নিজের হাতে ব্লেড দিয়ে চিরে ইংরেজিতে ‘এফ-৫৭’ লিখেছিল ছাত্রটি। —নিজস্ব চিত্র।
নজর কাড়তে বন্ধু-বান্ধব-বাবা-মা থেকে শুরু করে স্কুলের শিক্ষক- সবাইকে ‘ব্লু হোয়েল’ সুইসাইড গেমের ‘ঘোল’ খাইয়ে ছাড়ল ক্লাস ইলেভেনের ছাত্র। পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার ঘটনা। শুধু ঘোল খাওয়ালো বললে কম, স্বাভাবিক ভাবেই তাকে নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে উঠেছিলেন আশপাশের সবাই। নিজের হাতে ব্লেড দিয়ে চিরে ইংরেজিতে ‘এফ-৫৭’ লিখেছিল ওই ছাত্র। বলেছিল, ‘ব্লু হোয়েল’ খেলছে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য পুলিশি জেরায় রহস্য ফাঁস হল। এ সব করার উদ্দেশ্য ছিল একটাই, সবার নজরের কেন্দ্রে আসা।
এমনিতে মেধাবী ছাত্র হিসেবে নিজের এলাকায় বেশ পরিচিত ওই ছাত্র। পাড়াপড়শি-বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে বেশ মেলামেশাও রয়েছে। এ হেন কিশোরই দিন কয়েক ধরে একেবারে চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল। কারও সঙ্গে মেলামেশাও করছিল না। স্কুল বা টিউশনও পড়তে যায়নি। প্রাইভেট টিউটর অন্য ছাত্রদের অভিভাবকদের মারফত বাড়িতে খবর পাঠান। বাবা, মা প্রথমে কিছুই বুঝে উঠতে পারেননি। কিন্তু সব সময় ফুল হাতা জামা পড়ে থাকতে দেখে সন্দেহ হয়। গত বুধবার জামার হাতা তুলতেই দেখা যায় কেটে কেটে লেখা রয়েছে হাতে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন অভিভাবকরা। খবরের সৌজন্যে ‘ব্লু হোয়েল’-এর মতো ডার্ক ওয়েব গেমের ভয়াবহ পরিণতি জানা রয়েছে অনেকেরই। তবে কি তাঁদের ছেলে ‘ব্লু হোয়েল’-এর খপ্পরে পড়ল? আতঙ্কিত বাবা, মা শরণাপন্ন হন ছেলের স্কুলশিক্ষকদের। ইতিমধ্যে নিজের এক জন বন্ধুকে মেসেজ করে ছাত্রটি জানায়, ‘ব্লু হোয়েল’ গেম খেলছে সে। খেলার জন্য স্মার্টফোনেও ওই গেম সে ডাউনলোড করেছিল বলে দাবি করে।
আরও পড়ুন
তেজ উধাও, দেখা মেলাও ভার, জল্পনায় মান্নান
সব মিলিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যাওয়া অভিভাবক এবং শিক্ষকরা পুলিশকে গোটা ঘটনা জানায়। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদেই ধরা পড়ে, ‘ব্লু হোয়েল’ বা এ ধরনের অন্য কোনও সুইসাইড গেমের সঙ্গে এই ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের দাবি, “পুরোটাই মিথ্যা। পুরোটাই বানানো গল্প। তদন্তে জানা গিয়েছে, ‘ব্লু হোয়েল’-এর কোনও লিঙ্ক মোবাইলে ডাইনলোড করেনি সে। কেবলমাত্র সাড়া জাগানোর জন্যই এ কাজ করেছে ছাত্রটি।”
জেরায় জানা গিয়েছে, ঘনিষ্ঠ কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে রীতিমতো পরিকল্পনা কষেই এত সব কাণ্ড ঘটিয়েছিল ছাত্রটি। ‘ব্লু-হোয়েল’ নিয়ে রীতিমতো পড়াশোনাও করেছিল। পরিকল্পনা মতোই সকলের সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করেছিল। স্কুলে বা টিউশন পড়তে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল। এমনকী, হাতে ব্লেড দিয়ে চিরে অক্ষর খোদাই করেছিল।
আরও পড়ুন
গ্রামে ঘুরে দুর্নীতি রুখছেন দেশের কনিষ্ঠতম আইএএস
পুলিশের দাবি, শুধুমাত্র শিরোনামে আসার জন্যই, বা আশপাশের মানুষের কাছে বিশেষ ভাবে নজরে আসার জন্যই, ‘ব্লু-হোয়েল’-এর গল্প ফেঁদেছিল কিশোরটি। হয়ত তাই। কিন্ত কীসের জন্য এমন ভাবে নজরে আসার চেষ্টা? মনোবিদ মোহিত রণদীপের মতে, “মনোযোগ আকর্ষণের প্রবণতা সাধারণ ভাবে সমাজে বাড়ছে। কারণ আজকের বাচ্চাদের একটা বড় অংশ বাবা, মা’র থেকে পজিটিভ অ্যাটেনশন পায় না। মনোযোগ টানতে গিয়ে বিপজ্জনক ভাবে সেলফি তোলা বা এই জাতীয় হাই রিস্ক বিহেভিয়ারও বাড়ছে কৈশোরে বা তরুণ বয়সে। এটা তেমন একটা ঘটনা হতেই পারে।” কিন্তু এ ধরনের প্রত্যেকটা ঘটনারই কিছু বিশেষ প্রেক্ষাপট থাকে। থাকে বিশেষ মানসিক অবস্থা। বললেন মোহিত। তাই এই বিশেষ ক্ষেত্রেও পুলিশ নয়, দ্রুত মনোবিদের সঙ্গে ওই ছাত্রকে বসানো দরকার। কোথায় মানসিক ফাঁকটা তৈরি হয়েছে, জানা-বোঝা যাবে কাউন্সেলিং-এই। মনে করেন মোহিত।