সংগঠন বেহাল। নেতৃত্বের সঙ্কট। ভাঁড়ারে কিছু নেই। লোকসভা ভোটে ভাগের আসন থাকবে কি না, তা-ও নিশ্চিত নয়! এমন দুর্দিনে কলকাতা থেকে দূরে বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় গিয়ে রাজ্য সম্মেলন সারতে চলেছে দুই বাম শরিক। তা-ও যথেষ্টই কাঠখ়ড় পুড়িয়ে। অবশিষ্ট সংগঠনকে লোকসভা ভোটের আগে চাঙ্গা করার মরিয়া তাগিদই তাদের পাথেয়।
পুজোর মরসুমের পরেই আগামী ২ থেকে ৪ নভেম্বর বাঁকুড়ায় হতে চলেছে আরএসপি-র রাজ্য সম্মেলন। আর এক বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্মেলন পুরুলিয়ায় আগামী ২৩ থেকে ২৫ নভেম্বর। বাঁকুড়ায় পুরসভা পরিচালিত রবীন্দ্র সদন ভাড়া নিতে চেয়েও এক দিনের বেশি পায়নি আরএসপি। অগত্যা তারা সম্মেলন করছে বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি সিনেমা হল ভাড়া করে। সম্মেলন উপলক্ষে তাদের সমাবেশ হবে বাঁকুড়া বঙ্গ বিদ্যালয়ের মাঠে। ফ ব-ও পুরুলিয়ায় রবীন্দ্র ভবনের প্রতীক্ষায়। শেষ পর্যন্ত না পেলে তাদের সম্মেলন হবে একটি সাহিত্য মন্দিরের হলে।
কেন বাঁকুড়া, পুরুলিয়া? দুই বাম দলের নেতৃত্বেরই যুক্তি, অন্যান্য জায়গার চেয়ে সেখানে সম্মেলন আয়োজনের খরচ এখনও তুলনায় কম। জমায়েত করার মতো কর্মী-সমর্থকও দু’দলের কিছু আছেন সেখানে। রাজনৈতিক বিন্যাসে রাঢ়বঙ্গের ওই দুই জেলাতেই তৃণমূলের প্রবল প্রতিপক্ষ হিসেবে উঠে এসেছে বিজেপি। লোকসভা ভোটের আগে সেখানে লাল পতাকার সমাবেশ করে বামেদের পালে যতটুকু হাওয়া টানা যায়, সেই চেষ্টাও আছে দুই শরিক নেতৃত্বের।
লোকসভা ভোট নিয়ে বামফ্রন্টের অন্দরেই দুই শরিকের অবশ্য বিড়ম্বনা প্রবল। সদ্য হয়ে যাওয়া পুরুলিয়া জেলা সম্মেলনে ফ ব-র প্রতিনিধিদের বড় অংশ দাবি তুলেছেন, পুরুলিয়া লোকসভা আসনে তাঁরাই লড়বেন— কথা দিতে হবে দলের রাজ্য নেতৃত্বকে! অথচ বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতা হলে কংগ্রেস ওই আসনের দাবিদার হতেই পারে। এমতাবস্থায় কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও ভাবেই সমঝোতা চলবে না, এই মর্মে প্রস্তাব আসতে পারে ফ ব-র রাজ্য সম্মেলনে। আবার কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা হলে অধীর চৌধুরীর জন্য বহরমপুর ছেড়ে দিতে হবে, এটাও প্রায় আরএসপি-র ভবিতব্য। কংগ্রেস-বিরোধী কোনও কট্টর অবস্থান না নিলেও লোকসভা ভোটের আগে কর্মী-সমর্থকদের ধরে রাখা আরএসপি-র কাছেও বিরাট মাথাব্যথা।
সম্মেলনে দু’দলেই অবশ্য নেতৃত্ব বদলের ইঙ্গিত এখনও পর্যন্ত নেই। সমস্যা মেনে নিয়েও দু’দলের নেতৃত্বেরই দাবি, তাঁরা লড়াই চালাচ্ছেন। ফ ব-র রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে নিয়ে আবেগ ও উৎসাহ যত দিন থাকবে, ফ ব দলটার অস্তিত্বও থাকবে।’’ আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মনোজ ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘অস্তিত্বের সঙ্কট ঠিকই। আমাদের অস্তিত্বহীন করে দেওয়ার সব রকম চেষ্টাও আছে। এর মধ্যেই লড়াই করছি।’’