Fire Cracker

আজ কালীপুজো, দীপাবলি, বাজি বন্ধে জেতার লড়াই

হাইকোর্টের নির্দেশিকার পরেও বাজি বিক্রি যে চলছিল, তা সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। গত মঙ্গলবার শুনানিতে সে কথা উল্লেখ করে আদালত।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২০ ০৫:৩৮
Share:

ফাইল চিত্র।

প্রতি বছর শব্দবাজির সঙ্গে পুলিশের টক্কর থাকে। কিন্তু এ বার কালীপুজো ও দীপাবলিতে সামগ্রিক ভাবে বাজি পোড়ানো রুখতে হবে পুলিশ-প্রশাসনকে। কিন্তু শুক্রবার রাত পর্যন্ত যা পরিস্থিতি তাতে কালীপুজো ও দীপাবলি পুরোপুরি বাজিমুক্ত রাখা যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কোভিড পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও যদি বাজি বন্ধ না-হয় তার পিছনে প্রশাসনের ঢিলেমি ও গড়িমসি দায়ী থাকবে বলে মনে করছেন পরিবেশকর্মীরা।

Advertisement

পরিবেশকর্মীদের যৌথ সংগঠন সবুজ মঞ্চের সম্পাদক নব দত্ত বলছেন, “হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও সরকারি তরফে নির্দেশিকা বেরোল না। উল্টে চোরাগোপ্তা বাজি বিক্রি হল। যে বাজি লোকের ঘরে-ঘরে ঢুকেছে তা তো ফাটার আশঙ্কা থাকছেই। তবে সমাজে এখনও সচেতন মানুষ আছেন, সেটাই আশা।” একই সঙ্গে নববাবুর সংযোজন, এ বার কিন্তু ডিজে বক্স-সহ মাইকের তাণ্ডবও বেড়েছে। শুক্রবারই কয়েকটি অভিযোগ এসেছে সবুজ মঞ্চের কাছে।

Advertisement

হাইকোর্টের নির্দেশিকার পরেও বাজি বিক্রি যে চলছিল, তা সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। গত মঙ্গলবার শুনানিতে সে কথা উল্লেখ করে আদালত। তার পর থেকে প্রশাসনিক তৎপরতা বাড়লেও ওই ফাঁকে প্রচুর বাজি বেচাকেনা হয়েছে বলেই খবর। উত্তর শহরতলির এক বাজি বিক্রেতা জানান, দোকান বন্ধ রাখলেও খুব পরিচিতদের বাড়ি থেকে বাজি সরবরাহ করেছেন তিনি। প্রতিবার বাজির পসরা সাজানো আর এক ব্যবসায়ী অবশ্য জানান, পুলিশ এসে বকুনি দেওয়ার পরে তিনি আর বাজি বিক্রি করেননি।

কালীপুজোর বিধি

• নিষিদ্ধ সব বাজি। ফুলঝুরি, চরকি, তুবড়ি, রংমশালও।
• বাজি পোড়ালে সাজা হতে পারে।
• বিপর্যয় মোকাবিলা
আইনে সর্বোচ্চ দু’বছর জেল হতে পারে।
• বিস্ফোরক আইনে ‌তিন বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানা হতে পারে।
• বাজি ক্রেতা ও বিক্রেতা, উভয়েই দোষী হিসেবে
গণ্য হবেন।
• মণ্ডপে প্রবেশ নিষিদ্ধ।

বাজি সংক্রান্ত অভিযোগের জন্য

• পুলিশ- ১০০
• লালবাজার- ১০০, ৯৪৩২৬১০৪৪৪
• রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ- ০৩৩-২৩৩৫৩৯১৩, ১৮০০-৩৪৫-৩৩৯০
• সবুজ মঞ্চ-৯৪৩২২০৯৭৭০, ৯৮৩১৩১৮২৬৫ (হোয়্যাটসঅ্যাপ)

