পরিবেশবান্ধব আতশবাজি ‘ক্লাস্টার’ করার কাজ শুরু করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। —প্রতীকী ছবি।
এগরার বেআইনি আতশবাজি কারখানায় বিস্ফোরণের পর একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য সরকার। সেই পদক্ষেপের অন্যতম সিদ্ধান্ত রাজ্যে পরিবেশবান্ধব আতশবাজি ‘ক্লাস্টার’ করা। ইতিমধ্যে সেই কাজ শুরু করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। ঠিক হয়েছে, নাগপুর থেকে পরিবেশবান্ধব আতশবাজি তৈরির জন্য বিশেষ প্রশিক্ষকদের নিয়ে আসা হবে। তাঁরাই আগামী দু’মাস জেলায় জেলায় গিয়ে সরকারি তত্ত্বাবধানে পরিবেশবান্ধব সবুজ আতশবাজি তৈরির প্রশিক্ষণ দেবেন। শনিবার এগরায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, ‘‘গ্রিন ক্র্যাকার, যা মানুষের কাজে লাগে, অথচ জীবনে ক্ষতিকারক নয়, সেই রকম ক্লাস্টার তৈরি করা হবে। জনবসতি থেকে একটু দূরে আমরা করে দেব।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। আমরা মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে কমিটি গড়েছি। বেআইনি বাজি কারখানা রুখতে তৈরি হবে পরিবেশবান্ধব বাজি তৈরির ক্লাস্টার।’’
তার আগে গত সপ্তাহে এই বিষয়ে উদ্যোগী হতে নির্দেশ দেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে। বিভিন্ন দফতরের প্রধান সচিবদের নিয়ে একটি কমিটিও গঠন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। গত বৃহস্পতিবার এই সংক্রান্ত বিষয় ওই কমিটি একটি বৈঠক করে। পরে পশ্চিমবঙ্গের আতশবাজি ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও বৈঠক হয় মুখ্যসচিবের। সেখানেই ঠিক হয়েছে আগামী জুন এবং জুলাই মাস ধরে রাজ্য জুড়ে সরকারি তত্ত্বাবধানে পরিবেশবান্ধব সবুজ আতশবাজি তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। নবান্ন সূত্রে খবর, মাত্র কয়েক দিনে ৩০ হাজার মানুষ এই প্রশিক্ষণ নিতে আবেদন জানিয়েছে। প্রত্যেক জেলার ক্ষেত্রে একটি করে কমিটি তৈরি হয়েছে, মুখ্যসচিবের নেতৃত্বাধীন সেই কমিটিতে রাখা হয়েছে রাজ্য পুলিশের ডিজি, দমকল সচিব পরিবেশ সচিব ও ক্ষুদ্র কুটির শিল্প দফতরের সচিবকে। জেলাভিত্তিক এই কমিটিতে জুড়ে দেওয়া হবে জেলাশাসকদের। মূলত এই কমিটির অধীনেই জেলাভিত্তিক প্রশিক্ষণ শিবির হবে।
নাগপুর থেকে প্রশিক্ষণ দিতে আসবেন ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এনইইআরআই)-এর সদস্যরা। আপাতত ঠিক হয়েছে, জাতীয় স্তরের এই সংস্থার সদস্যরা আগামী দু’মাস পশ্চিমবঙ্গে থেকে প্রশিক্ষণ দেবেন। তবে আতশবাজি ব্যবসায়ীদের দাবি, কমপক্ষে ১০ লক্ষ মানুষ আতশবাজি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হতে চান। তাই এই প্রশিক্ষণ শিবিরের মেয়াদ বাড়িয়ে ছ’মাস করা হোক। আগামী দিনে যে তারা এই সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানাবেন সেই বিষয় নিশ্চিত জানিয়েছেন সারা বাংলা আতসবাজি উন্নয়ন সমিতি সভাপতি বাবলা রায়। তাঁর কথায়, ‘‘সরকারি উদ্যোগে এমন সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে, এটা অত্যন্ত ভাল বিষয়। তাই বহু অল্পবয়সি যুবক-যুবতী এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছেন। তাই পরিবেশবান্ধব বাজি তৈরির প্রশিক্ষণ শিবিরের মেয়াদ যাতে বাড়ানো হয়, সেই বিষয়ে আমরা রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানাব।’’ আগামী উৎসবের মরশুমে যাতে আতশবাজির বাজারে খরা না পড়ে, সেই বিষয়টিও নজরে রাখছেন আতশবাজি ব্যবসায়ীরা।