দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ করার হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।
রাজ্য জুড়ে আসন্ন পুর-নির্বাচনের আগে শাসক দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ করার হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যাঁদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সংশয় আছে, তাঁদের পাশে যে দল দাঁড়াবে না, সেই ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি।মঙ্গলবার বনগাঁ ও রানাঘাটে দুটি সভা করেন মমতা। দু’জায়গাতেই গত লোকসভা ভোটে হেরেছে তৃণমূল।
মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের বক্তৃতার একটি অংশে ছিল স্থানীয় নেতাদের বিশ্বাসযোগ্যতা, স্বচ্ছতা, মানুষের সঙ্গে ব্যবহার এবং ভাবমূর্তির মতো প্রসঙ্গ। বস্তুত গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল বিজেপি-র কাছে মোট ১৮টি আসন হারানোর পর থেকে বিষয়টি নিয়ে কঠোর হয়েছেন তিনি। নিজের দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ‘কাটমানি’ নিয়ে সরব হওয়ার পাশাপাশি জনগণের অভিযোগ সরাসরি জানতে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি চালু করা তারই অঙ্গ। ভোট-কুশলী প্রশান্ত কিশোরকে কাজে লাগানোর পরে তিনিও একইভাবে এসব নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। জোর দিয়েছেন প্রার্থীদের ‘স্বচ্ছ’ ভাবমূর্তির উপর।
এপ্রিলের মাঝামাঝি কলকাতা ও তার অল্প দিনের মধ্যে রাজ্যের শ’খানেক পুরসভায় ভোট হওয়ার কথা। তার আগে সূচনা লগ্নেই তৃণমূল নেত্রী ফের প্রকাশ্যে তাঁর কঠোর অবস্থান জানিয়ে দিতে শুরু করলেন। প্রার্থী বাছাই পর্বের আগে তাঁর এই বার্তা তাই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এদিন প্রথমে বনগাঁয় মমতা বলেন, ‘‘যদি আমাদের স্থানীয় নেতাদের উপর বিশ্বাস করতে না পারেন, করবেন না। তাঁদের সঙ্গে বনিবনা না হলে আমাদের বলবেন। কোনও অন্যায় করতে দেব না।’’ কলকাতা-সহ বহু জেলায় পুর-প্রতিনিধি বা স্থানীয় ছোট মাপের নেতারা অনেকে নিজেদের দাপট বোঝাতে দলের উপরতলার সঙ্গে ‘বিশেষ’ যোগাযোগের দাবি করেন। এদিন সেই দিকে লক্ষ্য রেখে মমতা জানিয়ে দেন, ‘‘দলটা ওরা চালায় না। দল আমরা চালাই।’’ এরপরেই তিনি সতর্ক করেন, ‘‘আমি পদক্ষেপ করি। পদক্ষেপ না করে কোনও কথা বলি না।’’ পাশাপাশি রানাঘাটে তাঁর দাবি, ‘‘আমাকে দিয়ে কেউ কোনও ভুল কাজ করাতে পারবে না।’’
তৃণমূলের নিচুতলায় নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের জনসংযোগের অভাব নিয়ে ক্ষোভ-অভিযোগ তীব্র হয়েছিল লোকসভা ভোটের পরে। বনগাঁর সভায় দলের নেতা কর্মীদের উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘‘মানুষের কাজ করতে গেলে ভালবাসতে হয়। পাশে দাঁড়াতে হয়। গরিব মানুষের কাছে যান। মানুষ যদি রাগ করে দুটো কথা বলেন, তা সহ্য করতে হবে।’’ রানাঘাটেও একই সুরে মমতা বলেন, ‘‘তৃণমূল কর্মীদের বলছি, আপনাদের ব্যবহারে যদি কোনও মানুষ ভুল বুঝে থাকেন, সেই মানুষদের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে। কাজ করতে গিয়ে ভুল করতে পারি। কিন্তু আমি তার জন্য বারবার ‘সরি’ বলি। ভুল হয়েছে, বলা কোনও অপরাধ নয়।’’
লোকসভা ভোটে বিজেপি-র ‘অর্থবলের’ সঙ্গে তৃণমূল পেরে ওঠে নি বলে দাবি করে মমতা জানান, ‘‘আমাদের ব্যর্থতা ছিল। ওদের টাকার কাছে অনেকেই মাথা বিকিয়েছে।’’ এরপরেই তাঁর আহ্বান, ‘‘মাথা বিকোবেন না। অন্যায়ের কাছে মাথা বিকিয়ে দিলে সম্মান আর ফিরে পাওয়া যায় না।’’