ফাইল চিত্র।
তিনি একাই তৃণমূলকে হারানোর ক্ষমতা রাখেন বলে দাবি করলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি সোমবার বলেন, ‘‘বাংলার পরিবর্তন দিলীপ ঘোষ একা করতে পারবে! কারও যদি আত্মবিশ্বাস, বিশ্বাস না থাকে, বাড়িতে বসে থাকুক!’’
রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি-পর্বে সাংগঠনিক আলোচনার জন্য সম্প্রতি দিল্লিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে রাজ্য নেতাদের দফায় দফায় বৈঠক বসেছিল। সেখানেই দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে গোষ্ঠীবাজির অভিযোগে দলেরই একাংশ সরব হয় বলে সূত্রের খবর। এমনকি, দিলীপবাবু পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বলেও গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। তার প্রেক্ষিতে দিলীপবাবুর এ দিনের বক্তব্য রাজনৈতিক মহলের মতে তাৎপর্যপূর্ণ। অন্য দিকে, দলের মধ্যেও এই মন্তব্য ঘিরে আলোড়ন পড়েছে। কেউ প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একটি ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে যে, রাজ্য সভাপতির মুখে এই ধরনের কথা অভিপ্রেত নয়।
দিল্লি থেকে ফেরার পথে আনুষ্ঠানিক ভাবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন দিলীপবাবু। সেখানে বিবিধ প্রসঙ্গের মধ্যেই প্রশ্ন আসে, তিনি কি রাজ্য সভাপতির পদ ছেড়ে দেবেন? দৃঢ় প্রতিবাদ করে দিলীপবাবুর জবাব, ‘‘দিলীপ ঘোষ যদি পদত্যাগ করতে চাইত, তা হলে এত দিন পদে থাকত না! আমি বুকে পা দিয়ে রাজনীতি করতে এসেছি। যে সামনে আসবে, তার বুকে পা দিয়ে রাজনীতি করব! আমাদের মুখ্যমন্ত্রী হলে ওরা যেন মিষ্টি খেতে আসে।’’
আরও পড়ুন: পুজোর দিনে বঙ্গে লকডাউন, ক্ষুব্ধ বিজেপি
‘ওরা’ কারা? সে প্রশ্নও ঘুরছে বিজেপির অন্দরে। কারণ, দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে যাঁরা গোষ্ঠীবাজির অভিযোগ এনেছেন বলে সূত্রের খবর, তাঁদের অধিকাংশ মুকুল রায়ের হাত ধরে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসেন এবং গত লোকসভা ভোটে জিতে সাংসদ হন। এরই পাশাপাশি, দিল্লির বৈঠকে মুকুলবাবুর কার্যত না থাকার সুবাদেও বিষয়টি বড় মাত্রা পায়। মুকুলবাবু অবশ্য দিলীপবাবুর এ দিনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় অর্থপূর্ণ ভাবে বলেছেন, ‘‘আমি রাজ্যের নেতা নই। রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবু তাঁর কথা বলতেই পারেন।’’ পর্যবেক্ষকদের অনেকের অভিমত, এই বক্তব্যের মাধ্যমে মুকুলবাবু বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন, দলে তাঁর অবস্থান কেন্দ্রীয় স্তরে। অর্থাৎ রাজ্য স্তরের ঊর্ধ্বে। ইদানীং করোনা পরিস্থিতির যুক্তিতে মুকুলবাবু তাঁর দিল্লি যাতায়াত অবশ্য কমিয়ে দিয়েছেন। রাজ্য দফতরের দিকেও বড় একটা আসেন না। দিলীপবাবুর এ দিনের বক্তব্যে যাঁরা ‘বাড়িতে বসে’ আছেন, তাঁদের আত্মবিশ্বাস নেই বলে খোঁচা রয়েছে। লক্ষ্য কে, সেটিও চর্চার অন্যতম বিষয় হয়ে উঠেছে।
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বিজেপির গোষ্ঠী সমীকরণের অঙ্কে দিলীপবাবুর ঘনিষ্ঠ বলে শোনা যায় না। রাজ্য সভাপতির মন্তব্য সম্পর্কে এ দিন তাঁর কুশলী প্রতিক্রিয়া, ‘‘দিলীপদা কি এমন কথা বলতে পারেন! ‘আমার মনে হয়, এটা তৃণমূলের কারসাজি। ওই ভিডিয়ো ক্লিপটি চাতুরি করে তৈরি করা হয়েছে।’’ কোনও মন্তব্যই করতে চাননি বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ।
দিলীপবাবু অবশ্য এ দিন এ কথাও বলেন, ‘‘আমাদের দলে বিভেদ নেই, ছিলও না। যাঁদের দলে বিভেদ আছে, যাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং স্বজনপোষণের অভিযোগ আছে, তারাই নিজেদের মতো করে বিজেপিকে দেখানোর চেষ্টা করছে।’’
দিলীপবাবু এ দিন আরও জানান, পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় দলের দুই কর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর প্রতিবাদে আজ, মঙ্গলবার কলকাতায় মিছিল হবে। আগামী শুক্রবার থেকে ফের শুরু হবে দলের সদস্যসংগ্রহ অভিযান। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তাঁর সঙ্গে অসহযোগিতার যে অভিযোগ তুলছেন, প্রত্যাশিত ভাবেই তাকে সমর্থন করেছেন দিলীপবাবু।