KMC Poll Result 2021

KMC Poll Result 2021:ব্যবধানে, ভোটের ভাগে রেকর্ড ভাঙল দেদার

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:২১
Share:

তৃণমূল সমর্থকদের উচ্ছাস ছবি পিটিআই।

সংখ্যা দেখলে মনে হতে পারে বিধানসভা নির্বাচনের ফল। ফৈয়াজ় আহমেদ খান জিতেছেন ৬২ হাজার ৪৫ ভোটে। সন্দীপন সাহার ব্যবধান ৪৪ হাজার ২৯৫। আবার অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় জয়ী ৩৭ হাজার ৬২৩ ভোটে।

Advertisement

কলকাতার পুরভোটে এ বার তৃণমূল কংগ্রেসের জয়রথ এগিয়েছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। তারই মধ্যে এক একটি ওয়ার্ডে বিপুল ব্যবধানে জয় হাসিল করে রাজনৈতিক শিবিরে চাঞ্চল্য তৈরি করেছেন তৃণমূলের কিছু প্রার্থী। শুধু ব্যবধানই নয়। ভোট পাওয়ার হিসেব ধরলে চমকে দেওয়ার মতো উপাদান আরও আছে।

মধ্য কলকাতার ৬১ নম্বর ওয়ার্ডে মনজ়র ইকবাল ৯১.৮৩% ভোট পেয়েছেন! জীবন সাহা ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে পেয়েছেন ৯০.৮০% ভোট। এন্টালির ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডে আমিরুদ্দিনের প্রাপ্তি ৯১.৬৭%। খুব পিছিয়ে নেই উত্তর কলকাতার সুনন্দা সরকার, শান্তিরঞ্জন কুণ্ডু বা বেলেঘাটার অলকানন্দা দাসেরাও। তাঁদের প্রত্যেকের প্রাপ্ত ভোটই ৮৯%-এর উপরে। এঁদের সকলকে ছাড়িয়ে গিয়েছেন গার্ডেনরিচের ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে শামস ইকবাল। তিনি পেয়েছেন ৯৭.২৬%। তাঁর ওয়ার্ডে অবশ্য বিজেপি, বাম বা কংগ্রেস— কোনও প্রতিষ্ঠিত বিরোধী দলের প্রার্থী ছিল না। ওয়ার্ড ধরে ধরে হিসেব করলে, ৯০% বা তার বেশি ভোট পেয়েছেন ৭ জন তৃণমূল প্রার্থী। মোট ২৪ জন প্রার্থী ভোট পেয়েছেন ৮০%-এর উপরে। আর এ সবের উল্টো দিকে ২১ নম্বর ওয়ার্ডে সর্বনিম্ন ৪৪ ভোটে জয় পেয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী মীরা হাজরা।

Advertisement

বিরোধী শিবিরের সম্মিলিত প্রশ্ন, কেবল একটি ওয়ার্ডে এক জন প্রার্থীর এমন জয়ের ব্যবধান বা এত ভোট পাওয়া কি স্বাভাবিক? তাঁদের মতে, ওয়ার্ডভিত্তিক ফলই দেখিয়ে দিচ্ছে ভোটে কত ‘জল’ আছে! শাসক তৃণমূলের নেতৃত্ব অবশ্য পাল্টা বলছেন, এর মধ্যে অস্বাভাবিকত্ব খোঁজার কিছু নেই। গত লোকসভা ভোটের সময় থেকেই তৃণমূল মানুষের বিপুল সমর্থন পাচ্ছে এবং বিরোধীরা দুরমুশ হয়ে চলেছে। সেই প্রেক্ষিতেই পুরভোটের ফলকে দেখার কথা বলছেন তাঁরা।

বিপুল ব্যবধানে বিজয়ী প্রার্থীরা তাঁদের ‘পারফরম্যান্সে’ গর্বিত। মন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খানের পুত্র ফৈয়াজ যেমন বলছেন, ‘‘কলকাতা পুরসভার ইতিহাস লেখা হলে সেখানে আমার বাবার আর আমার নাম থাকবে! দু’জনেই রেকর্ড করেছি। এই জয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের, এই জয় মানুষের।’’ প্রসঙ্গত, কসবা বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী জাভেদ ওই ৬৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকেই প্রায় ৫৬ হাজার ভোটের ‘লিড’ পেয়েছিলেন! আরও পাঁচ বছর আগে বিধানসভা কেন্দ্রের ৭টির মধ্যে শুধু ৬৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকেই ২২ হাজার ভোটের ‘লিড’ পেয়ে আসন বার করে নিয়েছিলেন। তাঁর কাছে পরাজিত সিপিএমের তরুণ নেতা শতরূপ ঘোষের অভিযোগ, ‘‘এ বার পুরভোটে ওই ওয়ার্ডে ৮৫% ভোট পড়েছে। খুশিমতো ভোট করে নেওয়া হয়েছে।’’

যাদবপুর এলাকার ১০৯ নম্বরে ওয়ার্ডে জয়ী অনন্যা বলেছেন, ‘‘পুরসভার ওয়ার্ডে ৩৬৫ দিন মানুষের পাশে থেকে কাজ করতে হয়। সেই চেষ্টাই করে গিয়েছি। এত মানুষ যখন ভোট দিয়েছেন, প্রত্যাশাও অনেক বেড়ে যাবে।’’ আর তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ‘‘আসন ও প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে এই ফল তৃণমূলের প্রতি মানুষের ভরসার ধারাবাহিকতা। গত ২০১৯-এর পর থেকে বিভিন্ন নির্বাচনেই এটা স্পষ্ট হচ্ছে। পুরভোটের ফলকেও সেই ভাবেই দেখতে হবে।’’

বিরোধীরা অবশ্য ‘মানুষের ভরসা’র তত্ত্ব মাননে নারাজ। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘‘বিধানসভা উপনির্বাচনে সম্প্রতি ৮৭% ভোট পেয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। এ বার প্রতিযোগিতা করে পুরসভায় সে সব ছাপিয়ে ৮৮, ৮৯, ৯০% করে ভোট! একটা ওয়ার্ডে ৬২ হাজার, ৩৭ হাজার ব্যবধান! উন্নয়নের কী অপার মহিমা! তৃণমূলের নেতারা ধরা পড়ে গিয়েছেন, কলকাতার মাথা হেঁট হয়েছে।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের মন্তব্য, ‘‘ফৈয়াজ় আহমেদ খানের জনপ্রিয়তা দেখা যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ে বেশি! মুখ্যমন্ত্রীর তাঁকে সেলাম করে আসনটাই ছেড়ে দেওয়া উচিত! অন্তত ডেপুটি মেয়র তো করা উচিত।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement