Liquor

Illegal Liquor: স্থানীয় নেতার ‘বরাভয়ে’ থানার কাছেই সুরা-প্রতাপ

স্থানীয় সূত্রে খবর, গত ৪০ বছর ধরে গজানন বস্তিতে প্রতাপ কর্মকার ও তার পরিবার বেআইনি মদের ব্যবসা চালাচ্ছে।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২২ ০৫:২৪
Share:

বিষ মদ খেয়ে মৃতদের নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে কথা বলছেন পুলিশকর্মী। হাওড়ার মালিপাঁচঘড়ার গজানন বস্তিতে। বুধবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

হাওড়ার মালিপাঁচঘড়ার গজানন বস্তিতে সাকুল্যে ৪০-৫০টি ঘর। বস্তির সামনেই এলাকার থানা। থানার পাশের গলি দিয়ে দেড় মিনিটে পৌঁছনো যায় ওই বস্তিতে। থানার পাশে এলাকার মূল রাস্তা ধর্মতলা রোড। বস্তিটির ঠিক পিছন দিয়ে গিয়েছে পূর্ব রেলের মেন লাইন। আর এই রেল লাইনই এলাকার বেআইনি মদ বিক্রেতা প্রতাপ কর্মকারের পরিবারের ‘লাইফ লাইন’ই বদলে দিয়েছে বলে মনে করছেন এলাকার বাসিন্দারা।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে খবর, গত ৪০ বছর ধরে গজানন বস্তিতে প্রতাপ কর্মকার ও তার পরিবার বেআইনি মদের ব্যবসা চালাচ্ছে। বাপ-ঠাকুরদার পারিবারিক ব্যবসা। আগে পরিবারের লোকজন বস্তির ঘরে ভাড়া থাকতেন। স্থানীয়রা বলছেন, মদ বেচে টাকাপয়সা হওয়ায় বর্তমানে মালিপাঁচঘরারই কৈবর্তপাড়া লেনে একটি দোতলা বাড়ি কিনে সপরিবারে বাস করছেন প্রতাপ। তাঁর পরিবারের সঙ্গে ওই এলাকার মানুষের যোগাযোগ নেই। রোজ সকাল ১০টা নাগাদ তিনি নাকি মাথা নিচু করে এলাকা থেকে বেরোন এবং রাত্রি প্রায় ১২টা নাগাদ একই ভাবে বাড়ি ফিরেন। মদ তো নয়ই, এমনকি সিগারেট, গুটখা কোন নেশাই তিনি করেন না বলে স্থানীয়রা জানালেন।

এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, আগে প্রতাপের পরিবারের লোকজন মদ বেচলেও দিশি মদ বিক্রি করত। কিন্তু এই ‘লাইনে’ আসার পর ব্যবসা চড়চড় করে ফুলে ওঠে। এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘প্রতি দিন ভোর বেলা চলে আসবেন। দেখবেন, ট্রেনে কী ভাবে প্লাস্টিকের জারে চোলাই মদ, স্পিরিট ঢুকছে। ওই চোলাই দেশি মদে মিশিয়ে কম দামে বিক্রি করে প্রতাপ।’’

Advertisement

এলাকার বাসিন্দারা জানান, বর্ধমান, হুগলির দিক থেকে প্রতি দিনই লোকাল ট্রেনে করে চোলাই আসে। পূর্ব রেলের বামনগাছির পর থেকে গজানন বস্তির কাছে ট্রেনের গতি একদম কমে যায়। তখনই ট্রেন থেকে জারগুলো এক-এক করে নামিয়ে দেওয়া হয়। প্রতাপের লোকজন এরপর সেগুলো তুলে নিজেদের ঠেকে নিয়ে যায়। এলাকার বাসিন্দাদের প্রশ্ন, রেলের আরপিএফ, জিআরপি, হাওড়া সিটি পুলিশ বা স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে ‘বন্দোবস্ত’ না থাকলে এই ব্যবসা চলে কী ভাবে। অভিযোগ নিয়মিত ‘নজরানা’ দিয়ে সকলকে তুষ্ট করারও।

এলাকার বাসিন্দা সোমনাথ রাজভর বলেন, ‘‘প্রতাপের সঙ্গে স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতার মারাত্মক বোঝাপড়া। তাঁর সঙ্গে ওকে প্রায়ই দেখা যায়। তাই বস্তির লোকজন ভয়ে কিছু বলে না। যদিও বস্তির মহিলারা চান, এই মদের ঠেক বন্ধ হোক।’’

ট্রেনে মদ নিয়ে এসে গজানন বস্তিতে সরবরাহ হওয়ার ব্যাপারে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ট্রেনে মদ বহন করা অবশ্যই বেআইনি। এ জন্য ট্রেনে প্রতিনিয়ত চেক করা হয়। গজানন বস্তি রেলের এলাকায় পড়ে না। তবে স্থানীয় পুলিশ কর্তৃপক্ষ চাইলে আমরা যৌথ ভাবে প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতে পারি।’’ হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘যে জায়গায় থানা হয়েছে, সেটা আগে ফাঁড়ি ছিল। তখন কী হয়েছে বা কেন এই বেআইনি কারবার বন্ধ হয়নি, বলতে পারব না। গত কয়েক বছর হল, মালিপাঁচঘড়া থানা এখানে উঠে এসেছে। এ ব্যাপারে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement