ফাইল চিত্র।
আসনসংখ্যার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে লোকাল ট্রেন চালু করতে চাইছেন রেল কর্তৃপক্ষ। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আধিকারিকেরা। কবে থেকে, কী পদ্ধতিতে, কখন এবং ক’টি করে ট্রেন চালু হবে, তা চূড়ান্ত করতে আগামী বৃহস্পতিবার ফের দু’পক্ষের বৈঠক হবে। রাজ্য চাইছে, অফিসের সময়ে ট্রেনের সংখ্যা বেশি থাকুক। তাতে যাত্রীদের বড় অংশের সুবিধা হবে। ভিড়ও এড়ানো যাবে।
বেশ কয়েক মাস ধরেই রেল পরিষেবা নিয়ে যাত্রী বিক্ষোভের ঘটনা ঘটছে। রেলকর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট ট্রেনে উঠতে দেওয়ার দাবিতে রেল পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। শনিবারই এক প্রস্ত গোলমাল হয় হাওড়া স্টেশনে। তার পর সেখানে নিরাপত্তা বাড়ানো হলেও সোমবার সন্ধ্যায় ফের যাত্রীদের একাংশ বিশেষ ট্রেনে ওঠার দাবিতে হইচই শুরু করেন। তবে গোলমাল বেশি দূর গড়ায়নি।
কিন্তু রেল লাইন অবরোধে এ দিন উত্তাল ছিল হুগলি জেলা। বৈদ্যবাটি স্টেশনে অবরোধ চলে প্রায় ১২ ঘণ্টা। জি টি রোডও আটকানো হয়।
এই অবস্থায় গত শনিবার রেল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে বৈঠকে বসতে চেয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। এ দিন প্রথমে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন রেলকর্তারা। পরে তাঁরা সবিস্তার আলোচনা করেন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, স্বাস্থ্যসচিব, পরিবহণসচিব এবং পুলিশকর্তাদের সঙ্গে।
আরও পড়ুন: ডিসেম্বরে স্কুল-কলেজ খোলার ভাবনা, রাজ্যে ছাড় মিলল বেশ কিছু ক্ষেত্রে
একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের লোকাল ট্রেনে ১২০০ জন যাত্রী বসে যাতায়াত করতে পারেন। স্থির হয়েছে, তার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে পরিষেবা চালুর পরিকল্পনা করবে রেল। পূর্ব রেলের শিয়ালদহ শাখায় দৈনিক (রবিবার বাদে) ৯১৫টি ট্রেন চলাচল করে। হাওড়া শাখায় সেই সংখ্যা ৪০৭। এ দিনের বৈঠকে রেল কর্তারা জানিয়েছেন, প্রাথমিক ভাবে ওই সংখ্যার ১০-১৫% ট্রেন পরিষেবা শুরু করা হবে। কিছু দিন পরে পরিস্থিতি বুঝে তা ২৫%-এ পৌঁছবে। বৈঠকের পরে মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যাত্রীস্বার্থে ট্রেন পরিষেবা চালু করতে হলেও অতিমারির পরিস্থিতি এখনও রয়েছে। তাই ট্রেন চালানোর সঙ্গে কোভিডের সুরক্ষাবিধিগুলি মেনে চলা বিশেষ জরুরি। রেল কর্তৃপক্ষ গোটা প্রস্তুতি নিয়ে চিন্তাভাবনা করে চূড়ান্ত পরিকল্পনার জন্য আগামী ৫ নভেম্বর বিকেলে ফের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবেন।’’
রেল কর্তারা জানিয়েছেন, কোন রুটে কোন সময়ে ট্রেন চলবে, আগামী বৈঠকে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। ক’টি ট্রেন অল-স্টপ বা গ্যালপ হবে, তা-ও সে দিন চূড়ান্ত হবে।
এ দিনের বৈঠকে রাজ্য স্পষ্ট করে দিয়েছে, শারীরিক দূরত্ববিধি, থার্মাল স্ক্রিনিং, জীবাণুনাশের ব্যবস্থা, মাস্ক পরার মতো কোভিড-বিধি মানার পাশাপাশি স্টেশনে ঢোকা-বেরোনোর নির্দিষ্ট পদ্ধতি স্থির করতে হবে। সে ক্ষেত্রে রাজ্য পুলিশ রেল পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করবে।
আরও পড়ুন: সুস্থ রোগীর সংখ্যা ফের ৪ হাজারের বেশি, বাড়ল সংক্রমণের হারও
কিন্তু এই সব বিধি মেনে অর্ধেক যাত্রীসংখ্যা নিশ্চিত করে লোকাল ট্রেন চালানো বেশ কঠিন। ফলে কী ভাবে এ সব কিছু করা সম্ভব, ৫ তারিখের বৈঠকের আগে তা-ই খতিয়ে দেখবেন রেলকর্তারা। দেশের অন্যান্য কয়েকটি জায়গায় লোকাল রেল চলাচল করলেও সেখানে জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরাই সেই সব ট্রেনে চড়তে পারেন। কিন্তু প্রশাসনিক কর্তারা মনে করছেন, এ রাজ্যে এ রকম বিভাজন করা মুশকিল। তাই মেট্রোর মতো রেলের টিকিট-পদ্ধতিতে বড়সড় কোনও বদল হওয়ার সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। যদিও সব যাত্রীর জন্য ট্রেন চালালে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন রেলের আধিকারিকদের একাংশ।
রেল এবং রাজ্য প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রাথমিক ভাবে পরিষেবা শুরু হওয়ার পর কোথায় কেমন ভিড় হচ্ছে তা দেখে দফায় দফায় প্রয়োজনীয় রদবদল করা হতে পারে। লোকাল ট্রেন চালুর পরে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ে কি না, সে দিকেও নজর রাখা হবে।
লোকাল ট্রেনের সংখ্যা বাড়লে কলকাতা মেট্রোর দুই প্রান্তিক স্টেশন দমদম এবং কবি সুভাষে যাত্রী সংখ্যার চাপ বাড়বে বলে মনে করছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। ফলে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন তাঁরাও। দূরত্ব বিধি মানতে মেট্রোতে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর কথা ভাবছেন তাঁরা। এ দিন লোকাল ট্রেন চালানোর দিনক্ষণ সুনির্দিষ্ট ভাবে ঘোষণা না-করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর। সংগঠনের তরফে রঞ্জিত শূর বলেন, ‘‘কম ট্রেন চালানো সমাধান নয়। বরং ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো জরুরি। এ ছাড়া, হকারদের যেন উচ্ছেদ না করা হয়।’’