বর্ধমানের সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র।
কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেট ঘোষণার দিনে শেয়ার বাজারে পতনের জেরে তৈরি হয়েছিল সরকার পড়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি। যাদের শেয়ারের দাম কমছিল তাদেরকে টাকা দিতে বলা হয়েছিল ফোন করে। বর্ধমানের সভা থেকে কেন্দ্রীয় সরকারকে কড়া আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর থেকে গত কয়েক দিন ধরে নামছে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের দর। এই আবহেই বৃহস্পতিবার বর্ধমানের সভায় ওই মন্তব্য করেন মমতা। অবশ্য আদানি গোষ্ঠীর নাম উচ্চারণ করেননি মুখ্যমন্ত্রী।
সম্প্রতি আমেরিকার লগ্নি সংক্রান্ত গবেষণাকারী সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেই গবেষণাপত্রে আদানিদের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ আনা হয়েছে। সেই বিতর্ক প্রকাশ্যে আসার পর থেকে গত কয়েক দিন ধরেই শেয়ার বাজারে বিপর্যয়ের মুখে আদানি গোষ্ঠী। এমনকি কেন্দ্রীয় বাজেট পেশের দিনে নতুন শেয়ার ছাড়ার প্রক্রিয়া (এফপিও)-ও স্থগিত করেছে তারা। এই আবহে বৃহস্পতিবার মমতা বলেন, ‘‘কাল তো প্রায় সরকার পড়ে যাচ্ছিল। কেন পড়ে যাচ্ছিল? শেয়ার বাজারে ধস নেমেছিল। এ বার কাউকে কাউকে রিকোয়েস্ট করে, আমরা জানি তারা কারা। নামগুলি বলে আর তাঁদের অবস্থা দুর্বিষহ করতে চাই না। ৬-৮ জনকে ফোন করে বলেছে, কাউকে ২০ হাজার কোটি টাকা দাও। মানে যাদের শেয়ার পড়ে যাচ্ছিল তাদেরকে দাও। কাউকে বলেছে ৩০ হাজার কোটি টাকা দাও। কাউকে বলেছে ১০ হাজার কোটি টাকা দাও। এই দিয়ে সরকার চলে যদি পরিকল্পনা না থাকে?’’
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বাজেটকে বুধবারই ‘অমাবস্যার বাজেট’ বলে খোঁচা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার তিনি কটাক্ষ করেছেন নয়া আয়কর কাঠামো নিয়ে। তাঁর মতে, ২ লক্ষ টাকা ছাড়ের ঘোষণা করে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে আড়াই লক্ষ টাকা কেটে নেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে নয়া কর কাঠামোয়। তাঁর মতে, এটা ছাড় নয়, ‘মাছের তেলে মাছ ভেজেছে’ কেন্দ্রীয় সরকার। তাঁর কথায়, নয়া কর কাঠামো আসলে ‘কথার কারসাজি’। বিজেপি ‘মিথ্যে স্বপ্ন’ দেখিয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। কেন এই মন্তব্য তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, ‘‘দুই বাড়াল আড়াই কাটল। ভাবছে চালাকি দিয়ে সব কিছু হয়। যাঁরা আয়কর দেন ৮০ সিসি ধারায় যে দেড় লক্ষ টাকা ছাড় পেতেন তা নতুন কাঠামোয় পাবেন না। সেটা উঠিয়ে দিল। মেডিক্যাল ইনসিওরেন্সে ৫০ হাজার টাকা ছাড়া পাবেন না। এ ছাড়াও ন্যাশনাল পেনশন স্কিমেও ছাড় পাবেন না।’’
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘বাজেট ভাল হয়েছে বলে দিদি দুঃস্বপ্ন দেখছেন। আর তাতেই সরকার পড়ে যাওয়া দেখেছেন। উল্টোপাল্টা বলে মানুষকে বেশি দিন ভুল বোঝানো সম্ভব নয়। যে সরকার পড়ে যাচ্ছিল বলছেন, তার সামনেই তো হাত জোড় করে দাঁড়াতে হয়েছিল।’’ দিলীপের মতে, ‘‘এত ভাল বাজেট হয়েছে যে, সকলে ধন্য ধন্য করছেন। তা দেখে উনি বিপদে পড়ে গিয়েছেন। রাগে এ সব বলছেন।’’