খড়গপুর আইআইটি-র ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করলেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। ফাইল চিত্র।
খড়্গপুর আইআইটি-তে ছাত্রের রহস্যমৃত্যুতে ডিরেক্টরের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করল কলকাতা হাই কোর্ট। এক জন ছাত্রের মৃত্যুকে কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিতে চাইছেন না। শুক্রবার এমনই পর্যবেক্ষণ বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার। এ নিয়ে আইআইটির ডিরেক্টরের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি।
আদালতের নির্দেশ মতো আগামী ২৪ জানুয়ারি খড়্গপুর আইআইটির ডিরেক্টরের আদালতে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই দিন হাজিরা দিতে পারবেন না বলে জানান। বিষয়টি আদালতের নজরে নিয়ে আসা হয়। এর পর বৃহস্পতিবার তাঁর হাজিরার দিন নির্ধারিত করা হয়। শুক্রবার হাই কোর্টে হাজিরা দেন ডিরেক্টর ভি কে তিওয়ারি। বিচারপতি মান্থার পর্যবেক্ষণ, ‘‘আদালতের নির্দেশের পরও তাঁরা (আইআইটি কর্তৃপক্ষ) উদাসীন। এটা উচিত নয়।’’ এর পরই বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘খড়্গপুর আইআইটি-র ডিরেক্টর কি আদালতের ভাষা বোঝেন না? তাঁর সন্তানের সঙ্গে হলেও কি এমনই আচরণ করতেন?’’
আইআইটি-র ডিরেক্টরের আইনজীবী অনিন্দ্য মিত্র জানান, ওই ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় কর্তৃপক্ষ অনুসন্ধান করছে। এর জন্য অনুসন্ধান কমিটি গড়া (ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি) হয়েছে। এর পর ডিসিপ্লিনারি কমিটি রিপোর্ট দেয়। তার ভিত্তিতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গড়া হয়েছে।
এ কথা শোনার পর ডিরেক্টরের উদ্দেশে বিচারপতি মান্থা বলেন, ‘‘যাঁরা সন্তান হারিয়েছেন, তাঁদের কথা ভাবুন। বুঝবেন, ওই বাবা-মায়ের কষ্ট। যাঁরা পয়সার অভাবে গুয়াহাটি থেকে আসতে পারছেন না। আর আপনি কোর্টের তলব এড়িয়ে টোকিয়ো যেতে চাইছেন! ওই বাবা-মায়ের কাছে কোনটা জরুরি?’’
বিচারপতি মান্থা আরও বলেন, ‘‘র্যাগিংয়ের ঘটনা এত হালকা ভাবে কেন নিচ্ছেন? এই প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারা দেশ তথা বিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছেন। এমন ঘটনা হলে পড়ুয়াদের মানসিক অসুস্থতা তৈরি হতে পারে। শুধু একটি ছাত্রের ঘটনায় নয়, আদালত চায় এ বিষয়ে সব ছাত্রের জন্য ডিরেক্টর অতি সক্রিয় পদক্ষেপ করুন।’’
শুক্রবার ডিরেক্টর যে রিপোর্ট জমা দেন তার ভিত্তিতে নিজেদের বক্তব্য জানাতে মৃত ছাত্রের পরিবারকে সুযোগ দেয় আদালত। এই মামলায় পুলিশকে বিচারপতি মান্থার নির্দেশ, ‘‘আপনাদের রিপোর্ট দিতে কত দেরি হবে? ১৫-২০ দিন সময় দেওয়া যাবে না, অনেক দেরি হয়ে যাবে। দয়া করে কোনও পক্ষ নেবেন না। আগামী দিনে কেস ডায়েরি নিয়ে আসবেন। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি।’’
গত ১৪ অক্টোবর খড়্গপুর আইআইটির হস্টেলের ঘর থেকে উদ্ধার করা হয় অসমের বাসিন্দা ফাইজ়ান আহমেদের ঝুলন্ত দেহ। বিটেক মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া ছিলেন তিনি। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, আত্মহত্যা নয়, তাঁকে খুন করা হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, র্যাগিংয়ের শিকার হয়েছেন ওই ছাত্র।
বর্তমানে খবরের শিরোনামে রয়েছেন বিচারাপতি রাজাশেখর মান্থা। গত সোমবার হাই কোর্টে বিচারপতি মান্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন আইনজীবীদের একাংশ। বিচারপতির নামে বেশ কিছু পোস্টারও লাগানো হয়। পোস্টার দেওয়া হয় তাঁর পাড়াতেও। এ নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্যে। এই আবহে খড়্গপুর আইআইটিতে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকায় ক্ষোভপ্রকাশ করলেন বিচারপতি মান্থা।