Partha Chatterjee

Partha Chatterjee-Arpita Mukherjee: এখনও পর্যন্ত হদিস পার্থ ও অর্পিতার ১৩১টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের

তদন্তকারীদের দাবি, দুর্নীতির শিকড় আরও অনেক গভীরে। সেখানে পৌঁছলে, এই সম্পত্তি ও টাকার অঙ্ক ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২২ ০৬:২১
Share:

পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে আদালতে তোলার সময়েই ইডি-র আইনজীবীর দাবি ছিল, পেঁয়াজের খোসার মতো তদন্তের পরত যত উঠবে, তত খোঁজ মিলবে সম্পত্তির। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির সূত্রে দাবি, ওই সম্ভাবনা মিলিয়ে দু’জনকে জেরা ও তল্লাশি যত গড়াচ্ছে, তত সামনে আসছে চোখ কপালে তোলার মতো সম্পত্তি ও টাকার অঙ্ক। একের পর এক ভেসে উঠছে লুকোনো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আর জটিল লেনদেনও।

Advertisement

ইডি সূত্রে দাবি, শুরুতে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ এবং অর্পিতার দু’টি সংস্থার (অপা ইউটিলিটি সার্ভিস ও অনন্ত টেক্সফ্যাব প্রাইভেট লিমিটেড) ন’টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিস মিলেছিল। এখন সেই সংখ্যা ১৩১!

তদন্তকারী অফিসারদের একাংশের দাবি, সপ্তাহখানেক আগেও এই দুই সংস্থার খোঁজ পাওয়া অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ৬০টি। কিন্তু সংস্থা দু’টির নথি যাচাই করে একের পর এক নতুন অ্যাকাউন্ট এবং সেগুলির মাধ্যমে কোটি-কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য উঠে আসছে। ২০১৬ সালে নোটবন্দির সময়ে এই সমস্ত অ্যাকাউন্টের একাংশের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করা হয়েছিল বলেও তাঁদের দাবি।

Advertisement

তদন্তকারী অফিসারদের সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে পাওয়া নগদ টাকা, সোনা-গয়না এবং দু’টি সংস্থার নামে সম্পত্তি ও ১৩১টি অ্যাকাউন্টে লেনদেনের ভিত্তিতে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার দুর্নীতি সামনে এসেছে। কিন্তু তদন্তকারীদের দাবি, দুর্নীতির শিকড় আরও অনেক গভীরে। সেখানে পৌঁছলে, এই সম্পত্তি ও টাকার অঙ্ক ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। তা ছাড়া, তাঁদের মতে, শুধু পার্থ ও অর্পিতাই যে দুর্নীতির টাকা নিয়েছেন, তা নয়। বরং তদন্তের সূত্রে প্রাথমিক অনুমান, চাকরি ‘বিক্রি করে লুটের টাকার’ মোটা অংশ সম্ভবত গিয়েছে অন্য ‘প্রভাবশালীদের’ কাছে।

ইডি কর্তাদের দাবি, বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি ব্যাঙ্কে ২০১২ সালের পর থেকে পার্থ, অর্পিতা এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তৈরি সংস্থার নামে বিপুল সংখ্যক (এখনও পর্যন্ত যার সংখ্যা ১৩১) অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল। নানা সময়ে সেগুলিতে মোটা অঙ্কের ‘সন্দেহজনক’ লেনদেন হয়েছে। যে সমস্ত অ্যাকাউন্টের সঙ্গে পার্থ-অর্পিতার সংস্থার অ্যাকাউন্টের এমন লেনদেন হয়েছে, সেগুলি এখন তদন্তের আতসকাচে। তদন্তকারীদের কথায়, সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে সমস্ত নথি চেয়ে পাঠানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের ম্যানেজার এবং অফিসারদের। খতিয়ে দেখা হবে, কোনও যোগসাজশ ছিল কি না। তদন্তকারীদের মতে, বড় অঙ্কের ‘সন্দেহজনক’ লেনদেন সব থেকে বেশি হয়েছে ২০১৬-১৭ সালে।

২৪ জুলাই অর্পিতাকে আদালতে পেশ করে ইডি-র আইনজীবী অভিজিৎ ভদ্র দাবি করেছিলেন, তদন্ত এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে পেঁয়াজের খোসা ছাড়ানোর মতো করে একের পর এক সম্পত্তি ও নগদ টাকা উদ্ধার হবে। এখন তদন্তে নেমে ইডি কর্তাদের দাবি, এসএসসি ও প্রাথমিক টেট দুর্নীতি কাণ্ডে অভিযুক্ত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ অত্যন্ত প্রভাবশালী। তাঁদের অভিযোগ, ২০১৬ সালে নোটবন্দির পর্ব-সহ নানা সময়ে চাকরি বিক্রির লুটের কালো টাকা সাদা করা হয়েছিল‌। পরে তার একাংশ ব্যাঙ্ক থেকে তোলা হয়। তদন্তকারীদের অনুমান, সেই টাকায় এক দিকে যেমন সম্পত্তি কেনা হয়েছিল, তেমনই অর্পিতার ফ্ল্যাটেও রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে সেই টাকা হাওয়ালা মারফত বাংলাদেশ-সহ বিভিন্ন দেশে পাচারও হয়ে থাকতে পারে।‌ অর্পিতার দু’টি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া নগদ প্রায় ৫০ কোটি টাকা এখন কব্জায়। কিন্তু আগেই বিপুল অঙ্কের টাকা পাচার হয়ে গিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা তাঁদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement