Union Budget 2023

রেলের দাবি, ‘ঐতিহাসিক’ বরাদ্দ, নথি বলছে, বাংলায় বহু প্রকল্পে মিলেছে মাত্র এক হাজার টাকা

এ বারের বাজেটে যে মন্ত্রকের সরকারি বরাদ্দ সবথেকে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে তা হল রেল মন্ত্রক। আজ রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, রেলের অর্থের বড় অংশ খরচ হবে পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতে।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:৪৮
Share:

রেল বাজেটে বাংলার বঞ্চনা নিয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। প্রতীকী ছবি।

রেলের দাবি, ঐতিহাসিক বাজেট বরাদ্দ পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। কিন্তু বাজেট নথি বলছে, একমাত্র মেট্রো রেল ও হাতে গোনা কিছু প্রকল্প বাদ দিলে পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ প্রকল্পের বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে নামমাত্র। নতুন কোনও প্রকল্প ঘোষণা হয়নি রাজ্যের জন্য। অতীতে ঘোষিত অধিকাংশ বড় মাপের প্রকল্প যে নামমাত্র অর্থ বরাদ্দ করে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। সব মিলিয়ে রেল বাজেটে বাংলার বঞ্চনা নিয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

Advertisement

এ বারের বাজেটে যে মন্ত্রকের সরকারি বরাদ্দ সবথেকে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে তা হল রেল মন্ত্রক। আজ রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, রেলের অর্থের বড় অংশ খরচ হবে পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতে। বাজেটে নতুন লাইন পাতার সঙ্গেই জোর দেওয়া হয়েছে ডাবলিং ও বিদ্যুদয়নের উপরে। গত অর্থবর্ষে নতুন লাইন, ডাবলিং ও গেজ পরিবর্তনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫০০ কিলোমিটার। এ বার তা বেড়ে হয়েছে ৩৫০০ কিলোমিটার। আগামী অর্থবর্ষে যাত্রিবাহী কোচের উৎপাদন কিছুটা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল। কিন্তু যে হেতু রেলের মূল আয়ের উৎস পণ্য পরিবহণ, তাই ওয়াগন উৎপাদন এক ধাক্কায় ২১ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২৬ হাজার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক এ বার রেলকে ২.৪০ লক্ষ কোটি টাকা সাহায্য দেওয়ায় বাজার থেকে অর্থ ধার নেওয়া এক ধাক্কায় অনেকটাই কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল। গত বছর যেখানে বাজার থেকে ৮১,৭০০ কোটি টাকা ধার নিয়েছিল রেল, সেখানে এ বছর তা কমিয়ে আনা হয়েছে ১৭ হাজারে। রেলকর্তাদের দাবি, এর ফলে আগামী দিনে সুদ হিসেবে কম অর্থ গুনতে হবে রেলকে।

আগামী এক বছর দেশে আরও বেশি সংখ্যক বন্দে ভারত ট্রেন চালানোর পাশাপাশি ছোট শহরগুলির মধ্যে যোগাযোগের জন্য বন্দে মেট্রো ট্রেন চালানো হবে বলে জানিয়েছেন বৈষ্ণব। আগামী এক বছরের মধ্যে বন্দে মেট্রো ট্রেন পরীক্ষামূলক ভাবে চালু হয়ে যাবে বলে জানান তিনি। একই সঙ্গে আগামী দিনে টয় ট্রেনের রুটগুলিতে হাইড্রোজেন ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রেলমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য হল প্রথমে দার্জিলিং-এ ওই হাইড্রোজেন ট্রেন চালানো।’’ রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের ৯৩টি স্টেশনের চলতি অর্থবর্ষে আধুনিকীকরণ করা হবে। এ ছাড়া প্রতিটি স্টেশন পিছু একটি করে পণ্যকে দেশীয় বাজারে পরিচিতি দেওয়ার যে কর্মসূচি অতীতে হাতে নেওয়া হয়েছে তাতে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভাল সাড়া পাওয়া গিয়েছে। রেলের হিসাবে রাজ্যের ৭৪টি পণ্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে সক্ষম হয়েছে।

Advertisement

রেল মন্ত্রক জানিয়েছে, ইউপিএ সরকারের আমলে গড়ে পশ্চিমবঙ্গের জন্য ৪৩৮০ কোটি টাকার কাছাকাছি বরাদ্দ করা হত। সেখানে এ বছরের বাজেটে পশ্চিমবঙ্গের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১১,৯৭০ কোটি টাকা। বৈষ্ণবের দাবি, ‘‘এই পরিমাণ বিনিয়োগ আগে হয়নি পশ্চিমবঙ্গে।’’ পরিসংখ্যান বলছে, রাজ্যের মেট্রো প্রকল্পগুলির ক্ষেত্রে বরাদ্দ অনেকটাই বাড়়লেও, বাকি ক্ষেত্রগুলিতে বরাদ্দ বেড়েছে নামমাত্র। বিশেষ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন যে সব প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন সেগুলি কেবলমাত্র এক হাজার টাকা দিয়ে কোনও ভাবে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। রেল মন্ত্রকের ব্যাখ্যা, সব রাজ্যেই এমন কিছু প্রকল্প রয়েছে যেগুলি রাজনৈতিক ফায়দার কথা ভেবে নেওয়া হয়েছে। সেগুলি যাতে একেবারে বন্ধ না হয়ে যায় সেই লক্ষ্যেই এক হাজার টাকা করে বরাদ্দ করা হয়েছে। পরিবর্তে যে প্রকল্প থেকে খরচ আগামী দিনে উঠে আসবে সেগুলিতে বিনিয়োগ বেশি করা হয়েছে। রেলমন্ত্রী বলেন, ‘‘রেলের হাতে টাকা কম। তাই সব দিক বিবেচনা করেই অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে।’’ যদিও বিরোধীদের বক্তব্য, রেলের সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। কেবল লাভ দেখতে গেলে অনুন্নত এলাকাগুলি কখনই তা হলে রেলের মানচিত্রে শামিল হতে পারবে না।

রাজ্যের প্রকল্পে নামমাত্র বিনিয়োগের প্রশ্নে রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রেলমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘জমি অধিগ্রহণ, কাজের অনুমতি, আইনশৃঙ্খলা দেখার দায়িত্ব রাজ্যের। তাই অর্থ বরাদ্দ করার পিছনে সেই বিষয়গুলিও খতিয়ে দেখা হয়।’’ রাজ্যের রেল প্রকল্পগুলির অগ্রগতির ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের অসহযোগিতার বিষয়টি প্রচ্ছন্ন ভাবে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন তিনি।

রেলের ওই বাজেট পশ্চিমবঙ্গের প্রতি কেন্দ্রের ধারাবাহিক বঞ্চনার প্রতিচ্ছবি বলে সরব হয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। তিনি বলেন, ‘‘বাস্তবে বিনিয়োগ বেড়েছে নামমাত্র। অধিকাংশ প্রকল্পে ১ হাজার টাকা ধার্য করে প্রকল্পগুলিকে কেবল দীর্ঘ করা হচ্ছে। করোনার কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া বয়স্কদের টিকিটে যে ছাড় উঠে গিয়েছিল তা কবে থেকে ফের চালু হবে, সেটা পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের মানুষ এই সরকারের কাছে জানতে চাইছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement