১৬ বছর পর হাই কোর্টের নির্দেশে ক্ষতিপূরণ পাবেন বৃদ্ধা মা। — নিজস্ব চিত্র।
১৬ বছর আগে বাসে চাপা পড়ে এক মাত্র সন্তানের মৃত্যু হয়েছিল। ছেলের মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ ও বিচারের দাবিতে আদালতের দিকে তাকিয়ে ছিলেন বৃদ্ধা মা। অবশেষে মায়ের ডাকে সাড়া দিল কলকাতা হাই কোর্ট। উচ্চ আদালত বাসের বিমা সংস্থাকে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিল। ঘটনার প্রায় দেড় দশক পরে বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তের একক বেঞ্চ নির্দেশ দিল, মাকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ২৬ লক্ষ টাকার পাশাপাশি, এই টাকার ৬ শতাংশ হারে ১৫ বছরের সুদ দিতে হবে।
বেলগাছিয়ার বাসিন্দা ৩০ বছরের রাজেশ বাল্মীকি পূর্ব রেলের কর্মী ছিলেন। বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধা মা, স্ত্রী এবং এক শিশু সন্তান। ২০০৬ সালের নভেম্বরে রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ কাজ থেকে বাসে করে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। তাঁর বেলগাছিয়ার দত্তবাগান মোড়ে নামার কথা। রাজেশের পরিবারের দাবি, বেলগাছিয়া রোড ধরে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আসছিল বাসটি। দত্তবাগান মোড়ের কাছে বাসটি আসতেই নির্দিষ্ট বাসস্টপে নামটা চেষ্টা করেন রাজেশ। কিন্তু বাসটিকে খুব বেপরোয়া ভাবে চালানো হচ্ছিল এবং তার গতি অনেক বেশি ছিল। ফলে নামার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তায় পড়ে যান রাজেশ। বাসের পিছনের চাকা তাঁকে পিষে দেয়। গুরুতর জখম অবস্থায় স্থানীয়রা রাজেশকে আরজি কর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এই ঘটনায় উল্টোডাঙা থানায় অভিযোগ দায়ের করে রাজেশের পরিবার। এক মাত্র রোজগেরে ছেলের মৃত্যুতে সংসার কী ভাবে চলবে এই আশঙ্কায় দিন কাটায় মা। পরে ক্ষতিপূরণের দাবিতে আদালতের দ্বারস্থ হন মা-সহ পরিবার। দীর্ঘ দিন শুনানির পর নিম্ন আদালত তাদের আবেদন খারিজ করে দেয়। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে যান তাঁরা। উচ্চ আদালতে ওই পরিবারের দাবি মানতে অস্বীকার করে বাসের বিমা সংস্থাটি। পরিবার জানায়, তারা প্রথমে কোনও ক্ষতিপূরণ দিতে চায়নি। এমনকি চালকের ভুল ছিল না বলেও দাবি করে বিমা সংস্থাটি।
বিচারপতি সামন্তের পর্যবেক্ষণ, এই অকালমৃত্যুর ঘটনায় পরিবারটিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত। বাসটি ঠিক মতো চালানো হয়নি সে বিষয়ে সাক্ষী দিয়েছেন অন্য যাত্রীরাও। ফলে ক্ষতিপূরণ ওই পরিবারের প্রাপ্য। আইন বা আদালত তা থেকে বঞ্চিত করবে না। বিচারপতির রায়, রাজেশ জীবিত অবস্থায় ১১ হাজার টাকা বেতন পেতেন। ফলে তাঁর আয়ের সঙ্গে অঙ্ক মিলিয়ে ২৫ লক্ষ ৮৮ হাজার ৫৩৩ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবে পরিবারটি। এ ছাড়া এই টাকার উপর ২০০৭ সাল থেকে ছ’শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। বিচারপতি জানান, ছয় সপ্তাহের মধ্যে বিমা সংস্থাকে এই টাকা হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে জমা দিতে হবে। উপযুক্ত নথি দেখিয়ে সেখান থেকে পুরো অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে পরিবারটি।