—ফাইল চিত্র
কয়লা ও গরু পাচারের মামলায় তিন আইপিএস-সহ ছ’জন পুলিশ অফিসারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিস দিয়েছে সিবিআই। তাঁদের মধ্যে বাঁকুড়া থানার আইসি অশোক মিশ্র শনিবার সিবিআই অফিসে গিয়েছেন। তবে আইপিএস অফিসারেরা সিবিআইয়ের নোটিস চ্যালেঞ্জ করে ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাঁদের যুক্তি, এ রাজ্যে তদন্ত করার জন্য সিবিআইয়ের ‘জেনারেল কনসেন্ট’ প্রত্যাহার করে নিয়েছে রাজ্য। ফলে চাইলেই সিবিআই রাজ্যে তদন্ত চালাতে বা জেরার জন্য নোটিস দিতে পারে না। হাইকোর্টের কাছে রাজ্যের অফিসারদের আরও যুক্তি, সিবিআইয়ের নোটিসটি মূল্যহীন। ফলে সেটি বাতিল করা হোক।
সিবিআইয়ের অবশ্য ব্যাখ্যা, কয়লা এবং গরু পাচারের মামলাগুলি রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয় নয়। কয়লা পাচারের মামলা মূলত কোল ইন্ডিয়ার অফিসারদের বিরুদ্ধে ও গরু পাচারের মামলা বিএসএফ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে। মামলাগুলির প্রক্রিয়া ‘জেনারেল কনসেন্ট’ প্রত্যাহারের আগেই শুরু হয়েছিল। তা ছাড়া, সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসারদের বিরুদ্ধে মামলা করা বা তদন্ত চালানোর ক্ষেত্রে রাজ্যের অনুমোদন প্রয়োজন নেই বলে রায় দিয়েছে। ব্যাঙ্ক প্রতারণা সংক্রান্ত মামলায় এই রায়ের পর সিবিআই কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী-অফিসারদের দুর্নীতি নিয়ে বেশ কয়েকটি মামলা করেছে। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই রাজ্য ‘জেনারেল কনসেন্টের’ প্রশ্ন তোলেনি। সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের বক্তব্য, কয়লা এবং গরু পাচার রাজ্যের অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে। রাজ্য সরকারের তো এই তদন্তে সহযোগিতা করা উচিত।
সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের দাবি, লালা ও এনামুলের বিভিন্ন হিসাবপত্রের খাতা থেকে যে সব পুলিশ কর্তাদের নাম পাওয়া গিয়েছে, তাঁদের কয়েক জনকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের তো তদন্তে সহযোগিতা করা উচিত। যদি লালা ও এনামুলের হিসাবরক্ষকদের কাছ থেকে পাওয়া নথি নকল হয়, তা হলে তা চ্যালেঞ্জ করে সিবিআইকে জানিয়ে যাওয়া উচিত রাজ্যের আইপিএস-সহ পুলিশ অফিসারদের। তাঁরা জড়িত নন, এটা ধরেই তদন্ত এগোচ্ছে সিবিআই। তার পরেও রাজ্যের পুলিশ কর্তারা সিবিআইয়ের তদন্তে সহযোগিতা করছেন না কেন?
আরও পড়ুন: গত ২৪ ঘণ্টায় ২০ করোনা আক্রান্তের মৃত্যু, নতুন করে সংক্রমিত ৭৮৭
আরও পড়ুন: দুয়ারে সরকারে নাম নথিভুক্তি পৌঁছে গেল ২ কোটিতে, শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর
সিবিআই ওই পুলিশ অফিসারদের নিজাম প্যালেসে হাজির করানোর জন্য রাজ্য পুলিশের ডিজি’কে চিঠি দিয়েছিলেন। নবান্নের খবর, যে আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে রাজ্য সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাঁদের এক-দু’জনের যোগাযোগও কয়লা-গরু চক্রে মিলেছে বলে সিবিআই দাবি করেছে। রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তার অভিযোগ, রাজ্য পুলিশের অফিসারদের হেনস্থা করতেই সিবিআই কোমর বেঁধে নেমেছে। রাজ্যের অনুমতি ছাড়া সিবিআই কোনও নতুন মামলা এখনও শুরুই করতে পারে না। বেআইনি ভাবে মামলা রুজু করা হয়েছে এবং সে কারণেই আদালতে যাওয়া হয়েছে বলে তাঁর বক্তব্য।
সিবিআই সূত্রের দাবি, জেরার সময় একান্তে যে সব প্রশ্ন করা হত, আইপিএস অফিসারেরা আদালতে চলে যাওয়ায় এ বার হলফনামা দিয়ে সিবিআই পুরোটাই আদালতে জানাবে। কোনও অফিসারের কী যোগসূত্র রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, তা-ও জানানো হবে। সে ক্ষেত্রে হলফনামা দিয়েই সংশ্লিষ্ট অফিসারদের তা খণ্ডন করতে হবে। সিবিআই সেই হলফনামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে সূত্রের দাবি।