উদ্ধার বন্যপ্রাণীর দেহ-সহ ধৃত দুই শিকারি। নিজস্ব চিত্র।
শিকার উৎসবের যুক্তি দিয়ে অবাধে বন্যপ্রাণী নিধনের অভিযোগে মুর্শিদাবাদের কান্দিতে ২০ জনকে গ্রেফতার করল বনবিভাগ এবং পুলিশ। বন্যপ্রাণপ্রেমী সংগঠন 'হিউম্যান অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট অ্যালায়েন্স লিগ' (হিল)-এর সদস্যদের সহায়তায় সোমবার বিকেলে ভরতপুর থানার আলোগ্রাম অঞ্চলের কড়েয়া গ্রাম থেকে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের মঙ্গলবার কান্দি আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের কাছ থেকে তিনটি বনবিড়াল (খটাশ) এবং একটি ঘুঘু পাখির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মুর্শিদাবাদের বিভাগীয় বনাধিকারিক (ডিএফও) প্রদীব বারুই জানান, ১৯৭২ সালের ভারতীয় বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইনে বনবিড়াল ‘সংরক্ষিত প্রজাতি’ হিসেবে চিহ্নিত। অর্থাৎ, এদের ধরা, মারা বা পোষা আইনত শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
ধৃতদের থেকে ১০টি পশু-পাখি ধরার জাল, একটি বল্লম, দু’টি কোদাল এবং বেশ কয়েকটি লাঠি বাজেয়াপ্ত করা হয়। তাঁরা যে ইঞ্জিন ভ্যানে চড়ে শিকারে এসেছিলেন, সেটিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃতেরা বীরভূম জেলার বাসিন্দা। সাম্প্রতিক কালে রাজ্যে কোনও শিকারের ঘটনায় এক সঙ্গে এত জন গ্রেফতার হননি।
হিল-এর সদস্য সৌম্যদীপ মণ্ডল জানিয়েছেন, প্রতি বছরই বাঁদনা পরবের সময় বেশ কয়েক দিন ধরে শিকার উৎসবের নামে বন্যপ্রাণী এবং পাখি হত্যা চলে। তিনি বলেন, ‘‘বাঘরোল, খটাশ, ভাম, কাঠবিড়ালি, গোসাপ এবং নানা প্রজাতির পাখি মারা হয় নির্বিচারে।’’
সংগঠনের সম্পাদক শুভ্রজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় জানান, একটি মামলার প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে কলকাতা হাই কোর্ট জানিয়েছিল, শিকার উৎসবের অছিলায় বন্যপ্রাণী নিধন চলবে না। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ)-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, বন্যপ্রাণী হত্যা বন্ধ করতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, হলফনামা পেশ করে তা আদালতে জানাতে হবে। তার পরে প্রশাসন এবং বনবিভাগের তরফে কিছু কড়াকড়ি শুরু হলেও বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় এখনও নজরদারি এড়িয়ে চলছে শিকার।