সল্টলেকে পর্ষদের দফতরে বিক্ষোভ। মঙ্গলবার।নিজস্ব চিত্র
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত। এত দিন টানাপড়েন চলছিল মূলত প্রশিক্ষিত প্রার্থী আর প্রশিক্ষণহীনদের মধ্যে। তার মধ্যেই নতুন অভিযোগে সরব হয়েছেন তফসিলি জাতির কিছু প্রার্থী। তাঁদের অভিযোগ, বেশ কিছু জেলায় সংরক্ষণের নিয়ম মানা হচ্ছে না। বহু ক্ষেত্রে বেশি নম্বর পেয়েও তাঁরা সংরক্ষিত আসনে সুযোগ পাচ্ছেন না। আবার সাধারণ শ্রেণির শূন্য শিক্ষক-পদেও ঠাঁই হচ্ছে না তাঁদের।
দু’দিক থেকেই বঞ্চনার অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার সল্টলেকে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখান এক দল প্রার্থী। তাঁদের অভিযোগ, অনেক জেলাতেই সংরক্ষণের নিয়ম ভাঙা হচ্ছে। ওই শ্রেণির প্রার্থীদের সমস্যা ব্যাখ্যা করলেন মিজানুর রহমান নামে এক আন্দোলনকারী। ওই প্রার্থীর কথায়, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী কোনও তফসিলি জাতিভুক্ত প্রার্থীও প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ‘সাধারণ শ্রেণি’-তে সুযোগ পেতে পারেন। তা না-হলে তাঁকে ‘সংরক্ষিত শ্রেণি’-তে রাখা হবে।’’
মিজানুরের অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রে তফসিলি জাতির প্রার্থীরা বেশি নম্বর পেলেও তাঁদের সাধারণ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না। তাঁদের বদলে সাধারণ শ্রেণির পদে সুযোগ দেওয়া হয়েছে অপেক্ষাকৃত কম নম্বর পাওয়া প্রার্থীদের। ফলে সাধারণ শ্রেণির পদ থেকে ওই তফসিলি প্রার্থীরা বঞ্চিত। আবার সংরক্ষিত আসন সীমিত বলে সেখানেও সুযোগ হচ্ছে না এই ধরনের অনেক যোগ্য প্রার্থীর।
পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, ‘‘সব কিছুই নিয়ম মেনে হয়েছে। তফসিলি প্রার্থীর তালিকায় নাম না-থাকার অনেক কারণ থাকতে পারে। সম্পূর্ণ তালিকা না-দেখে কিছু বলা সম্ভব নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’’ পর্ষদ-প্রধানের আশ্বাস, পদ খালি থাকলে অবশ্যই যোগ্য প্রার্থীকে সেই স্কুলে নিয়োগ দিতে হবে। এই বিষয়ে কোনও অভিযোগ এলে অবশ্যই তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাবরার এক তরুণীর অভিযোগ, কাউন্সেলিংয়ের সময়ে তিনি পছন্দের প্রতিষ্ঠান হিসেবে যে-স্কুলের কথা জানিয়েছিলেন, সেখানে পদ খালি থাকা সত্ত্বেও তাঁকে অন্য স্কুলে যেতে বাধ্য করিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের আধিকারিকেরা। কিন্তু তাঁর বাড়ি থেকে ওই স্কুলে পৌঁছনোর পথ এতই খারাপ যে, তিনি সেখানে যোগ দিতে পারেননি। অথচ নিয়ম অনুযায়ী ২৫ দিনের মধ্যে কাজে যোগ না-দিলে তাঁর নিয়োগ বাতিল হয়ে যেতে পারে। সেই সমস্যার সমাধান করতেই তিনি পর্ষদে এসেছেন। অভিযোগ, তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
মূলত এই ধরনের অভিযোগ নিয়েই এ দিন বেলা ১টা থেকে পর্ষদের দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখান প্রার্থীরা। বিক্ষোভ চলাকালীন উত্তর ২৪ পরগনার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের এক আধিকারিক অফিসে ঢুকতে গেলে প্রার্থীরা তাঁর গাড়ি ঘিরে ধরেন। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁকে ঘেরাও-মুক্ত করে।
অনিয়মের নানান অভিযোগ উঠলেও শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য নিজের বক্তব্য থেকে সরতে রাজি নন। এ দিন শ্যামাপ্রসাদ কলেজের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি ফের দাবি করেন, ‘‘কোনও দুর্নীতি হয়নি। কোনও দাদা ধরে নয়, মেধার ভিত্তিতেই নিয়োগ হচ্ছে।’’ যাঁরা এ বার সুযোগ পাননি, তাঁদের পরের বছরের জন্য প্রস্তুত হওয়ার পরামর্শও দেন শিক্ষামন্ত্রী। নিয়োগ-সমস্যা এত জটিল হয়ে ওঠার দায় ফের বাম জমানার ঘাড়েই চাপিয়ে দিয়েছেন পার্থবাবু। তাঁর অভিযোগ, দীর্ঘদিন নিয়ম মেনে শূন্য পদ পূরণ না-করায় পরিস্থিতি জটিল হয়েছে।
প্রাথমিকে নিয়োগ নিয়ে এই বিভ্রান্তির মধ্যেই এ দিন স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ও শ্যামাপ্রসাদ স্কুলের অধ্যক্ষ সুবীরেশ ভট্টাচার্য জানান, উচ্চ প্রাথমিকে (পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি) শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা ‘টেট’-এর ফল বেরোলেও আইনি জটিলতায় ইন্টারভিউয়ের প্রক্রিয়া শুরু করা যাচ্ছে না। এই নিয়ে ১৫টি মামলা চলছে।
একই ভাবে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও আইনি জটিলতা রয়েছে বলে জানান তিনি। তাই এই দুই ক্ষেত্রে কবে নিয়োগ হবে, তা নিয়ে প্রশাসনের মধ্যেই অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষা মহলের একাংশের মতে, আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে ৭২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ করা হবে বলে শিক্ষামন্ত্রী যে-প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, এই সব কারণে তা ধাক্কা খেতে পারে।