ভাঙড় চালু হলে চিন্তা কাটত বিদ্যুৎকর্তাদের

ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশনের সাবস্টেশন চালু হলে আগামী ২০ বছর কলকাতা-সহ সংলগ্ন অঞ্চলগুলিতে বিদ্যুৎ সংবহন পরিকাঠামো নিয়ে রাজ্যের আর চিন্তা থাকবে না। তেমনই দাবি করছেন রাজ্যের বিদ্যুৎ কর্তারা।

Advertisement

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:১০
Share:

ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশনের সাবস্টেশন চালু হলে আগামী ২০ বছর কলকাতা-সহ সংলগ্ন অঞ্চলগুলিতে বিদ্যুৎ সংবহন পরিকাঠামো নিয়ে রাজ্যের আর চিন্তা থাকবে না। তেমনই দাবি করছেন রাজ্যের বিদ্যুৎ কর্তারা। কিন্তু গ্রামবাসীদের আপত্তি ও আন্দোলনে ওই প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেলে অদূর ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়তে পারে কলকাতাবাসী। সে ক্ষেত্রে রাজ্যের হাতে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ থাকলেও চাহিদা বাড়লে দুর্বল সংবহন পরিকাঠামোর জন্য তা জোগান দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হবে বিদ্যুৎ কর্তাদের। সে ক্ষেত্রে কলকাতাকে আলো দিতে গেলে অন্য জায়গায় লোডশেডিং করতে হতে পারে।

Advertisement

কলকাতা-সহ আশেপাশের অঞ্চলগুলিতে মূলত জিরাট ও সুভাষগ্রাম সাবস্টেশন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়ে থাকে। কিন্তু ভবিষ্যতের চাহিদার কথা ভেবে শুধুমাত্র ওই দু’টি সাবস্টেশনের উপর নির্ভর করা যাবে না বলে বছর খানেক আগেই নতুন আরও একটি সাবস্টেশন তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। কারণ জিরাট ও সুভাষগ্রামের বিদ্যুৎ সরবরাহ ক্ষমতা বাড়ানোর আর কোনও পরিস্থিতি নেই। তখনই ঠিক হয় কলকাতার কাছে দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেই কোথাও একটি সাবস্টেশন করা হবে। সেই মতো জমি খোঁজা শুরু হয়। প্রথমে ঠিক ছিল, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ সংবহন সংস্থা সাবস্টেশনটি তৈরি করবে। আর সেই প্রকল্পের জন্য ভাঙড়ের আশেপাশেই জমি দেখা হচ্ছিল। পরে ওই সাবস্টেশনটি পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন তৈরি করতে রাজি হয়। ফলে অনেকটাই নিশ্চিন্ত হন রাজ্যের বিদ্যুৎ কর্তারা। কারণ নগরোন্নয়নের পাশাপাশি কলকাতায় বেশ কয়েকটি মেট্রো প্রকল্পের কাজ চলছে। এখন শেষ মুহূর্তে ভাঙড়ে প্রকল্পটি নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায়, চিন্তায় পড়েছে সংবহন সংস্থাও।

সংবহন সংস্থার এক কর্তা জানান, অনেক আলাপ-আলোচনার পর পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশনকে এই প্রকল্পের কাজে রাজি করানো গিয়েছিল। কেন্দ্রীয় সংস্থা সেন্ট্রাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটির (সিইএ) সঙ্গে বহু বার বৈঠকের পর পাওয়ার গ্রিডকে এই প্রকল্পের জন্য কেন্দ্র সবুজ সঙ্কেত দেয়। সেই মতো কাজ শুরু হয়েছিল।

Advertisement

কেন রাজি হয়েছিল কেন্দ্র?

রাজ্যের বিদ্যুৎ কর্তাদের একাংশের ব্যাখ্যা, ওই সময় কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ঠিক হয়েছিল, বহরমপুরে পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন একটি সাবস্টেশন তৈরি করবে। সেখান থেকেই বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানির পাশাপাশি এ রাজ্যেরও চাহিদা মতো জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ দেওয়া হবে। কিন্তু তাতে আপত্তি তোলে রাজ্য সরকার। এ ক্ষেত্রে রাজ্যের বক্তব্য ছিল, তাতে চাহিদার সময় লাইন ট্রিপ করে যেতে পারে। সমস্যা হতে পারে বিদ্যুতের জোগান নিয়েও। তখনই রাজ্যের জন্য পৃথক একটি ৪০০ কেভির হাইটেনশন লাইন-সহ নতুন সাবস্টেশনের প্রস্তাব দেওয়া হয় কেন্দ্রকে। তার জন্য সংবহন সংস্থা একটি ‘সিস্টেম স্টাডি’ করে রিপোর্ট জমা দেয় সিইএ-র কাছে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই ফারাক্কা থেকে গোকর্ণ হয়ে ভাঙড় পর্যন্ত ৪০০ কেভির নতুন লাইন টেনে সাবস্টেশন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়।

সেই কাজ একেবারে শেষের মুখে গিয়ে গ্রামবাসীদের আপত্তিতে এখন থমকে। কোনও সমঝোতা সূত্রের মাধ্যমে ভাঙড় সাবস্টেশনটি চালু হয়ে গেলে কলকাতা-সহ আশেপাশের অঞ্চলগুলিতে বাড়তি ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অনায়াসে সরবরাহ করা যেত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement