এ বার কমবেশি আঠারশোর মতো বিদেশি ভক্ত এসেছেন। অন্য বার সংখ্যাটা দ্বিগুণেরও বেশি থাকে।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ইস্কনের নবদ্বীপ মহামণ্ডল পরিক্রমা শুরু হয়ে গিয়েছে। নবদ্বীপে চৈতন্য জন্মস্থান আশ্রমের প্রধান তথা গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজের অদ্বৈত দাস মহারাজ বলেন, “দোলের আগে-পরে এ বার গুরুত্বপূর্ণ সব পরীক্ষা চলছে। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক। তার একটা প্রভাব তো আছেই। ফলে দেশের মানুষের আসাও অন্য বারের চেয়ে খানিকটা কম।”

দোল লাগলেই যেন মিছিলনগরী হয়ে ওঠে চৈতন্যধাম। শহরের কোল ঘেঁষে বয়ে চলা নদীর স্রোতের মতো মানুষের ঢল নামে। তখন নবদ্বীপের পথে পথে সকাল থেকে রাত অবিরাম চলাচল। উত্তর থেকে দক্ষিণে অথবা পূর্ব থেকে পশ্চিমে। মিছিলে মৃদঙ্গের তালে পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটে মেক্সিকো আর মেদিনীপুর, আমেরিকা আর আহমেদাবাদ। কুয়ালালমপুরের কীর্তনে সঙ্গত করে কাজাখস্তানের মৃদঙ্গবাদক। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসা লাখো মানুষ অসংখ্য ছোট-বড় মিছিলে ঘুরে বেড়ায় চৈতন্যস্মৃতি বিজড়িত বৃহত্তর নবদ্বীপে। নানা ভাষার বিচিত্র উচ্চারণে কৃষ্ণনামে ভরে যায় আকাশ বাতাস।

এই মিছিলের পোশাকি নাম ‘নবদ্বীপ মণ্ডল পরিক্রমা’। প্রতি বছর দোলের পনেরো দিন আগে থেকে শুরু হয়ে যায় এই পরিক্রমা। সব মিলিয়ে ৭২ কিলোমিটার পথ। সন্ন্যাস গ্রহণের আগে নবদ্বীপে থাকার সময়ে বিশ্বম্ভর মিশ্রের যাতায়াত ছিল যে সব জায়গায়, সেই সব স্থানে সংকীর্তন সহযোগে পরিক্রমার মধ্যে দিয়েই নবদ্বীপে দোল উৎসবের উদ্‌যাপন। দস্তুর হল তার আগে সাত দিন, পাঁচ দিন বা তিন দিন, নিতান্ত অক্ষম হলে একটা দিন— পায়ে পায়ে ছুঁয়ে যাওয়া চৈতন্যধামের ভগ্ন দেউল, নদীর পাড়, প্রান্তর, পাড়া গাঁ। এখানে গঙ্গার দু’পাড়ের ছোট বড় সব মঠমন্দিরই তাদের মতো করে পৃথক ভাবে আয়োজন করে পরিক্রমার। এই নবদ্বীপ মণ্ডল পরিক্রমা করতেই দোলে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ভক্তেরা।

কিন্তু এবারের পরিক্রমায় চেনা ছবিটা বদলে দিয়েছে করোনা-আতঙ্ক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement