বিরোধীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে দু’টি ব্লক। ফাইল চিত্র।
গুজরাতের ভোট পর্ব মিটলেই শুরু হবে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, অধিবেশন শুরু হওয়ার তিন সপ্তাহ আগেই বিরোধীদের মধ্যে বিভাজন স্পষ্ট। বিরোধীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে দু’টি ব্লক। এক দিকে কংগ্রেস এবং কংগ্রেসের সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যে জোট গড়া আঞ্চলিক দল। অন্য দিকে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে লড়াই করা রাজনৈতিক দল। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কেরলে বাম এবং কংগ্রেসের লড়াই থাকলেও সংসদীয় রাজনীতির প্রশ্নে সীতারাম ইয়েচুরির দল, রাহুল গান্ধী, সনিয়া গান্ধীর পাশে ঘনিষ্ঠ ভাবেই থেকেছে সাম্প্রতিক সময়ে। এ বারেও তার অন্যথা হবে না বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনুমান।
রাজনৈতিক শিবিরের মতে, এই বিভাজনে বিভিন্ন বিল পাশ করানো বা বিরোধী স্বরকে স্তব্ধ করে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিজেপির সুবিধাই হবে। কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, “বিরোধী জোটকে লঘু করে দেওয়ার জন্যই তৃণমূলের এই উদ্যোগ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এত দিন রাজনীতি করছেন আর নির্বাচনী অঙ্ক বোঝেন না, এমনটা তো নয়। তিনি করছেন নিজের রাজনৈতিক সুরক্ষার জন্য। কারণ, তা না হলে নরেন্দ্র মোদী আরও আগ্রাসী হবেন, দুর্নীতির প্রশ্নে তাঁর ভাইপোর উপর চাপ আসবে। আমাদের কাছে অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে যে উনি মোদীকে খুশি রাখতে চান। কংগ্রেসের সঙ্গে সমন্বয় করে বিরোধিতা জোরদার করলে মোগাম্বোর রাগ হতে পারে!” তাঁর বক্তব্য, “গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছে ৩৭% ভোট, কংগ্রেস ২০-র কাছাকাছি। তৃণমূল প্রায় ৪%। নির্বাচনী অঙ্ক সহজ, চব্বিশে বিজেপিকে হারাতে গেলে কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াটাই বিধেয়।” কংগ্রেস নেতৃত্বের মতে, বিরোধী শিবিরে থেকে তৃণমূলের লুকোচুরি খেলা চলতে পারে না। সিবিআই-ইডির ‘রাজনৈতিক অপব্যবহার’ নিয়ে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদীকে ‘ক্নিনচিট’ দিয়েছে। কংগ্রেসের প্রশ্ন, কেন মমতা মোদীকে এ বিষয়ে ‘ক্লিনচিট’ দিয়েছিলেন!
সার্বিক ভাবে কংগ্রেসের প্রতি তৃণমূলের এই ‘অ্যালার্জি’ কি আখেরে বিজেপিরই সুবিধা করে দেবে না? তৃণমূলের সংসদীয় এক নেতার দাবি, “আদৌ নয়। আমরা কখনওই চাই না, কংগ্রেসের হাতে সমন্বয়ের নেতৃত্ব তুলে দিতে, কারণ তাদের সঙ্গে অনেক আঞ্চলিক দলেরই সম্পর্ক ভাল নয়। অন্য দিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেশের সব বিরোধী দলেরই যোগাযোগ রয়েছে। যে সব দল রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতার ঘরে যায়, এবং যারা যায় না, উভয়ের সঙ্গেই তৃণমূল যোগাযোগ রেখে চলে। এমনকি, শিবসেনাও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে।” তিনি জানান, লবিতে বিরোধীদের কথাবার্তা ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বিরোধিতার কর্মসূচি স্থির করে নেবে তৃণমূল।
কংগ্রেসের ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নীতি অনুসারে, রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতার পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হবে মল্লিকার্জুন খড়্গেকে। কাকে বিরোধী দলনেতা করা হবে তা নিয়ে চলছে ভাবনাচিন্তা। তৃণমূল কিন্তু স্পষ্টই জানাচ্ছে, যিনি-ই বিরোধী দলনেতা হন না কেন, বিরোধীদের কক্ষ সমন্বয় নিয়ে তাঁর ঘরে বৈঠক করতে যাবে না তারা। একই ভাবে অধীর চৌধুরী যত দিন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা থাকবেন, তৃণমূলের পক্ষে কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও রকম সমন্বয় করা সম্ভব নয় বলেও জানানো হয়েছে।
রাজনৈতিক সূত্রের মতে, তৃণমূলের মতোই এসপি, আপ এবং টিআরএস কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও সংসদীয় কক্ষ সমন্বয়ে যেতে রাজি নয়। তৃণমূলের দাবি, এই দলগুলি তাদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে বিরোধী সমন্বয়ে অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ। অন্য দিকে এনসিপি, ডিএমকে, আরজেডি ও বামদলগুলি কংগ্রেসের নেতৃত্বের সঙ্গে কক্ষ সমন্বয়ে আগ্রহী। আগের সংসদীয় অধিবেশনেও মল্লিকার্জুন খড়্গের ঘরে বিরোধী বৈঠকে এই দলগুলির নেতারা হাজির থেকেছেন।