শুভেন্দুর বিরুদ্ধে স্পিকারের কাছে অভিযোগ পার্থের। ফাইল চিত্র।
শুক্রবার বিধানসভায় পঞ্চায়েত বাজেট নিয়ে আলোচনায় ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লা বিজেপি পরিষদীয় দলকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘দিন দিন তো আপনাদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এখন তো সংখ্যা নেমে ৬৭ হয়ে গিয়েছে।’’ পরে বক্তৃতা করতে উঠে বিরোধী দলনেতা সেই কটাক্ষের জবাব দেন। তিনি বলেন, ‘‘এই যে বিধানসভার সদনে আমাদের সঙ্গেই বসে আছেন কৃষ্ণ কল্যাণী ও বিশ্বজিৎ দাস। এঁরা বিধানসভায় নিজেদের বিজেপি বিধায়ক বলছেন। স্পিকারও এদের বিজেপি বিধায়ক বলছেন। সাহস থাকলে বলুন, এরা দলবদল করেছেন।’’ শুভেন্দুর এমন জবাবে ওই দুই বিধায়ক বলেন, ‘‘আপনি আপনার বাড়ির দিকে তাকান।’’ সেই প্রসঙ্গেই ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে বসে সেচমন্ত্রী বিরোধী দলনেতার উদ্দেশে বলেন, ‘‘শিশিরবাবু এখন কোন দলে আছেন?’’ এর পরেই বিরোধী দলনেতা পাল্টা সেচমন্ত্রীর উদ্দেশে মন্তব্য করেন। সেচমন্ত্রী ও শাসকদলের বিধায়কেরা অভিযোগ করেন, শুভেন্দু হুমকি দিয়েছেন সেচমন্ত্রীকে। তাঁদের দাবি, শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস মামলায় মানবাধিকার কমিশনের অভিযোগের ভিত্তিতে তোমাকে এক মাসের মধ্যে জেলে ঢোকাব।’’
অভিযোগ নিয়ে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হন সেচমন্ত্রী। পার্থ বলেন, ‘‘আমি যখন বলি শিশিরবাবু কোন দলে আছেন? তখন উনি (শুভেন্দু) এক মাসের মধ্যে আমাকে জেলে ঢুকিয়ে দেবেন বলে হুমকি দিয়েছেন। এ থেকেই প্রমাণিত, মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে যে চিঠি দিয়ে বলেছিলেন, সিবিআই, ইডিকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করছে বিজেপি সেটাই প্রমাণিত হল।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘যদি বিধানসভার বাইরে উনি আমাকে এ রকম কথা বলতেন, তা হলে আদালতে যেতাম। এই হুমকির পর আমি নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি।’’
সেচমন্ত্রীর অভিযোগ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্পিকার। তিনি বলেন, ‘‘আমি বিষয়টি বিধানসভার রেকর্ডে নথিভুক্ত করিয়েছি। ওঁর নিরাপত্তার বিষয়টি আমি দেখব। তবে তিনি চাইলে এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে স্বাধিকারভঙ্গের নোটিস আনতে পারেন।’’ তবে সেচমন্ত্রীর এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে কোনও জবাব দিতে চাননি বিরোধী দলনেতা। তিনি বলেছেন, ‘‘বিধানসভায় আমি যা বলেছি, সেটাই আমার বক্তব্য। তার বাইরে আমি কোনও অভিযোগের উত্তর দেব না।’’
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের ১৯ তারিখে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন শুভেন্দু। তার পর থেকেই অধিকারী পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে তৃণমূল নেতৃত্বের। এখনও শুভেন্দুর বাবা শিশির অধিকারী ও ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী তৃণমূলের সাংসদ হলেও, দলের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে তাঁদের। সেচমন্ত্রী বিরোধী দলনেতাকে তাঁর বাবার রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে খোঁচা দেওয়ার ঘটনা এই প্রথম নয়। ২০২১ সালের নির্বাচনের পর বিধানসভায় যে অধিবেশন বসে, সেখানে ‘বাবাকে বলো’ বলে কাঁথির সাংসদের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে বিরোধী দলনেতাকে খোঁচা দিয়েছিলেন পার্থ।