প্রতীকী ছবি।
যা করেছেন তার জন্য বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত নন জুনিয়র কনস্টেবল বিনোদ কুমার। পুলিশের শীর্ষকর্তাদের এমনই জানিয়েছেন তিনি। তাঁকে পরীক্ষা করেছেন ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। হাসপাতাল সূত্রের খবর, টানা গুলি চালিয়ে শান্ত হওয়ার পরও তাঁর আচরণে কোনও অস্বাভাবিকত্ব দেখা যায়নি।
বিনোদকে কলকাতার একটি সরকারি মানসিক হাসপাতালে ‘রেফার’ করা হয়েছে। শনিবার পুলিশের উদ্যোগে বিনোদকে কলকাতায় পাঠানো হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে রাত। প্রায় ৮ ঘন্টা ঝাড়গ্রাম পুলিশ লাইনের অস্ত্রাগারের ভবনের ছাদ থেকে মাঝে মাঝেই রাস্তা লক্ষ করে গুলি চালিয়েছিলেন বিনোদ। মানসিক অবসাদেই বিনোদ এমনটা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছে পুলিশ। তবে সেই অবসাদের কারণ নিয়ে চর্চা চলছে পুলিশের অন্দরে। পুলিশের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিনোদ গাঁজার নেশা করতেন। বিনোদের ছোড়া গুলিতে কেউ হতাহত হয়নি, একথা জানানোর পাশাপাশি পুলিশ সুপার অমিতকুমার ভরত রাঠৌরও বলেছেন, ‘‘হ্যালুসিনেশনের ভিত্তিতে গুলি ছোড়েন ওই জুনিয়র কনস্টেবল।’’ তবে বিনোদের সহকর্মীরা জানাচ্ছেন, কথায় কথায় রেগে যেতেন তিনি। বিশেষ এক পুলিশকর্মীর সম্পর্কে কটূত্তিও করতেন। ঊর্ধ্বতন এক সহকর্মীর প্রতি গভীর বিদ্বেষও ছিল তাঁর। বিবাহিত বিনোদের সঙ্গে এক মহিলা পুলিশকর্মীর সুসম্পর্ক ছিল বলে জানা গিয়েছে। কোনও বিশেষ সম্পর্কের মধ্যে তৃতীয় কারও অনুপ্রবেশ ঘটার কারণে কি তিনি মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন? জল্পনা চলছে বিনোদের সহকর্মীদের মধ্যে।
বিনোদকে ছাদ থেকে নামাতে কালঘাম ছুটেছে পুলিশের। পুরুলিয়ার কোটশিলার গয়রাটাঁড় গ্রামের বাড়ি থেকে বিনোদের বাবা-স্ত্রী সহ পরিজনদের ঝাড়গ্রামে নিয়ে আসা হয়। বৃহস্পতিবার রাত সওয়া ন’টা নাগাদ পরিবারের সদস্যদের অনুরোধে ছাদ থেকে নামেন বিনোদ। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পরে রাত সাড়ে দশটা নাগাদ বিনোদকে ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ স্নেহাশিস দাসের অধীনে মেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডের কেবিনে বিনোদকে ভর্তি করানো হয়। কড়া পুলিশি প্রহরায় সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বিনোদ। হাসপাতালের কর্মীরা জানাচ্ছেন, বৃহস্পতিবার রাতে এসডিপিও (ঝাড়গ্রাম) অনিন্দ্যসুন্দর ভট্টাচার্য ও ঝাড়গ্রাম থানার আইসি পলাশ চট্টোপাধ্যায় বিনোদকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, শুক্রবার সকালে আচমকা অস্বাভাবিক আচরণ করেন বিনোদ। এক সহকর্মীকে গালিগালাজও করেন। পরে শান্ত হয়ে যান। এ দিন দুপুরে খাওয়ার পরে বিনোদকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার নিজের ও সহকর্মীর স্বয়ংক্রিয় রাইফেল মিলিয়ে মোট প্রায় ২০০ রাউন্ড গুলি ছিল বিনোদের কাছে। ঝড়, বৃষ্টি বা বাজ কোনওকিছুই কাবু করতে পারেনি বিনোদকে। মাঝে মধ্যেই চিৎকার করে গুলি ছুড়েছিলেন তিনি। চিকিৎসকদের কাছে বিনোদ জানিয়েছেন, তাঁর বা হাতের একটি আঙুলে আঘাত রয়েছে। চিকিৎসকেরা মনে করছেন, সহকর্মীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময়ে সম্ভবত চোট লেগেছিল।
আপাতত বিনোদের ঠাঁই হবে কলকাতার মানসিক হাসপাতালে। তারপর বিভাগীয় তদন্ত। সেখানেই স্পষ্ট হতে পারে মানসিক অবসাদের কারণ।