তবে কিছু মানুষের কাছে বাজি যে মজুত রয়েছে তা মালুম হয়েছে। নিউ ব্যারাকপুর, মধ্যমগ্রামের মতো এলাকায় এ দিন সন্ধ্যায় মাঝেমধ্যে বিচ্ছিন্ন ভাবে বাজি ফাটার শব্দ মিলেছে। কলকাতা পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, বাজি পোড়ালে বিস্ফোরক আইনে মামলা করা হবে। তাতে তিন বছরের জেল পর্যন্ত হতে পারে।

জেলাগুলির ছবিও কমবেশি একই রকম। তবে বাজি আটকাতে জেলায় জেলায় পুলিশ কন্ট্রোল রুম খুলেছে। বাস, অটো-টোটো থামিয়ে তল্লাশি হচ্ছে। বাজার এলাকায় সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। শিলিগুড়ি-মালদহে বৃহস্পতিবার প্রচুর পরিমাণ বাজি উদ্ধার হয়েছে। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে চলছে নজরদারি। তবে এত কিছুর পরেও সন্ধ্যায় একটি-দু’টি করে বোমা ফাটার শব্দ ভেসে আসছে বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে।

দক্ষিণবঙ্গের নদিয়ায় পুলিশ বলছে, আতশবাজি বিক্রির খবর নেই। অথচ কল্যাণী থানা এলাকার শহিদপল্লি মোড় থেকে শুরু করে রথতলা পর্যন্ত বহু অস্থায়ী দোকানে কয়েক দিন ধরেই প্রকাশ্যে বাজি বিক্রি হচ্ছে। উত্তর ২৪ পরগনার কাঁচরাপাড়া, হালিশহর থেকেও বহু লোক আসছেন বাজি কিনতে। রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার ভিএসআর অনন্তনাগ অবশ্য দাবি করেছেন, “শহিদপল্লি বা আর কোথাও বাজি বিক্রির খবর জানা নেই। তাই কাউকে গ্রেফতার বা বাজি বাজেয়াপ্তেরও দরকার হয়নি।” তবে বাজি বিক্রির অভিযোগে কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলায় ১৬ জন গ্রেফতার হয়েছে। ৭৬০ প্যাকেট বাজি বাজেয়াপ্ত হয়েছে। দুই ২৪ পরগনায় গত কয়েক দিনে প্রায় ৮ কুইন্টাল বাজি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। পাকড়াও করা হয়েছে ২০ জনকে। সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় বাজি ফাটানোও চলছে।

আরও পড়ুন: কেন্দ্রের জিএসটি প্রস্তাবে রাজি রাজ্য

বাজি বেচলেই গ্রেফতার করা হবে বলে হাওড়ার গ্রামীণ এলাকায় পুলিশ মাইকে সতর্ক করছে। বাজি না পোড়ানোর আর্জি জানিয়ে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও পথে নেমেছে। শুক্রবার হুগলির গ্রামীণ এলাকায় কয়েকশো কেজি বাজি বাজেয়াপ্ত হয়েছে। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্ত বলেন, ‘‘পানাগড় থেকে বহু বেআইনি বাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।’’ ঝাড়গ্রামে এ পর্যন্ত ৩২ কেজি বাজি আটক হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। মুর্শিদাবাদে বাজি বিক্রির অভিযোগে সাতটি মামলা হয়েছে। প্রায় ২৫ হাজার বাজি বাজেয়াপ্ত হয়েছে। হেল্পলাইনের পাশাপাশি বাঁকুড়ার ব্লক শহরগুলিতে কালীপুজোর রাতে পুলিশের মোবাইল ভ্যান ঘুরবে। গ্রামাঞ্চলেও পুলিশের গাড়ি টহল দেবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলাপ ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা জনগণকে বলছি আদালতের রায় মেনে চলতে। এ বছরটা না হয় আনন্দ একটু কমই হল। কিন্তু মানুষ অনেক দিন আনন্দ করেননি। তাঁরা শুনতে না চাইলে কী করা যাবে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement