কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
দুর্নীতি দেখলে চুপ থাকবেন না। আইনজীবীদের একাংশের রোষের মুখে দাঁড়িয়ে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সাম্প্রতিক কালে বেশ কয়েক বার সংবাদ শিরোনামে এসেছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর এজলাস বয়কটের ডাক দিয়ে তৃণমূলপন্থী আইনজীবীদের একটি অংশ মঙ্গলবার থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন হাই কোর্টে। এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে হাতাহাতিতেও জড়ান আইনজীবীরা। বুধবারও তাঁর এজলাসের বাইরে ঘেরাও করে করে বিক্ষোভ চলে বেশ কিছু ক্ষণ। এ সবের মধ্যেই ক্ষুব্ধ বিচারপতি বলে ওঠেন “মাথায় বন্দুক ধরতে পারেন। মারতে পারেন। মরতে রাজি আছি। কিন্তু দুর্নীতি দেখলে চুপ করে থাকব না। আওয়াজ তুলবই।”
দু’দিন ধরে কলকাতা হাই কোর্টে আইনজীবীদের মধ্যে কখনও হাতাহাতি, কখনও বিক্ষোভের ঘটনায় বুধবার বিরক্তি প্রকাশ করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। বুধবার যখন তাঁর কোর্টের মধ্যে বিক্ষোভ চলছিল, তখন তিনি বিক্ষোভকারী আইনজীবীদের কাছে তাঁদের সমস্যার কথা জানতে চান। তিনি বলেন, “আমি আর ৫-৭ মিনিট সময় দেব। আপনাদের যা দাবি আছে বলুন। আমি তা শুনানির অংশ হিসেবে নেব না। এবং তা রেকর্ডেও থাকবে না। তবে অনুরোধ করছি শান্তি বজায় রাখুন।”
এই পরিস্থিতিতে আইনজীবীদের আর একটি অংশ আদালতের কাজকর্ম এবং শুনানিতে বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগ তুলে প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের দ্বারস্থ হন। বিক্ষোভকারী আইনজীবীরাও সেখানে যাওয়ার জন্য বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের কোর্ট থেকে বেরিয়ে যান। বিচারপতি তৃণমূলের আইনজীবী সেলের এক সদস্যকে বলেন, “ক’দিন আগে বার কাউন্সিলের সভাপতি অশোক দেবের সঙ্গে আমার কথা হল। আপনাদের বলছি, রাজনীতি করবেন না। আমি তো কোনও রাজনীতি করছি না। শুধু একটা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হতে চেয়েছি।”
বিচারপতির এই মন্তব্যের পর তৃণমূলের আইনজীবী সেলের সদস্য চণ্ডীচরণ দে বলেন, “আপনার সিবিআই নির্দেশ নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই। তা নিয়ে কিছু বলিওনি। শুধু আপনি ডিভিশন বেঞ্চের বিরুদ্ধে কেন সেটাই বলেছি।” এর পরই বিচারপতির মন্তব্য করেন, দুর্নীতি দেখলেই তিনি রুখে দাঁড়াবেন। একই সঙ্গে তৃণমূলের ওই আইনজীবীকে তিনি বলেন, “আপনাদের যদি মনে হয় আমি ডিভিশন বেঞ্চের বিরুদ্ধে বলে ভুল করেছি, তা হলে সুপ্রিম কোর্টে যান। এ ভাবে বিক্ষোভ কেন।” তাঁর বিরুদ্ধে আইনজীবীদের একাংশের তরফে প্রধান বিচারপতিকে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, তা বেদনাদায়ক বলেও উল্লেখ করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
স্কুল সার্ভিস কমিশনের গ্রুপ-সি, গ্রুপ-ডি এবং নবম-দশম শ্রেণিতে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এই তিন ক্ষেত্রে তিনি যত বারই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন, তত বারই সেই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয় ডিভিশন বেঞ্চ। তা নিয়ে আগেই আপত্তি জানিয়েছিলেন তিনি। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে এ নিয়ে নিজের অবস্থান জানিয়ে হস্তক্ষেপও চেয়েছিলেন তিনি।