বর্ধমান স্টেশনের ভেঙে পড়া অংশে চলছে কাজ। রবিবার সকালে। নিজস্ব চিত্র
স্টেশনের ঝুল-বারান্দা ভেঙে আহত এক জনের মৃত্যু হল বর্ধমানে। শনিবার গভীর রাতে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় বছর চল্লিশের ওই ব্যক্তির। তবে রবিবার রাত পর্যন্ত তাঁর পরিচয় জানা যায়নি। এ দিন দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার সুনীত শর্মা বলেন, ‘‘কী কারণে এমন ঘটল, তদন্ত শেষ না হলে বলা সম্ভব নয়।’’
শনিবার রাত ৮টা থেকে বর্ধমান স্টেশনে ঢোকার মুখে অনুসন্ধান কেন্দ্রের সামনের ঝুল-বারান্দা ও থামগুলি ভেঙে পড়ে। দু’জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে হপনা টুডু নামে ঝাড়খণ্ডের পাকুড়ের এক বাসিন্দার পা ভেঙেছে। রবিবার তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, অপর জন মাথা ও বুকে চোট পান। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণও হচ্ছিল। ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে’ রাখা হয়েছিল তাঁকে। রাত ২টো ৩৫ মিনিট নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়।
ঝাড়খণ্ডের পাকুড়ের বাসিন্দা হপনা চাষ-আবাদ করেন। তিনি জানান, শনিবার মেয়ে প্রিয়াঙ্কাকে ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে বসিয়ে রেখে অনুসন্ধান অফিসের সামনে খাওয়াদাওয়া করতে গিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘ওখানে বসে রুটি খাচ্ছিলাম। হঠাৎ অনেকে চিৎকার করে সরে যেতে বলে। দেখি, উপর থেকে ইট খসে পড়ছে। পড়িমরি করে যখন পালানোর চেষ্টা করছি, তখনই বিকট শব্দে পায়ের উপরে চাঙড় এসে পড়ে।’’ কিছু ক্ষণের মধ্যে পুলিশ এবং রেলের লোকজন এসে তাঁদের
হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। রবিবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলে রেলের তরফে তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে ঝাড়খণ্ডে বাড়ি পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শনিবার দুর্ঘটনার ঘণ্টা দেড়েক পর থেকেই ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ শুরু হয়। রবিবার সকাল পর্যন্ত প্রায় ১৪ ঘণ্টা ধরে সেই কাজ চলে। যে দোতলা ভবনের অংশ ভেঙে পড়ে, সেটি থেকে সমস্ত দফতর সরানো হয় রাতেই। ক্ষতিগ্রস্ত বারান্দার লাগোয়া অংশগুলি যাতে আর না ভেঙে পড়ে, সে জন্য লোহার খাঁচা (ক্রিপ) বসানো শুরু হয়। রেল সূত্রে জানা যায়, ট্রেন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটেনি। তবে শনিবার রাত থেকে ওই ভবন লাগোয়া প্ল্যাটফর্ম দিয়ে যাওয়া ট্রেনের গতিবেগ অনেকটাই কম করা হয়েছে। যে জায়গাটি ভেঙে পড়ে, সেখান দিয়ে ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে যাতায়াত করতেন যাত্রীরা। এখন ওই প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার জন্য গুড্সশেডের কাছে একটি গেট ব্যবহার করা হচ্ছে বলা জানান রেল-কর্তারা। রবিবার স্টেশনে যাত্রীর আনাগোনা কম ছিল। দোকান খোলেননি অনেক ব্যবসায়ীও।
সহ-প্রতিবেদন: সুপ্রকাশ চৌধুরী