না-মারলে মেরে দিত ওরা, জেরায় বলল বাবু

সব সময়েই সাদা রঙের পোশাক পরা যুবকটিকে কামারহাটি-বেলঘরিয়ার বাসিন্দারা চিনতেন মন্ত্রী মদন মিত্রের ছায়াসঙ্গী হিসেবে। বেলঘরিয়ার রথতলা এলাকার তৃণমূলের অফিসেও দেখা যেত তাকে। এলাকার ক্লাবগুলিকে নিয়ে বিভিন্ন মেলা আর উৎসব পরিচালনাও করত সে। মধ্যমগ্রামে জোড়া খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সেই বাবু মণ্ডলকে বৃহস্পতিবার রাত ১১টা নাগাদ শিয়ালদহ স্টেশন থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৫ ০৩:২২
Share:

সব সময়েই সাদা রঙের পোশাক পরা যুবকটিকে কামারহাটি-বেলঘরিয়ার বাসিন্দারা চিনতেন মন্ত্রী মদন মিত্রের ছায়াসঙ্গী হিসেবে। বেলঘরিয়ার রথতলা এলাকার তৃণমূলের অফিসেও দেখা যেত তাকে। এলাকার ক্লাবগুলিকে নিয়ে বিভিন্ন মেলা আর উৎসব পরিচালনাও করত সে। মধ্যমগ্রামে জোড়া খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সেই বাবু মণ্ডলকে বৃহস্পতিবার রাত ১১টা নাগাদ শিয়ালদহ স্টেশন থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Advertisement

বাবু ওই জোড়া খুনের দায় স্বীকার করেছে বলে পুলিশের দাবি। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘জেরায় বাবু মণ্ডল জানায়, বাবু সেনকে খুন না-করলে সে নিজেই খুন হয়ে যেত।’’ বারাসত আদালতে তোলা হলে বাবু মণ্ডলকে ১০ দিন পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

পুলিশ জানায়, বাবু সেন আর বাবু মণ্ডল দু’জনেই প্রোমোটার, দু’জনেই জমি-মাফিয়া। তাদের মধ্যে রেষারেষি চরমে ওঠে। বাবু মণ্ডল পুলিশকে জানিয়েছে, বাবু সেন তাকে হুমকি দিয়েছিল, ‘বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোর সাদা জামা লাল করে দেব।’ তার পরেই বাবু সেনকে সরিয়ে দেওয়ার ছক কষে বাবু মণ্ডল। তদন্তকারীদের দাবি, এই কাজে সে সঙ্গে নেয় মধ্যমগ্রামের দুষ্কৃতী প্রদীপ দেব ওরফে পদকে। ছক অনুযায়ী বাবু সেনের ঘনিষ্ঠ এক জনকে দিয়ে বাবু সেনকে মধ্যমগ্রামে পদ-র বাড়িতে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। মিটমাটের টোপ দেওয়া হয়েছিল তাকে। পদ-র বাড়ি থেকে ফেরার সময়েই ভরসন্ধ্যায় মধ্যমগ্রামের জনাকীর্ণ রাস্তায় গুলি চালিয়ে বাবু সেন এবং তার সঙ্গী নুঙ্কাইকে খুন করা হয়।

Advertisement

অভিযোগের তির বাবু মণ্ডলের দিকে ওঠার পরেই রাজনীতিকে ঢাল করে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিল সে। শাসক দলের মন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাকে কাজে লাগিয়ে বাবু মণ্ডল দাবি করেছিল, সে নির্দোষ। ওই সময় আনন্দবাজারকে বাবু মণ্ডল বলেছিল, ‘‘ওরা (বাবু সেন) দুষ্কৃতী। আর আমরা রাজনীতির লোক। ওদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক থাকবে কী করে?’’ পরে অবশ্য এলাকা ছেড়ে চম্পট দেয় বাবু। তাকে ধরতে পুরুলিয়ার হানা দেয় পুলিশ। সেখানকার একটি অতিথিশালায় তার দুই শাগরেদ ধরা পড়লেও বাবু মণ্ডল পালিয়ে যায়। বাবুর সঙ্গীদের মোবাইল ঘেঁটে পুলিশ অবশ্য তার দাড়ি-গোঁফ কামানো একটি ছবি পায়। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘বাবু জেরায় জানিয়েছে, কাগজে তার ছবি প্রকাশের পরে ভোল বদলাতে সে পুরুলিয়ায় নাপিত ডেকে চুল ছোট করে ছেঁটে, গোঁফ কামিয়ে ফেলে।’’

ভোল বদলালেও বেশ বদলায়নি বাবু। পুলিশ জানায়, এ দিনও ধরা পড়ার সময় তার পরনে ছিল সাদা রঙের পোশাক। মোবাইলের সূত্র ধরে পুলিশ জানতে পারে, রাতে শিয়ালদহ থেকে পদাতিক এক্সপ্রেস ধরে উত্তরবঙ্গ চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে বাবু। পুলিশি সূত্রের খবর, বারাসতের এসডিপিও সুবীর চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সাদা পোশাকের পুলিশ তাকে ধরে ফেলে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement