DA Movement

‘মহার্ঘ জোট’ হতে চলেছে রাজ্যে? একে একে ভিড় বাড়ছে ডিএ বিক্ষোভ মঞ্চে, জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রীও

মহার্ঘ ভাতা নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলন ক্রমেই রাজনীতির নানা রং পাচ্ছে। কংগ্রেস, সিপিএম-এর পরে ধর্না মঞ্চে বিজেপিও। জোট হওয়ার ইঙ্গিত কি মুখ্যমন্ত্রীও পেয়ে গিয়েছেন?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৩ ১৭:২৭
Share:

বিরোধীরা কি একজোট হচ্ছে? ছবি: সংগৃহীত।

প্রথম দিকে আন্দোলনটা ছিল মূলত রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের। পরে তাতে সমর্থন দেয় সিপিএমের সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন কো-অর্ডিনেশন কমিটি। সেই মঞ্চেই রবিবার গেরুয়া রং লাগে। চলে যান বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। তাঁর পাশেই বসে থাকতে দেখা যায় অধুনা বিখ্যাত কংগ্রেস নেতা কৌস্তুভ বাগচীকে। দু’জনে হাতও মেলান। সোমবার সেই মঞ্চেই গেলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তার পরে পরেই সেই মঞ্চে দেখা গেল সদ্য জেল থেকে মুক্তি পাওয়া আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকিকে।

Advertisement

তবে কি বকেয়া মহার্ঘ ভাতার দাবিতে চলতি আন্দোলনে কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি, আইএসএফ মিলে ‘মহার্ঘ জোট’ হতে চলেছে? এমনই প্রশ্ন তৈরি করেছে রবি ও সোমের ঘটনাপরম্পরা। তেমন সম্ভাবনা যে একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছে না শাসক শিবির, তার ইঙ্গিত মিলেছে সোমবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যেও। তিনি ডিএ নিয়ে বলতে গিয়ে একযোগে আক্রমণ করেছেন রাজ্যের তিন প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলকে। প্রশ্নের সুরে বলেছেন, ‘‘ছয় শতাংশ ডিএ-র পরে কী চান? আমি বিরোধীদের বলছি। আপনারাই ঠিক করুন।’’ এর পরেই ডিএ প্রশ্নে সম্ভাব্য রাজনৈতিক জোট নিয়ে মমতার আক্রমণ, ‘‘মুখোশ খুলে গিয়েছে। সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস সব একসঙ্গে!’’

বস্তুত, সাগরদিঘিতে বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী জেতায় এবং তার পরে কংগ্রেসের আইনজীবী-নেতা কৌস্তুভকে গ্রেফতারর ঘটনায় জোটের পালে খানিকটা হলেও হাওয়া লেগেছে। মহার্ঘ ভাতার দাবি সামনে রেখে সেই জোট আরও জোরালো করতে চাইছে দু’পক্ষ। সেই মঞ্চে চলে এসেছে বিজেপিও।

Advertisement

এমন জোটের আবহ তৈরি হলেও বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস যে যৌথ ভাবে কথা বলছে, তা নয়। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের কথায়, ‘‘ডিএ-র দাবিতে আন্দোলনে যে কেউ আসতে পারেন। সবাই এলে সরকারি কর্মচারীদের সুবিধা হবে। তবে বিজেপি হালে পানি পাচ্ছে না বলেই এসেছে।’’ অন্য দিকে, বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘আমরা প্রথম থেকেই সরকারি কর্মচারীদের দাবির পক্ষে। আমরা চাই, কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পান রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা। এর জন্য সব আন্দোলনেই আমাদের নৈতিক সমর্থন রয়েছে।’’ তৃণমূল অবশ্য এই জোটকে গুরুত্ব দিতে চাইছে না। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সোমবার বলেন, ‘‘এ সব সুবিধাবাদীদের রাজনীতি। রাজ্যে যদি ডিএ-র দাবিতে সবাই একজোট হতে পারে, তবে কেন্দ্রীয় সরকার কেন রাজ্যের বকেয়া টাকা দিচ্ছে না, সেটা নিয়ে যৌথ ভাবে কথা বলুক।’’

