Mandarmani

নিয়ম ভাঙার খেলা মন্দারমণিতে, উপকূল বিপন্ন করেই চলছে হোটেল মেরামত

সম্প্রতি নবান্নে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মন্দারমণির বেআইনি নির্মাণ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

কেশব মান্না

মন্দারমণি শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২১ ০৫:৩২
Share:

মন্দারমণির সৈকতে ফের শুরু হয়েছে নির্মাণ। নিজস্ব চিত্র।

নিয়ম ভাঙার খেলা চলছেই মন্দারমণিতে!

Advertisement

একটা সময় উপকূল আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এই সৈকতে মাথা তুলেছিল সারসার হোটেল-লজ। ‘ইয়াসে’র ঝাপটায় জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে চুরমার হয়েছে তার অনেকগুলিই। কিন্তু তারপরেও একাংশ হোটেল কর্তৃপক্ষ নিয়মের তোয়াক্কা না করে মেরামতি শুরু করেছেন। ‘কোস্টাল রেগুলেটরি জোন’ (সিআরজেড) আইন শিকেয় তুলে সৈকতের বুকেই ফের মাথা তুলছে নির্মাণ। প্রশাসনের নাকের ডগাতেই হচ্ছে সব কিছু।

গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এবং পূর্ণিমার ভরা কটালের জোরা ফলায় জলোচ্ছ্বাসে তছনছ হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূল। মস্ত সব ঢেউয়ের ধাক্কায় সে দিন মন্দারমণির সৈকতে গজিয়ে ওঠা বহু হোটলের পরিকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভেঙে যায় বহু ঘর। অনেক জায়গায় হোটেলের গার্ডওয়ালটুকুও আর নেই। অভিযোগ, এই দুর্যোগ থেকে শিক্ষা না নিয়েই বহু হোটেল কর্তৃপক্ষ ফের সমুদ্রের গা ঘেঁষে নতুন করে পরিকাঠামো গড়ছেন।

Advertisement

বৃহস্পতিবার এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, দাদনপাত্রবাড় এবং মন্দারমণিতে বহু হোটেলে গার্ডওয়াল এবং ভেঙে যাওয়া ঘর ফের তৈরি হচ্ছে। দু’-একজন হোটেল মালিক নিম্নচাপের সতর্কবার্তায় নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। বুলডোজারও ফিরে যায়। তবে নির্মাণকাজ হচ্ছে বলে মানতে চাননি স্থানীয় হোটেল মালিক সংগঠনের সভাপতি সন্দীপন বিশ্বাস। তাঁর দাবি, ‘‘ইয়াসে অধিকাংশ হোটেলের আসবাবপত্র ভেঙেছে। মালিকেরা সে সবই মেরামত করছেন।’’

মন্দারমণির হোটেলগুলি গোড়া থেকেই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। অধিকাংশ হোটেল-লজ সিআরজেড আইন ভেঙেই মাথা তুলেছে। কেন্দ্রীয় এই আইন অনুযায়ী, জোয়ারের সময় সমুদ্রের জল যতদূর আছড়ে পড়ে, সেখান থেকে কমপক্ষে ৫০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে কোনও নির্মাণকাজ করা যাবে না। অথচ সেই বিধি না মেনেই মন্দারমণিতে একের পর এক নির্মাণ মাথা তুলেছে। পরিবেশ আদালত বারবার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তার জেরে কিছু দিন বন্ধ থেকেছে কাজ। তারপর যে-কে সেই। ফলে, প্রথম থেকেই প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।

সম্প্রতি নবান্নে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মন্দারমণির এই সব বেআইনি নির্মাণ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ‘‘সমুদ্রের মাঝখানে যেন মনে হয় এক একটা হোটেল তৈরি হয়ে গিয়েছে।’’ যেখানে সরকারের মাথা পর্যন্ত বিষয়টি চর্চায় রয়েছে, সেখানে কী ভাবে আবার বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে, প্রশাসন কেন হস্তক্ষেপ করছে না— প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশ প্রেমীরা। পেশায় শিক্ষক তথা ‘জীব বৈচিত্র ব্যবস্থাপনা সমিতি’র সম্পাদক প্রীতিরঞ্জন মাইতি বলছিলেন, ‘‘প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস করে প্রকৃতিকে বেশি দিন বাঁচিয়ে রাখা যায় না। ইয়াস সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। তারপরেও সিআরজেড আইন না মেনে উপকূলে ফের নির্মাণ হলে পরিণাম আরও ভয়ঙ্কর হবে।’’

এখনও কেন সজাগ হচ্ছে না প্রশাসন?

কাঁথির মহকুমাশাসক আদিত্য বিক্রম মোহন হিরানি বলছেন, ‘‘মন্দারমণিতে বর্তমান পরিস্থিতি কী, দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদকে রিপোর্ট পাঠাতে বলছি।’’ পর্ষদের
মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক মানসকুমার মণ্ডলের অবশ্য বক্তব্য, "মন্দারমণিতে পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে বলে জানা ছিল না। খোঁজখবর নিয়ে দেখছি।"

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement