অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস।
কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন বলে আদালতে ফের জানাল সিবিআই। মঙ্গলবার বারাসত জেলা দায়রা আদালতে রাজীব কুমারের আগাম জামিনের আবেদনের তীব্র বিরোধিতা করেন সিবিআইয়ের আইনজীবী কেএন মিশ্র। এ দিন তিনি কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনারের আগাম জামিনের বিরোধিতা করে সওয়াল করেন, রাজীব কুমারকে আগাম জামিন দিলে গোটা তদন্ত প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। তদন্তের স্বার্থে তাই রাজীবকে হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন।
এ দিন সকালে আদালতের কাজ শুরু হওয়ার আগেই সেখানে পৌঁছন সিবিআইয়ের আধিকারিক এবং আইনজীবীরা। প্রথমে দু’পক্ষই যান বারাসতের এমএলএ-এমপি বিশেষ আদালতে। সেখানে রাজীব কুমারের আগাম জামিনের আবেদন করা হয়। পাল্টা রাজীবের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার আবেদন জানানো হয় সিবিআইয়ের তরফে। বিশেষ আদালতের বিচারক দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে জানান যে, এই আদালতের আগাম জামিন দেওয়া বা গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার এক্তিয়ার নেই। সেই ক্ষমতা রয়েছে জেলা দায়রা আদালতের।
বিশেষ আদালত ফিরিয়ে দিতেই তড়িঘড়ি জেলা আদালতে রাজীব কুমারের আগাম জামিনের আবেদন নথিভুক্ত করা হয় বেলা ১২টা নাগাদ। এর পর বেলা ২টো নাগাদ শুরু হয় শুনানি। এ দিন রাজীবের আইনজীবী গোপাল হালদার আগাম জামিনের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে বলেন, ‘‘রাজীব কুমার এ রাজ্যের এক জন শীর্ষ পুলিশ আধিকারিক। তিনি এর আগেও সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে সহযোগিতা করেছেন।” শিলংয়ে সিবিআইয়ের সঙ্গে রাজীব কুমারের প্রায় ৪০ ঘণ্টা প্রশ্নোত্তরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে গোপাল বলেন, ‘‘রাজীব কুমার তদন্তে সহযোগিতা করেছেন। সেই সময়েও শীর্ষ আদালত তাঁর গ্রেফতারির বিরুদ্ধেই রায় দিয়েছিল।” তিনি সাম্প্রতিক সমনের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘‘রাজীব কুমার জানিয়েছেন যে তিনি ছুটিতে রয়েছেন। তিনি ফিরে এসে সিবিআই দফতরে যাবেন। তার পরেও তাঁকে হেফাজতে নেওয়ার কী প্রয়োজন?”
রাজীবের আইনজীবীর দাবি, তাঁর মক্কেলকে সমন পাঠানো হয়েছিল ফৌজদারি বিধির ১৬০ ধারায়, এক জন সাক্ষী হিসাবে। ১৩ সেপ্টেম্বর সেই সমন পাঠিয়েছিল সিবিআই। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘গত চার দিনে এমন কী ঘটে গেল যে, রাজীব কুমার সাক্ষী থেকে অভিযুক্ত হয়ে গেলেন এবং সিবিআই তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে চাইছে?”
আরও পড়ুন: ‘কথা হবে রাজ্যের পাওনা নিয়ে’, দিল্লি যাওয়ার আগে বলে গেলেন মমতা
আরও পড়ুন: জানাতে হবে ধর্মান্তরে ভূমিকা নেই, বিদেশি অর্থসাহায্য আইন আরও কঠোর করল কেন্দ্র
গোপালের পাল্টায় গোটা সারদা প্রতারণা মামলা জেলা জজ সব্বর রশিদির সামনে ব্যাখ্যা করেন সিবিআইয়ের আইনজীবী কেএন মিশ্র। তিনি বলেন, ‘‘বিধাননগরেই সারদার সদর দফতর। সেই বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার ছিলেন রাজীব কুমার।” এর পর সিবিআই আইনজীবী ফের রাজ্য সরকার গঠিত সিটের অন্যতম মুখ্য সদস্য রাজীব কুমারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন, সিট তদন্ত করার সময় কী ভাবে বহু তথ্য লোপাট করেছে এবং সেখানে রাজীব কুমারের ভূমিকা প্রশ্নাতীত নয়। সিবিআইয়ের আইনজীবী এর পর দাবি করেন যে, রাজীব কুমার বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার জেরা এড়ানোর চেষ্টা করেছেন। তিনি আদৌ তদন্তে সহযোগিতা করছেন না। এই পরিস্থিতিতে তিনি জামিনে থাকলে তাঁর কাছ থেকে তদন্তে আরও সহযোগিতা পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন কেএন মিশ্র। তাঁর কথায়, ‘‘আগাম জামিন মঞ্জুর করা হলে তা তদন্তের কাজ ব্যাহত করবে।”
এর পরই, জেলা জজ সব্বর রশিদি রায় দান স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন।