সমাপ্তি রুইদাস। —ফাইল চিত্র।
মৃতার পরিবার কোনও অভিযোগ দায়ের না-করায় পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করতে চাইছে না বলে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল সূত্রের খবর। এই অবস্থায় নার্সিংয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী সমাপ্তি রুইদাসের (১৮) মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিজেদের পর্যবেক্ষণ থেকে সুস্পষ্ট ভাবে কিছু জানাতে পারল না তদন্ত কমিটি। বেশ কিছু প্রশ্নের সদুত্তর না-পেয়ে কমিটির সদস্যেরা কার্যত আটকে গিয়েছেন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, সেই প্রশ্নগুলি কী, তা জানিয়ে সুপার সন্দীপ ঘোষকে রিপোর্ট দিয়েছে তদন্ত কমিটি। তাদের পর্যবেক্ষণ স্বাস্থ্য ভবনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শনিবার ন্যাশনালের নার্সিং ট্রেনিং স্কুলের পাঁচতলার বারান্দা থেকে সমাপ্তির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। বাঁকুড়ার কোতুলপুরের তাজপুর গ্রামের ওই ছাত্রীর ঘরে একটি সইবিহীন ‘সুইসাইড নোট’ পাওয়া যায়। তাতে লেখা ছিল, ‘আমি এক পাতা বাংলা মুখস্থ করে নিই। এখানে তো সবই ইংরেজি। সবাই বলছে, হয়ে যাবে। কিন্তু এত দিন চেষ্টা করলাম। কিছুই হল না!’
হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের গড়া চার সদস্যের তদন্ত কমিটির বক্তব্য, ওই চিরকুট যদি সত্যিই সুইসাইড নোট হয় এবং সেই নোটের বয়ান যদি সত্যি হয়, তা হলে মানসিক অবসাদ থেকে ছাত্রীর আত্মঘাতী হওয়ার তত্ত্ব জোরালো হয়ে ওঠে। কিন্তু সই না-থাকায় ওই নোট সমাপ্তিরই কি না, নিশ্চিত নয়। এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে হস্তলিপি বিশারদের সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি।
আরও পড়ুন: মধ্য রাতে ঘুম ভাঙিয়ে কেঁপে উঠল ঘর, মধ্যমগ্রামে দেওয়াল-ছাদ ফুঁড়ে বেরিয়ে গেল লোহার পাইপ!
সমাপ্তির কাছে ৫০ হাজার টাকা চেয়ে কিছু ‘সিনিয়র’ হুমকি দিয়েছিল বলে ওই ছাত্রীর মা বুলাদেবীর অভিযোগ। হস্টেলে র্যাগিং হত বলে ওই তরুণী বান্ধবীদের জানিয়েছিলেন। সুইসাইড নোটে লেখা আছে, সমাপ্তিকে পড়ানোর জন্য তাঁর বাবা সুকুমার রুইদাসের পাঁচ লক্ষ টাকা দেনা হয়ে গিয়েছে। সরকারি নার্সিং স্কুলে পড়তে বিশেষ খরচ নেই। তা হলে এত দেনা কেন, সেটাও তদন্ত কমিটিকে ভাবাচ্ছে। তদন্ত কমিটির এক সদস্য জানান, সমাপ্তির সহপাঠী, বাবা-মা এবং অন্যান্য নিকটজনের সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন। সত্যতা যাচাইয়ে ছাত্রীটির কল রেকর্ডসের নথিও দরকার। পুলিশের সহযোগিতা ছাড়া এর কোনওটাই সম্ভব নয়। কিন্তু সমাপ্তির পরিবারের তরফে লিখিত অভিযোগ না-আসায় পুলিশ এগোতে চাইছে না। তাই ওই সব প্রশ্নের উত্তর এবং প্রয়োজনীয় নথি মিলছে না।
তবে সমাপ্তির অপমৃত্যুর পরে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের খবর, সপ্তাহে দু’দিন নার্সিংয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রীদের ‘স্পোকেন ইংলিশের’ ক্লাস হবে। দু’সপ্তাহ অন্তর মনোরোগ বিভাগের চিকিৎসকেরা তাঁদের কাউন্সেলিং করাবেন। তাঁরা হস্টেলের তেতলায় থাকবেন। হস্টেলে বহিরাগতদের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।