—প্রতীকী ছবি।
আইন জারি করে স্কুল শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশন বন্ধ করা কি আদৌ সম্ভব?
এ নিয়ে সন্দিহান প্রধান শিক্ষকদের একাংশ। তাঁরা মনে করছেন, স্কুল শিক্ষকদের দিয়ে ছেলেমেয়েদের আলাদা করে পড়ানোর জন্য জোর করছেন অভিভাবকেরাই। কারণ অভিভাবকদের দৃঢ় বিশ্বাস, স্কুল শিক্ষকদের মাধ্যমে তাঁদের সন্তানদের গৃহশিক্ষক হলে, ছেলেমেয়েদের পরীক্ষার ফল ভাল হবে। অভিভাবকদের এই প্রবণতার জন্যই স্কুল শিক্ষকদের গৃহশিক্ষকতা করার রমরমা বেড়েছে বলে মনে করছেন প্রধান শিক্ষকেরা।
স্কুলে মাধ্যমিক পরীক্ষায় ১০ নম্বরের ‘প্রজেক্ট ওয়ার্ক’ থাকে। উচ্চ মাধ্যমিকে যেগুলি ল্যাবরেটরি-নির্ভর বিষয় নয়, সেগুলোরও ২০ নম্বরের ‘প্রজেক্ট ওয়ার্ক’ এবং যেগুলো ল্যাবরেটরি-নির্ভর বিষয়, সেগুলোতে ৩০ নম্বরের ‘প্রজেক্ট ওয়ার্ক’ থাকে। মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ‘প্রজেক্ট ওয়ার্ক’-এর মূল্যায়ন স্কুলের শিক্ষকেরাই করেন।
নাম বলতে অনিচ্ছুক এক প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘অনেক অভিভাবক মনে করেন স্কুলের শিক্ষকদের দিয়ে যদি আলাদা করে পড়ানো যায়, তা হলে ওই প্রজেক্টগুলিতে তাঁদের ছেলেমেয়েরা ভাল নম্বর পাবে।’’
কলকাতা হাই কোর্ট গত মে মাসে নির্দেশ দিয়েছিল, স্কুল শিক্ষকেরা কোনও ভাবেই গৃহশিক্ষকতা করতে পারবেন না। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের এক কর্তা জানিয়েছেন, কয়েকটি জেলার স্কুল পরিদর্শক জানিয়েছিলেন, যে স্কুল শিক্ষকেরা প্রাইভেট টিউশনের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ উঠেছিল, তাঁদের কয়েকজনকে চিহ্নিত করা গিয়েছিল। তাঁদের ডেকে পাঠিয়ে আদালতের নির্দেশের কথা বললে, তাঁরা মুচলেকা দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁরা আর প্রাইভেট টিউশন করবেন না। কিন্তু, প্রশ্ন উঠেছে এই মুচলেকা দেওয়ার পরেও কি বন্ধ করা যাচ্ছে তাঁদের প্রাইভেট টিউশন?
প্রধান শিক্ষকদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টারস অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস’-এর রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতি মনে করেন, ‘‘এ ভাবে মুচলেকা দিয়ে প্রাইভেট টিউশন বন্ধ করা খুব কঠিন। শিক্ষকদের যেমন যে কোনও পরিস্থিতিতেই প্রাইভেট টিউশন পড়ানোর বিষয়ে ‘না’ বলতে হবে, সেরকমই অভিভাবকদেরও ভাবতে হবে যে তাঁরা স্কুলের শিক্ষকদের দিয়ে বাইরে পড়াবেন না।’’
অভিভাবকদের একাংশের পাল্টা প্রশ্ন, গ্রামাঞ্চলে স্কুল শিক্ষক বাদে ভাল শিক্ষক কোথায়? ফলে স্কুল শিক্ষকদের উপরেই নির্ভর করতে বাধ্য হন তাঁরা। এক অভিভাবক বলেন, ‘‘গ্রামাঞ্চল, মফঃস্বলে স্কুল শিক্ষক বাদে প্রাইভেট টিউশনের কোনও বিকল্পই নেই। গ্রামাঞ্চলে সেরকম ভাল কোচিং সেন্টারও নেই।’’
পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসুর মতে, ‘‘যত দিন না স্কুলের পরিকাঠামো ভাল হবে, তত দিন স্কুল শিক্ষকদের উপরে প্রাইভেট টিউশনের জন্য এই নির্ভরতা থাকবে।’’ সৌগতর প্রশ্ন, ‘‘এখন শুধুমাত্র প্রাইভেট টিউশন নয়। অনেক শিক্ষক ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে নোট দিচ্ছেন। সেগুলো বন্ধ করার কোনও নজরদারি আছে কি?’’
পশ্চিমবঙ্গ গৃহশিক্ষক কল্যাণ সমিতির সভাপতি হীরালাল মণ্ডল বলেন, ‘‘যে স্কুল শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রাইভেট টিউশন করার অভিযোগ উঠছে, তাঁদের নাম মধ্য শিক্ষা পর্ষদ সভাপতিকে জানানোর কথা জেলা স্কুল পরিদর্শকের। অভিযুক্তদের সম্পর্কে তাঁরা সঠিক তথ্য না দিলে আমরা এ বার জেলা স্কুল পরিদর্শকদের বিরুদ্ধে মামলা করব।’’