জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ির পথে নওশাদ সিদ্দিকী। ছবি: সুমন বল্লভ
৪২ দিন কারাবাসের পরে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। শনিবার জেল থেকে বেরিয়েই আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী জানিয়ে দিলেন, কংগ্রেসের আইনজীবী নেতা কৌস্তভ বাগচীর পাশে রয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, খয়রাতি দিয়ে বেশি দিন মানুষকে ভুলিয়ে রাখা যায় না। ভুল বুঝিয়ে সংখ্যালঘুদের ভোট পাওয়া যাবে না। যে দিন নওশাদ জামিন পেলেন, সেই দিনই সাগরদিঘির মতো সংখ্যালঘু প্রধান কেন্দ্রটি জিতল কংগ্রেস-সিপিএম জোট। সেই আবহে নওশাদের এই কথা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। তিনি যে শাসক-বিরোধী আন্দোলনে জোর দেবেন, সেটাও এ দিন স্পষ্ট করে দেন নওশাদ। তবে রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল বিধায়ক পুলক রায় পাল্টা জানিয়ে দেন, সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে বিরোধীরা বিশেষ দাগ কাটতে পারবেন না।
গত ২১ জানুয়ারি ধর্মতলায় দলের প্রতিষ্ঠা দিবসের কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় আইএসএফ কর্মীদের। তখন গ্রেফতার হন নওশাদেরা। গত ২ ফেব্রুয়ারি জামিন পান তিনি। তবে আদালতের কাগজ জেল সুপারের কাছে না পৌঁছনোয় সংশোধনাগারের বাইরে পা রাখতে তাঁকে ৪৮ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হল। ‘ইসালে সওয়াব’ উৎসবের আগের দিন ‘ঘরের ছেলে’ ঘরে ফেরায় রং-আবিরে মাতে হুগলির ফুরফুরা শরিফ। ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদের বাড়ি ফুরফুরাতেই। সেখানে পথচারীদের মধ্যে মিষ্টি ও নকুলদানা বিলি করেন আইএসএফ সমর্থকেরা। তার আগে সকাল সওয়া ১১টায় দলের কর্মীরা তাঁকে জেলের বাইরে মালা দিয়ে বরণ করেন। হুড খোলা গাড়িতে অনেকটা পথ আসেন নওশাদ। পথে অনেকেই তাঁকে অভিনন্দন জানান।
পরে নওশাদ জানান, সরকার বিরোধী আন্দোলনের জন্য তাঁর আবার জেল হতে পারে। তিনি বলেন, ‘‘জেলের সবাইকে বলে এসেছি, আবার আসতে পারি।’’ এর পরেই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘দান-ধ্যান করে মানুষকে বেশি দিন ভুলিয়ে রাখা যায় না। শাসকেরা বিরোধীদের সমালোচনা মেনে নিতে পারছেন না। বিরোধী-শূন্য করতে চাইছেন।’’ তাঁর কথায়, ‘‘যত দিন যাচ্ছে, সংখ্যালঘুরা বুঝতে পারছেন। ভুল বুঝিয়ে আর সংখ্যালঘুদের ভোট পাওয়া যাবে না।’’ নিজের উদাহরণ দেখিয়ে নওশাদ বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে অনেক কথা বলা হয়েছিল। প্রমাণ দিতে পারেনি। আইএসএফ সমাজ বদলানোর লড়াইয়ে ছিল, থাকবে।’’
নওশাদের মুক্তি পাওয়ার দিনেই হাওড়ার আমতায় গ্রামে মিষ্টি বিলি করা হয়। নওশাদের সুরেই মৃত আনিস খানের বাবা সালেমও দাবি করেন, তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে ফাটল ধরছে। তাঁর কথায়, ‘‘শাসকের মদতে পুলিশ যে ভাবে প্রতিবাদীদের কণ্ঠরোধ করতে হইহই করে নেমে পড়েছে, সাগরদিঘিতে কংগ্রেসের জয় তারই জবাব।’’ তাঁর কথায়, আনিস এবং নওশাদের কথা তিনি সাগরদিঘিতে প্রচারে গিয়ে বলেছেন। বৃদ্ধের দাবি, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটেও এ ভাবেই প্রতিবাদীরা এককাট্টা হবেন।’’
দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করতে এ দিনই অবশ্য ভাঙড়ে হুঙ্কার দিয়েছেন তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম। তিনি বলেন, “নওশাদ সিদ্দিকী যদি মনে করেন, হাতিশালা, কলকাতায় যে তাণ্ডব চালিয়েছেন, ভাঙড়েও তা চালাবেন, তা হলে তৃণমূল ছেড়ে কথা বলবে না।’’ নওশাদ জামিন পাওয়ার পরেই আইএসএফ ও সিপিএম একসঙ্গে এলাকায় অশান্তির চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তাঁর। যদিও এ কথা মানেনি সিপিএম এবং আইএসএফ। নওশাদ বলেন, ‘‘আমি হিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। রাজনৈতিক সৌজন্যের কথা বলি। ওঁরা (আরাবুলরা) আতঙ্কে ভুগছেন।’’
সংখ্যালঘু ভোট ভাগ নিয়ে উলুবেড়িয়া দক্ষিণের বিধায়ক তথা পূর্ত ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রী পুলক রায় বলেন, ‘‘সাগরদিঘির ব্যাপারে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলার বলেছেন। আমরাও দলনেত্রীর সঙ্গে একমত। এই নির্বাচনের ফলাফল পঞ্চায়েত ভোটে কোনও প্রভাব ফেলতে পারবে না। বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেসের অশুভ আঁতাঁতকে মানুষ উপযুক্ত জবাব দেবে।’’