তবে বিক্ষোভরত সরকারি কর্মচারীদের একাংশের বক্তব্য, প্রথম দিকে তাঁদের লড়াইয়ে অনেকেই আসেননি। কিন্তু এখন সেই লড়াই যখন বড় আকার নিয়েছে, তখন সবাই পাশে থাকতে আসছেন। এতে আপত্তির কিছু নেই। সোমবার শুভেন্দুর স্লোগানে গলা মেলাতেও দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের। শুভেন্দু অবশ্য রাজনীতির বাইরে থেকেই সমর্থন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কর্মচারী এবং শিক্ষক সংগঠনও এঁদের সঙ্গে যুক্ত আছেন। রাজনীতির বাইরে থেকে এই আন্দোলনকে আমরা সমর্থন জানাচ্ছি। আমরা রাজ্য বিধানসভায় প্রধান বিরোধী দল। আন্দোলনকারীদের ন্যায্য অধিকারের লড়াই জয়যুক্ত হোক। সেটাই চাই। আমাদের নৈতিক সমর্থন ওঁদের সঙ্গে থাকবে।’’ বিধানসভা থেকে অগ্নিমিত্রা পাল-সহ বিধায়কদের নিয়ে পায়ে হেঁটে ডিএ-র দাবিতে সরকারি কর্মচারীদের একাংশের বিক্ষোভ-অনশন মঞ্চে পৌঁছন শুভেন্দু। সেখানে বক্তৃতা দিয়ে বিধানসভায় ফিরে যাওয়ার সময় তিনি বলেন, ‘‘আমরা এখানে রাজনীতি করতে আসিনি। আমরা এই কর্মীদের পাশে আছি।’’ কর্মীদের তিনি বলেন, ‘‘আপনারা হাইকোর্টের একক বেঞ্চে জিতেছেন। ডিভিশন বেঞ্চে জিতেছেন। সুপ্রিম কোর্টেরও জিতবেন। আজ না হয় কাল, কাল না হয় পরশু আপনাদের জয় হবেই!’’ প্রসঙ্গত, আগামী ১৫ মার্চ সুপ্রিম কোর্টে ডিএ মামলার শুনানি রয়েছে।

সোমবার আন্দোলনরত কর্মচারীদের সঙ্গে দেখা করতে শহিদ মিনার চত্বরে যান ভাঙরের বিধায়ক নওশাদও। সেখানে গিয়ে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘ওঁরা শিক্ষিত এবং প্রতিষ্ঠিত। ওঁদের পরামর্শ দেওয়ার মতো কিছুই নেই। তবে বলব, নিজেদের দাবি বুঝে নিতে হবে। সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক ভাবে আন্দোলন করুন।’’ এর পাশাপাশি এই আন্দোলনকে গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার ডাক দেন তিনি। নওশাদ বলেন, ‘‘এখন শুধু কলকাতায় এই আন্দোলন চলছে। আগামিদিনে বাংলার গ্রামাঞ্চলেও এই আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে হবে।’’

রাজ্য রাজনীতির কারবারিরা অনেকেই মনে করছেন ‘মহার্ঘ জোট’ গড়তে এই আগ্রহের পিছনে রয়েছে সাগরদিঘির ফল। সেই উপনির্বাচনে মোট ১৩০টি পোস্টাল ব্যালটের ভোটের মধ্যে ৫০টি পেয়েছিল তৃণমূল। কংগ্রেস পেয়েছিল ৫৬টি। বিজেপি ২২টি। বাকি গিয়েছে নির্দলদের দখলে। সরকারি কর্মচারীদের ‘ভোট’ এই ভাবে শাসকের থেকে সরছে বুঝেই কি বিজেপি দেরিতে হলেও ওই আন্দোলনে ঢুকতে চাইছে? এমন প্রশ্নও উঠছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement