IIT Khargapur

র‌্যাগিং রুখতে কড়া আইআইটি

আইআইটি-তে র‌্যাগিংয়ের ইতিহাস বহু পুরনো। এখানে আগেও অ্যান্টি র‌্যাগিং স্কোয়াড ছিল। তবে র‌্যাগিং ঠেকাতে তা কার্যকর হয়নি বলেই দাবি অধ্যাপক, পড়ুয়া থেকে প্রাক্তনীদের।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২৩ ০৫:৫২
Share:

খড়্গপুর আইআইটি। —ফাইল চিত্র।

গত অক্টোবরে উদ্ধার হয়েছিল ফয়জ়ান আহমেদের পচাগলা দেহ। তাঁকে খুন করা হয়েছে, অভিযোগ তুলেছিল পরিবার। মেক্যানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের সেই ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের ভর্ৎসনার মুখে পড়েন খড়্গপুর আইআইটি কর্তৃপক্ষ। তখনই র‌্যাগিংয়ের প্রসঙ্গ ওঠে। এবং তার পর থেকেই এই নিয়ে কিছু পদক্ষেপ করেছে খড়্গপুর আইআইটি। কমিটি গঠন থেকে বিধিনিষেধ আরোপ, সবই হয়েছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। যদিও প্রশ্ন রয়েছে, এই সবই বা কত দিন ঠিক মতো কাজ করবে?

Advertisement

যাদবপুরের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর মৃত্যুর ঘটনায় নতুন করে সামনে চলে এল ফয়জ়ান প্রসঙ্গ। অসমের তিনসুকিয়ার বাসিন্দা এই যুবক হস্টেলে র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়েছিলেন, মামলা চলাকালীন আদালতে জানান পরিবারের আইনজীবী। এই মৃত্যু থেকে কি শিক্ষা নিয়েছে আইআইটি? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি সূত্রে জানা গিয়েছে, র‌্যাগিংয়ে জড়িত সন্দেহে চার পড়ুয়াকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। আপাতত ফয়জ়ানের দেহের দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের পরে ‘সিট’ গঠন করেছে হাই কোর্ট। তদন্ত চলছে। হস্টেল ও আইআইটি-তে র‌্যাগিং রুখতে তিনটি কমিটি গড়া হয়েছে। সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে ইনস্টিটিউট অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটি। এই কমিটির প্রধান তথা ডিন অব স্টুডেন্টস অ্যাফেয়ার্স অধ্যাপক ভার্গব মৈত্র বলেন, “আমাদের প্রতিষ্ঠানের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে সম্প্রতি র‌্যাগিং মোকাবিলা সংক্রান্ত যাবতীয় বিধিনিষেধ আপলোড করা হয়েছে। সেই নির্দেশিকা ১৬ হাজার পড়ুয়াকে ই-মেলেও পাঠানো হয়েছে। আমরা ও পড়ুয়ারা ওই নির্দেশিকা কঠোর ভাবে পালন করছি।”

আইআইটি-তে র‌্যাগিংয়ের ইতিহাস বহু পুরনো। এখানে আগেও অ্যান্টি র‌্যাগিং স্কোয়াড ছিল। তবে র‌্যাগিং ঠেকাতে তা কার্যকর হয়নি বলেই দাবি অধ্যাপক, পড়ুয়া থেকে প্রাক্তনীদের। বেঙ্গালুরুতে কর্মরত প্রতিষ্ঠানের ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের প্রাক্তনী পার্থসারথি রায় বলছিলেন, “আমি প্রতিষ্ঠানের ওয়েলনেস সেন্টারের সদস্য ছিলাম। সে ভাবে র‌্যাগিংয়ের ঘটনা কিন্তু রিপোর্ট হয়নি। দ্বিতীয় বর্ষের ‘ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম’-এ সিনিয়রদের সামনে জুনিয়ররা অনেক সময় চাপে থাকত বলে শুনতাম। তখনও অ্যান্টি র‌্যাগিং স্কোয়াডের তৎপরতা দেখিনি।” আর এক প্রাক্তনী প্রথমেশ দেশমুখ বলেন, “অ্যান্টি র‌্যাগিং স্কোয়াড আগে দেখিনি।”

Advertisement

আইআইটি সূত্রে দাবি, প্রথম বর্ষে ভর্তির পরে সিনিয়রদের সঙ্গে সাক্ষাৎ কার্যত হয় না। ফলে, র‌্যাগিং সম্ভাবনা অনেক কম। তবে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ুয়াদের উঁচু ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের মুখোমুখি হতে হত। তখন নানা অপ্রীতিকর পরিস্থিতিও হত। তবে ফয়জ়ানের মৃত্যুর পরে গঠিত অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটি সেই সাক্ষাৎ একেবারে বন্ধ করেছে। দীপাবলিতে ‘ইলুমিনিনেশন’ ও ‘রঙ্গোলি’ উৎসবেও নিচু ক্লাসের পড়ুয়াদের উপর উঁচু ক্লাসের ছাত্রদের চাপ বন্ধ করতে পদক্ষেপ করা হয়েছে। সূত্রের খবর, এই চাপ নিতে ফয়জ়ান অস্বীকার করেছিল বলেই তাঁকে র‌্যাগিংয়ের শিকার হতে হয়। ফয়জ়ানের মা রেহেনা আহমেদ বলছেন, ‘‘শুনে ভাল লাগছে যে, আমাদের অভিযোগের পরে আইআইটি র‌্যাগিং রুখতে সক্রিয় হয়েছে। আমাদের মামলার উদ্দেশ্যই হল, অন্য কোনও মায়ের কোল যেন খালি না হয়।’’ তবে ছাত্রছাত্রীদের দাবি, কাউন্সেলিং সেন্টারের সক্রিয়তাও বাড়াতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement