ছবি: পিটিআই।
নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের প্রতিবাদে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনের ধাক্কায় শুধু বাংলার উত্তরাংশ নয়, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গেও দক্ষিণের ট্রেন-যোগাযোগ বিপর্যস্ত। হাওড়া-খড়্গপুর শাখায় রবিবার কোনও অবরোধ না-হওয়া সত্ত্বেও ট্রেন না-পেয়ে বিক্ষোভ দেখান যাত্রীরা। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে দিল্লি থেকে ১০ কোম্পানি আধা-সামরিক বাহিনী (‘স্পেশাল রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স’ বা এসআরপিএফ) রওনা হয়েছিল শনিবারেই। এ দিন থেকেই তাদের রাজ্যের বিভিন্ন গোলমেলে জায়গায় পাঠানোর কাজ শুরু হয়েছে।
উত্তরবঙ্গে বিক্ষোভের জেরে অন্যান্য ট্রেনের সঙ্গে আটকে পড়া আগরতলা-শিয়ালদহ কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস এবং গুয়াহাটি-সেকেন্দরাবাদ স্পেশাল ট্রেন বাতিল করতে হয়েছে। বাতিল হয় গুয়াহাটি-বেঙ্গালুরু ক্যান্টনমেন্ট এক্সপ্রেসও। নিমতিতা, বাসদেবপুর হল্ট, সুজনিপাড়া হল্ট, জঙ্গিপুর, ধুলিয়ানগঙ্গা-সহ বিভিন্ন স্টেশনে ট্র্যাক, সিগন্যালিং ব্যবস্থা ছাড়াও প্যানেল রুমের ক্ষতি হয়েছে। মেরামতির পরে কখন ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে, তা নিয়ে সংশয়ে রেলকর্তারাও। সকালে মণিগ্রাম স্টেশনে আগুন লাগানোর চেষ্টা হয়। ট্রেন না-চললেও ভাঙচুরের চেষ্টা হয় তিলডাঙা স্টেশনে। রেল পুলিশ ও আরপিএফ আধ ঘণ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। বেলডাঙা স্টেশন এ দিনও ছিল ফাঁকা। লাইনে পড়ে আছে পোড়া টায়ার, স্টেশনের ভাঙা চেয়ার-টেবিল। একই চেহারা লালগোলা, আজিমগঞ্জ, জিয়াগঞ্জ, লালবাগ কোর্ট, বহরমপুর শহরের দু’টি স্টেশনের।
দুপুরের দিকে শিয়ালদহ-বজবজ শাখায় আক্রা-সন্তোষপুর স্টেশনে অবরোধ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। চালক এবং যাত্রীদের নামিয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। অবরোধকারীদের তাণ্ডবের জেরে ওই শাখায় ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বাতিল ট্রেন
• হাওড়া-সেকেন্দরাবাদ ফলকনুমা এক্সপ্রেস, হাওড়া-কন্যাকুমারী এক্সপ্রেস, সাঁতরাগাছি-পুদুচেরি স্পেশাল।
• তিস্তা-তোর্সা, দার্জিলিং মেল, পদাতিক এক্সপ্রেস, কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস-সহ উত্তরবঙ্গগামী প্রায় সব ট্রেন রবিবার বাতিল হয়। আজ, সোমবারেও কিছু ট্রেন বাতিলের আশঙ্কা আছে।
এ দিন হাওড়া-খড়্গপুর শাখায় আর অবরোধ হয়নি। কিন্তু রেকের অভাবে আজ, সোমবার হাওড়া-সেকেন্দরাবাদ ফলকনুমা, হাওড়া-কন্যাকুমারী এবং সাঁতরাগাছি-পুদুচেরি এক্সপ্রেস বাতিল করা হয়েছে। সকালের দিকে খড়্গপুরে স্টেশন ম্যানেজারের অফিসে বিক্ষোভ দেখান ফলকনুমা ও তিতলাগড়গামী ইস্পাত এক্সপ্রেসের যাত্রীরা। এমনিতে ওই দু’টি ট্রেন ছাড়ে হাওড়া থেকে। যাত্রীরা হাওড়ায় গিয়ে জানতে পারেন, ট্রেন দু’টি এ দিন খড়্গপুর থেকে ছাড়বে। তাঁরা লোকাল ট্রেন ধরে খড়্গপুরে পৌঁছন। কিন্তু সেখানে জানা যায়, ইস্পাত এক্সপ্রেস বাতিল হয়েছে এবং ফলকনুমা নির্দিষ্ট সময়েই খড়্গপুর থেকে ছেড়ে গিয়েছে। বিক্ষোভের মুখে ওই দু’টি ট্রেনের যাত্রীদের একই টিকিটে অন্য ট্রেনে যাওয়ার অনুমতির কথা লিখে দেন স্টেশন-কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: পেঁয়াজের আগুন না-নেভায় উদ্বেগ
শুক্র-শনিবার উলুবেড়িয়া-সহ বিভিন্ন স্টেশনে ভাঙচুর এবং আগুন লাগানোর ঘটনায় দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ১৫ কোটিরও বেশি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে রেলকর্তাদের দাবি। রেল সূত্রের খবর, পূর্ব রেলে ক্ষয়ক্ষতি দক্ষিণ-পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি।