ফাইল চিত্র।
প্রকৃতির গতিপ্রকৃতি কত রহস্যময় হতে পারে, এ বারের বর্ষা তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। যেখানে সাধারণত বর্ষণ হয় নামমাত্র, সেই পশ্চিম রাজস্থানের মরু এলাকায় এ বার চলছে অতিবৃষ্টি! অথচ ভরা শ্রাবণেও নদীমাতৃক গাঙ্গেয় বঙ্গে জোরালো বর্ষণের দেখা নেই। মৌসম ভবনের হিসাব বলছে, ১ জুন থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত গাঙ্গেয় বঙ্গে বৃষ্টির ঘাটতি ৪৬%। কিন্তু পশ্চিম রাজস্থানে ৮৯% শতাংশ উদ্বৃত্ত বৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ব জুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের যে-কথা পরিবেশ বিজ্ঞানীরা কয়েক বছর ধরে বলে চলেছেন, এটা তারই প্রভাব কি না, তা নিয়ে চর্চা চলছে। প্রশ্ন উঠছে, শ্রাবণ মাসের অর্ধেক পেরিয়ে গিয়েছে। বর্ষার যা হালচাল, তাতে এ বার গাঙ্গেয় বঙ্গে বর্ষণ-ঘাটতি আদৌ পূরণ হবে কি?
বৃষ্টি যে হচ্ছে না, তা নয়। কয়েক দিন ধরে কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় বঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় কমবেশি বৃষ্টি হচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই তুমুল বৃষ্টির মুখে পড়েছেন কলকাতাবাসী। কিন্তু ঘাটতি মিটছে কই! আবহবিজ্ঞানীদের অনেকেই বলছেন, এ বার বেশির ভাগ সময়ে যে-বৃষ্টি হচ্ছে, তা বর্ষার বৃষ্টিই নয়। তাপমাত্রার হেরফেরে এবং বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্যের ফলে স্থানীয় ভাবে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হচ্ছে। তা থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে।
কিন্তু নিম্নচাপের প্রভাবে একটানা যে-বৃষ্টি হয়ে থাকে, তার দেখা মিলছে না গাঙ্গেয় বঙ্গে। পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে এ বার বর্ষায় নিম্নচাপের দেখাই পাওয়া যায়নি। অন্য দিকে, পশ্চিম ভারতের নিম্নচাপের প্রভাব পড়েছে রাজস্থানে। মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকা সত্ত্বেও নিম্নচাপের এমন স্বভাববিরুদ্ধ আচরণ কৃষিকাজের যে-সমস্যা ঘনিয়ে তুলছে, সেটা চিন্তার বিষয় নিশ্চয়ই। নিম্নচাপ প্রকৃতির কোন বিচিত্র নির্দেশে এমন বিপরীত আচরণ করছে, সেটাও প্রবল মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে আবহ ও পরিবেশ বিজ্ঞানী শিবিরের।
গাঙ্গেয় বঙ্গে বৃষ্টির এমন দুর্দশা সাম্প্রতিক কালে দেখা যায়নি। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের অনেকে অবশ্য বলছেন, মরু এলাকায় কয়েক বছর ধরেই অতি বৃষ্টি হচ্ছে। তাই সেটাকে ঠিক বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলা যায় না। বরং জলবায়ু বদলের সঙ্গে তা সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে।
প্রশ্ন উঠছে, গাঙ্গেয় বঙ্গে কি এ বার চেনা বর্ষা মিলবে না? দ্বিতীয় ঋতুর অর্ধেক পেরিয়ে গেলেও এই অঞ্চলে বর্ষা কবে চেনা ছন্দে মেতে উঠবে, তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা রীতিমতো ধন্দে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলছেন, “আগামী দিন তিনেকের মধ্যে নিম্নচাপ তৈরির কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তবে সপ্তাহের শেষে বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে। তার বড় ধরনের প্রভাব গাঙ্গেয় বঙ্গে পড়বে কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’