প্রতীকী ছবি।
তৃণমূলের বিপুল ভোটে জয়ের পরে তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হওয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে উপনির্বাচনে প্রার্থী দিতে আগ্রহী ছিলেন না অধীর চৌধুরী। তাঁর সেই মনোভাবের কথা আগেই স্পষ্ট করেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। কিন্তু পরিস্থিতির গেরোয় পড়ে এখন ভবানীপুর নিয়ে ফের ভাবনা-চিন্তা করতে হচ্ছে কংগ্রেসকে। কারণ, ভবানীপুর ছেড়ে দিলে সেপ্টেম্বরের শেষে তিন কেন্দ্রের ভোটে কোথাও ময়দানে থাকা হবে না কংগ্রেসের!
ভবানীপুর কেন্দ্রে উপনির্বাচনের সঙ্গেই শমসেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুরে স্থগিত থাকা বিধানসভা ভোট হবে ৩০ সেপ্টেম্বর। কিন্তু এক কালের শক্ত ঘাঁটি মুর্শিদাবাদ জেলার দুই কেন্দ্রে এ বার সরাসরি ময়দানে নেই কংগ্রেস। দুই কেন্দ্রেই প্রার্থীদের মৃত্যুর পরে বিকল্প প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। তখন হয়ে যাওয়া মনোনয়নের ভিত্তিতেই এ বার ভোট করাবে নির্বাচন কমিশন। জোটের ভাগে জঙ্গিপুর আসনটি ছাড়া হয়েছিল বাম শরিক আরএসপি-কে। প্রার্থী প্রদীপ নন্দীর মৃত্যুর পরে জঙ্গিপুরে মনোনয়ন দিয়েছিলেন প্রাক্তন আরএসপি বিধায়ক জানে আলম মিঁয়া। শমসেরগঞ্জে মৃত প্রার্থীর স্ত্রীকে নতুন প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছিল কংগ্রেস। তিনি দাঁড়াতে রাজি না হওয়ায় প্রার্থী করা হয় জইদুর রহমানকে। যিনি আবার সম্পর্কে তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমানের ভাই। জইদুরও কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এখন আর নতুন প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ নেই। জোটে রফা না হওয়ায় শমসেরগঞ্জে অবশ্য সিপিএমের প্রার্থী আছেন মোদাস্সর হোসেন।
এমতাবস্থায় কংগ্রসের কৌশল ঠিক করতে আজ, সোমবার বিধান ভবনে বৈঠক ডেকেছেন প্রদেশ সভাপতি অধীরবাবু। অভিজ্ঞ কংগ্রেস নেতাদের ডাকা হয়েছে আলোচনায়। অন্য দিকে, সিপিএমের তরফে সূর্যকান্ত মিশ্র ও বিমান বসু কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে ভবানীপুর নিয়ে তাঁদের অবস্থান জানতে চেয়েছেন। কংগ্রেস শেষ পর্যন্ত প্রার্থী না দিলে ভবানীপুরে বামেদের প্রার্থী দেওয়ার কথা ভাবতে হবে। কংগ্রেসের এক বর্যীয়ান নেতার বক্তব্য, ‘‘জঙ্গিপুর এবং শমসেরগঞ্জে আমাদের প্রার্থী থাকছে না। ভবানীপুরেও প্রার্থী না থাকলে কোথাওই আমরা থাকব না। সব দিকই ভেবে দেখা দরকার।’’
অধীরবাবু অবশ্য জানিয়ে রেখেছেন, তৃণমূলের সঙ্গে কোনও সমঝোতা বা জোটের কথা তিনি বলছেন না। যিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে গিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে আর উপনির্বাচনে প্রার্থী না দেওয়ার কথা বলেছেন শুধু। তবে পরিস্থিতির ফেরে গোটা বিষয়টিই এখন অন্য মাত্রা পেয়েছে। কংগ্রেসের আর এক প্রবীণ নেতা আবার বলছেন, ‘‘প্রদেশ সভাপতি আগেই স্পষ্ট বলেছেন ভবানীপুরে প্রার্থী দেওয়া উচিত নয়। এখন আর অন্যদের মত নিয়ে কী হবে! এআইসিসি-ও বিভ্রান্ত হবে!’’ কলকাতায় এসে এআইসিসি-র নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সলমন খুরশিদ যদিও বলেছেন, প্রদেশ কংগ্রেসের মতামত পেলে হাইকম্যান্ড আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘ভবানীপুরে প্রার্থী না দিলে তৃণমূলের যাঁরা বিরোধিতা করতে চান, তাঁদের সকলকে বিজেপির দিকে ঠেলে দেওয়া হবে! বিজেপির সুবিধা কেন আমরা করে দিতে যাব? কংগ্রেস কী ঠিক করে, দেখা যাক।’’ বামফ্রন্টের বৈঠক ডাকা রয়েছে কাল, মঙ্গলবার। সেখানেও তিন কেন্দ্রের ভোট নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা।