ছবি: সংগৃহীত।
বাংলার মানুষের স্বার্থেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পে যোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন প্রকল্পের চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসার (সিইও) ইন্দু ভূষণ। বিশ্ব রোগী সুরক্ষা দিবস উপলক্ষে হায়দরাবাদে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে শনিবার তিনি বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী ভাল। তবে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ আরও ভাল।’’
লোকসভা ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র ছবির সম্বলিত ‘এনটাইটেলমেন্ট লেটার’-এ রাজ্যে প্রকল্পের উপভোক্তাদের ডাকঘর মারফত পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। বিষয়টি জানার পরে প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ঘটনা সম্পর্কে অবহিত সিইও বলেন, “আমি রাজনীতির জগতের লোক নই। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে সব রাজ্যের মধ্যে সেরাদের তালিকায় ছিল পশ্চিমবঙ্গ। তাই পশ্চিমবঙ্গ বেরিয়ে যাওয়ায় হতাশ হয়েছিলাম।”
দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে প্রত্যাবর্তনের অনুরোধ জানিয়ে রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। চিঠি দেওয়ার কথা স্বীকার করে ইন্দু ভূষণ জানান, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রকল্পে যোগ দেওয়া নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তাঁর দাবি, আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের উপভোক্তা দেশের যে কোনও প্রান্তে চিকিৎসা করাতে পারেন। কিন্তু উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষ কর্মসূত্রে কলকাতার থাকলেও চিকিৎসা করাতে পারছেন না। আবার কলকাতার বাসিন্দারা ভিন্ রাজ্যে গেলে আয়ুষ্মান ভারতের সুবিধা নিতে পারছেন না। তা ছাড়া, প্রকল্পে যোগ দিলে ৪০০ কোটি টাকা রাজ্য পেত।
তবে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমাদের এখানে কোনও দিনই আয়ুষ্মান ভারত ছিল না। পুরো বিষয়টি একেবারে প্রাথমিক স্তরে ছিল। তখন কেন্দ্রের প্রকল্প চালুই হয়নি। স্বাস্থ্যসাথীতে সাড়ে সাত কোটি মানুষ উপকৃত। বিয়ের পরে এক জন মহিলা তাঁর পরিবারের পাশাপাশি বাবা-মা’কেও যুক্ত করতে পারেন। আয়ুষ্মান ভারত এ সব ভেবেছে?’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী সারা দেশের কাছে মডেল প্রকল্প। ওরা টাকা দিলেও তো রাজ্যকে দিতে হবে। কাজেই কেন্দ্রের জ্ঞান শুনে লাভ নেই।”
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রকল্পের পরবর্তী ধাপ হল, জাতীয় ডিজিটাল স্বাস্থ্য কর্মসূচি। যার সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দেন জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের সিইও জে সত্যনারায়ণ। যেখানে অ্যাপ ও পোর্টালের মাধ্যমে কী ভাবে গ্রাম, রাজ্য ও জাতীয় স্তরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হবে তা-ও দেখানো হয়। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পকে কাজে লাগিয়ে অনুন্নত জেলায় কী ভাবে গুণমান সম্পন্ন পরিষেবা দিতে সক্ষম হাসপাতাল গড়া যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানান ইন্দু ভূষণ।
রোগী সুরক্ষা নিয়ে সম্মেলনের মঞ্চে বিমা নির্ভর স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। স্বাস্থ্যসাথী হোক বা আয়ুষ্মান ভারত, সরকারি বিমা প্রকল্পের গণ্ডির মধ্যে থেকে উন্নতমানের পরিষেবা দেওয়া কী ভাবে সম্ভব তা জানতে চান কর্পোরেট হাসপাতালের প্রতিনিধিরা। সারা বিশ্বে হাসপাতালগুলিকে গুণগত মানের নিরিখে আমেরিকার মান্যতা প্রদানকারী সংস্থা ‘জয়েন্ট কমিশন ইন্টারন্যাশনাল’-এর প্রেসিডেন্ট পলা উইলসন বলেন, “বিমার হাত ধরে আমাদের দেশে প্রায় সকলে স্বাস্থ্য পরিষেবার আওতায় রয়েছেন। কিন্তু তার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে!” ইন্দু ভূষণ বলেন, “আমাদের দেশে গরিব মানুষকে স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে হলে বিমার প্রকল্পের প্রয়োজন। কিন্তু যাঁদের সামর্থ্য রয়েছে তাঁরা যাতে কড়ি ফেলে পরিষেবা নেন সেই ব্যবস্থাও থাকা উচিত।”