Coronavirus Lockdown

সামাজিক সুরক্ষা চেয়ে বিপুল আবেদন রাজ্যে

অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সুবিধা চালু আছে অনেক দিনই।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২০ ০৩:৫৬
Share:

অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কায় দিন কাটছে অনেকের। ছবি: পিটিআই।

লকডাউনে থমকে দিয়েছে জীবন, অর্থনীতিকে। বহু মানুষের রোজগার বন্ধ। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কায় দিন কাটছে আরও অনেকের। তবু এই সময়ের মধ্যেই রাজ্যে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করার জন্য আবেদন এসেছে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি।

Advertisement

অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সুবিধা চালু আছে অনেক দিনই। নির্মাণ শিল্প, পরিবহণ শিল্প ও আরও ৬১টি ক্ষেত্রের অসংগঠিত শ্রমিকেরা এই প্রকল্পের (এসএসওয়াই) সুবিধা পান। শ্রম দফতরের সর্বশেষ তথ্য বলছে, গত ২৩ মার্চ (‘জনতা কার্ফু’র দিন) থেকে ৮ মে-র মধ্যেই রাজ্যে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে নথিভুক্ত হয়েছেন তিন লক্ষ ৪৩ হাজার ১১৬ জন। তার মধ্যে মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে সর্বাধিক ৪৮ হাজার ৪৬৪ জন আছেন। তার পরেই বাঁকুড়া। সেখান থেকে নথিভুক্তির সংখ্যা ৩৯ হাজার ৯৭২। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, মুর্শিদাবাদ, মালদহ এবং নদিয়া জেলা থেকে বরাবরই এই ধরনের প্রকল্পে বেশি আবেদন আসে। কিন্তু এই লকডাউনের সময়ে বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামের মতো জেলা থেকে যা নথিভুক্তি হয়েছে, তা রীতিমতো চমকপ্রদ! অন্য সময়ে এই জেলাগুলিকে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের ক্ষেত্রে ‘শুকনো এলাকা’ বলেই ধরে রাখা থাকে। শুধু পশ্চিমাঞ্চলই নয়, লকডাউন চলাকালীন হুগলি জেলা থেকে ২৫ হাজার ১৮৬ বা দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে ২৮ হাজার ৬৫২ জন নাম তুলেছেন এই প্রকল্পে।

ঘূর্ণিঝড় আমপানের পরবর্তী সময়ে অবশ্য নাম নথিভুক্তির গতি একটু শ্লথ হয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, জুন মাস জুড়ে নতুন নাম নথিভুক্ত হয়েছে আরও এক লক্ষ ৮৬ হাজার ৮০৮।

Advertisement

সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করানোর জন্য শ্রম দফতর নিয়মিতই নানা পরিকল্পনা নেয়। সরকারি শিবির করা হয় এলাকা ধরে ধরে। লকডাউনের মধ্যে সে সব কিছু করার সুযোগ ছিল না। তবু কেন এত সাড়া? রাজ্যের অসংগঠিত শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক (সিইও) শর্মিলা খাটুয়ার মতে, ‘‘অন্য সময়ে এই প্রকল্পে শ্রমিকেরা দিতেন ২৫ টাকা, সরকারের তরফে ম্যাচিং গ্রান্ট ছিল ৩০ টাকা। এখন পুরো টাকাই সরকারি তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে। শ্রমিক যখন কর্মক্ষম থাকবেন না, তখনকার জন্য প্রাপ্য টাকা নিশ্চিত হবে এবং এখন তার জন্য কোনও খরচ নেই— এই বিষয়টা হয়তো প্রকল্পে বেশি সাড়া পাওয়ার অন্যতম কারণ।’’

এরই পাশাপাশি, শ্রম দফতরের কর্তারা মনে করছেন করোনা পরিস্থিতিও বেশি নাম নথিভুক্তির নেপথ্যে কাজ করছে। প্রকল্পের মৃত্যুকালীন অনুদানের কথা ভেবে অনেকেই অতিমারির মধ্যে নাম লেখাতে এগিয়ে আসছেন বলে তাঁদের মত। আবার শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্বের বড় অংশের ধারণা, রোজগারের নিশ্চয়তা

হারিয়ে বেনজির আতঙ্কে রয়েছেন অসংগঠিত শ্রমিকেরা। তাই তাঁরা চাইছেন এমন কিছু প্রকল্পে নাম লিখিয়ে রাখতে, যেখান থেকে সরকারি সহায়তা মিলতে পারে। এই তাগিদ সামাজিক সুরক্ষার পাশাপাশি ‘প্রচেষ্টা’ বা ‘স্নেহের পরশ’-এর মতো বিশেষ সময়ের প্রকল্পগুলির জন্যও সত্য। এই কারণে শ্রমিক নেতৃত্বের দাবি, সামাজিক সুরক্ষায় যাঁরা আছেন, তাঁদের অন্য দুই প্রকল্পেও আবেদনের সুযোগ দেওয়া হোক।

শ্রমিকদের পাওনা ছাড়া সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের তথ্যে অন্য একটি দিকও উঠে আসছে। লকডাউনের মধ্যে শুধু অনলাইনেই আবেদন করার সুযোগ ছিল। তথ্য দেখাচ্ছে, অনলাইনে আবেদন করার সুযোগ নিতে পারেন, এমন অসংগঠিত শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। এক অতিরিক্ত শ্রম কমিশনারের কথায়, ‘‘এক জন হয়তো একটা স্মার্টফোন থেকে আরও কয়েক জনকে সাহায্য করছেন। এটাও ভাল তথ্য।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement