বেচারাম মান্না। ফাইল চিত্র
সিঙ্গুর নিয়ে বিতর্কের মোকাবিলায় এ বার বেচারাম মান্নাকে ময়দানে নামাল তৃণমূল। সিঙ্গুর আন্দোলন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে রাজ্য রাজনীতিতে উঠে এসেছিলেন বেচারাম। বর্তমানে হরিপালের তৃণমূল বিধায়ক তিনি। মমতার প্রথম সরকারের শেষ দিকে কৃষিমন্ত্রীও করা হয়েছিল তাঁকে। তিনিই এ বার মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা নিয়ে প্রকাশ্যে বার্তা দিলেন। কটাক্ষ করলেন বিরোধীদের।
শুক্রবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন সিঙ্গুরে ১১ একর জমির উপর এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রি তৈরির করা হবে। তারপরেই বাম-কংগ্রেস-সহ বিজেপি তাঁর শিল্প নীতিকে আক্রমণ করে। সিঙ্গুর থেকে টাটাদের কারখানা চলে যাওয়ার জন্য দায়ী করা হয় রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীকে। শনিবার সেই সব আক্রমণের জবাব দেন তৃণমূল কৃষক ও খেত মজুর সংগঠনের সভাপতি বেচারাম। এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গুরে ১১ একর জমির মধ্যে কৃষিজ শিল্পের হাবের ঘোষণা করে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। তার জন্য আমরা সব সিঙ্গুরবাসীর পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ২০০৬ সাল থেকে তিনি সিঙ্গুরের মানুষের পাশে রয়েছেন। ক্ষমতায় আসার পর তিনি সিঙ্গুরের অনেক উন্নয়ন করেছেন। নতুন এই ঘোষণা করে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে এখনও তিনি সিঙ্গুরের পাশেই রয়েছেন। বিরোধীরা থাকে শিল্প-বিরোধী তকমা লাগানোর চেষ্টা করছে। তাঁরা আসলে নবিশ-শিশু।’’
এরপরেই সিঙ্গুর চুক্তির কথা তুলে ধরে বেচারামের বক্তব্য, ‘‘২০০৬ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, নিরুপম সেন এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে সেই সময়ের রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গাঁধীর মধ্যস্থতায় একটি চুক্তি হয়। সেই চুক্তি প্রসঙ্গ যারা জানবেন, তাঁরা বুঝবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তৃণমূল শিল্প-বিরোধী নয়।’’
সিঙ্গুরে শিল্প স্থাপনের ব্যর্থতার দায় তৎকালীন শাসকদল সিপিএমের ওপর চাপিয়ে বেচারাম বলেছেন, ‘‘তখন যদি সিপিএমের সদিচ্ছা থাকত তাহলে তারা শিল্প করতে পারত।’’ সিঙ্গুর আন্দোলনের দাবিগুলিকে স্মরণ করিয়ে হরিপালের বিধায়ক বলেন, ‘‘এখানে আমাদের দাবি ছিল কৃষকদের জমি জোর করে নেওয়া যাবে না। ৩,৪ ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না। কিন্তু সিপিএম টাটাদের নিয়ে গায়ের জোরে শিল্প করতে চেয়েছিল, জমি দখল করেছিল। তাই প্রতিবাদ-প্রতিরোধ হয়েছিল।’’
সিঙ্গুর আন্দোলন নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশের কথা উল্লেখ করে বেচারামের বক্তব্য, ‘‘এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল। কোর্টের নির্দেশের ভিত্তিতে মুখ্যমন্ত্রী জমি ফিরিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে কারখানা পরিষ্কার করার কাজ করেছিলেন। বিরোধীদের এমন অভিযোগ মানুষ বিশ্বাস করবে না।’’ বামেদের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে সিঙ্গুর আন্দোলনের এই নেতা বলেন, ‘‘মমতা শিল্প বিরোধী নন। ৩৪ বছরে বামেরা বিদেশী লগ্নির আনতে পারেনি। মুখ্যমন্ত্রী সাড়ে ৯ বছরে তার থেকে অনেক বেশি লগ্নি নিয়ে এসেছেন। এবং এখানে কারখানা বেড়েছে।’’ সুর চড়িয়ে বেচারাম এর পর বলেছেন, ‘‘বিরোধীদের চোখে ছানি পড়েছে। ওদের চোখে যদি চশমা এঁটে দেওয়া যায়, তাহলে ওরা এসব দেখতে পাবে।’’
আরও পড়ুন: জেদ ধরে আছেন মোদী, তাই কৃষক আন্দোলন মিটছে না, তোপ অধীরের
আরও পড়ুন: মাথাভাঙায় বিজেপির মিছিলে হামলা, বোমাবাজি, বিজেপি-তৃণমূল চাপানউতর