ঘনঘোর: সন্ধ্যায় বৃষ্টি। শনিবার ধর্মতলায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী
দিনভর আকাশ মেঘলা ছিল। শনিবার সন্ধ্যা হতেই যেন মুষলধারে বৃষ্টি নামল কলকাতা এবং লাগোয়া দক্ষিণবঙ্গে। সঙ্গে ছিল বিদ্যুতের ঝলকানিও। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলছেন, বাংলাদেশ থেকে বজ্রগর্ভ মেঘ ভেসে এসেছে পশ্চিমবঙ্গে। তার জেরেই এই জোরালো বৃষ্টি, দমকা হাওয়া। তবে শুধু এ দিন নয়, এ বছর জুন মাস জুড়ে বর্ষার সক্রিয়তা চোখে পড়ছে।
তবে এমন ‘আদর্শ’ বর্ষা কিন্তু গত বেশ কয়েক বছরে একেবারেই দেখা যায়নি। তাই অনেকেই বলছেন, বর্ষা কি ছন্দে ফিরছে নাকি ফের চরিত্র বদলাচ্ছে?
মৌসম ভবনের হিসেব বলছে, গত তিন দশকে রাজ্যে জুন মাসের গড় বৃষ্টির পরিমাণ কমেছে। কিন্তু এ বছর জুনে আবার রাজ্যে পর্যাপ্ত বৃষ্টি মিলেছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের হিসেবে, ১ থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত রাজ্যে মাত্র দু’টি জেলা, হাওড়া এবং পূর্ব মেদিনীপুরে বর্ষার ঘাটতি রয়েছে। রাজ্যের ৯টি জেলায় উদ্বৃত্ত বৃষ্টি হয়েছে। সব মিলিয়ে রাজ্যে এ দিন পর্যন্ত স্বাভাবিকের থেকে প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া দফতরের খবর, বঙ্গোপসাগর থেকে জোরালো মৌসুমি বায়ু রাজ্যে ঢুকছে। মৌসুমি অক্ষরেখা উত্তরবঙ্গের উপরে থাকায় উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে জোরালো বৃষ্টি হবে। গাঙ্গেয় বঙ্গেও আগামী কয়েক দিন হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টি মিলতে পারে। উত্তর-পূর্ব ভারত, বিহারেও প্রবল বর্ষা দেখা যাবে।
গোটা দেশেই এ বার বর্ষা কার্যত ‘দুরন্ত এক্সপ্রেস’-এর গতিতে ছুটছে। ৮ জুলাই বর্ষা গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ার কথা। তার ১২ দিন আগে, শুক্রবারই বর্ষা গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র বলেন, ‘‘প্রথমে বঙ্গোপসাগরের একটি নিম্নচাপ এবং তার পরে মধ্য ভারতে তৈরি হওয়া একটি ঘূর্ণাবর্ত বর্ষাকে দ্রুত দেশে ছড়িয়ে দিয়েছে।’’
মৌসম ভবন সূত্রের খবর, ২০১৩ সালে ১৬ জুন গোটা দেশে বর্ষা ছড়িয়ে পড়েছিল। সে বার উত্তর-পশ্চিম ভারতে একটি ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে বর্ষা দ্রুত ছড়িয়েছিল। প্রবল বৃষ্টিতে বন্যা হয়েছিল উত্তরাখণ্ডে। এ বার তেমন আশঙ্কা নেই বলেই খবর। অন্য একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখার সুবাদে দক্ষিণ ভারতেও কয়েক দিন জোরালো বৃষ্টি হবে। মৌসম ভবন গোটা দেশকে ৩২টি এলাকায় ভাগ করে। তার মধ্যে জুন মাসে ৩১টি এলাকায় পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়েছে। ‘‘এর ফলে চাষিরা উপকৃত হবেন,’’ বলছেন মৃত্যুঞ্জয়।
তবে এ বছরের বর্ষার সক্রিয়তা দেখে চরিত্র বিশ্লেষণে নারাজ জলবায়ু বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা বলেন, পশ্চিমবঙ্গে জুনে যে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমতে দেখা গিয়েছে তা তিন দশকের পরিসংখ্যানের গড় পরিমাপ। এক বছরের তথ্য দেখে জলবায়ুর চরিত্র বিশ্লেষণ করা যাবে না।