এমন দৃশ্য শেষ কবে দেখা গিয়েছে, মনে করতে পারছেন না সিপিএম নেতারাও!
গ্রান্ট হলের মাঠ ছাপিয়ে গিয়েছে মানুষের ভিড়ে। পথচলতি মানুষও দাঁড়িয়ে পড়ছেন। ধৈর্য ধরে শুনছেন সিপিএমের নেতাদের বক্তৃতা। সভায় যখন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলছেন, ‘‘যা দিনকাল পড়েছে, মিছিল যখন করবেন, তখন ঝান্ডার ডান্ডাগুলো শক্তপোক্ত রাখবেন,’’ হাততালির ঝড় সভায়! পরে সূর্যবাবু সতর্ক করে দিলেন, ওই ডান্ডা কারও মাথা ফাটানোর জন্য নয়। কিন্তু তত ক্ষণে রীতিমতো সতেজ শ্রোতারা। যাঁদের মধ্যে তরুণদের ভিড় ছিল দেখার মতো। এসেছিলেন বহু মহিলাও।
গত সপ্তাহে নবান্ন অভিযান থেকেই রাস্তায় নেমে প্রতিরোধের চেহারা দেখিয়েছিল বামেরা, যার পরবর্তী পরিণতি হয়েছিল দু’দিন আগে সাধারণ ধর্মঘটে জেলায় জেলায় বামেদের মিছিলে। সে দিন বেশ কিছু জায়গায় তৃণমূলের কর্মীদের হামলা এবং পুলিশের লাঠিতে আহত হন বাম সমর্থকেরা। তার মধ্যে সব চেয়ে বড় ঘটনা ঘটেছিল বহরমপুর এবং মহম্মদবাজারে। সেই দু’টি এলাকাতেই শুক্রবার সভা করেছেন সূর্যবাবু। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ফব-র রাজ্য নেতা নরেন চট্টোপাধ্যায়, সিপিএমের মদন ঘোষ, নৃপেন চৌধুরী, মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের মতো রাজ্য ও জেলার নেতারা। যে উদ্দীপনা দেখা গিয়েছে বামেদের এই দু’টি সভা ঘিরে, তৃণমূল জমানায় এখনও পর্যন্ত তা দেখা যায়নি, বলছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
বহরমপুরের সভা শুরুর আগে সূর্যবাবু এ দিন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে আহতদের সঙ্গে কথা বলেন। বহরমপুরের সভার জন্য বাস বা অন্য গাড়ির ব্যবস্থা ছিল না দলের তরফে। সালারের গোলাম মওলার মতো সিপিএম নেতা-কর্মীরা নিজেদের উদ্যোগে এসেছিলেন। হরিহরপাড়া, জলঙ্গি, ডোমকল, বেলডাঙা, রেজিনগর, কান্দি থেকেও ট্রেন, বাস, ট্রেকারে করে সমর্থকেরা নিজেরাই এসেছিলেন। বেলা ১টা নাগাদ সভা শেষ হলেও ধর্মঘটের দিন হামলার প্রতিবাদে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অবস্থানেও ছিল হাজারখানেক লোক। মহম্মদবাজারে পশ্চিমপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে সূর্যবাবু যখন পৌঁছন, স্কুল বাড়ির ছাদে, রাস্তাতেও তখন চোখে পড়ার মতো ভিড়। গন্ডগোল এড়াতে সভাস্থলের চার কিলোমিটার দূরে রাস্তাতেও পুলিশকর্মীদের দেখা গেছে। তবু পথে সিপিএম সমর্থকদের গাড়ি আটকানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমুলের বিরুদ্ধে। ভিড় দেখে উজ্জীবিত সূর্যবাবু তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, ‘‘পিঠের তূণে সব তির শেষ হয়ে যাবে কিন্তু বামপন্থীদের শেষ করা যাবে না!’’
বাম নেতারা বুঝেছেন, রাস্তায় আন্দোলনই আবার তাঁদের চর্চায় ফিরিয়েছে। তাই এ দিনই কলকাতায় ফ্রন্টের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, আন্দোলন চলবে। ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু জানান, বিদ্যুতের মাসুল বৃদ্ধি এবং খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় আসার আবেদনের মেয়াদ না বাড়ানোর প্রতিবাদে জেলায় জেলায় সেপ্টেম্বর জুড়ে প্রচার, আন্দোলন, অবস্থান চলবে।
বামেরা যখন আন্দোলনের পথেই ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া, প্রদেশ কংগ্রেসের সমস্যা অব্যাহতই! দিল্লিতে এ দিনই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী, পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাবের উপস্থিতিতে বৈঠকে গিয়ে রাজ্যে দলের কোন্দল নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন রাহুল গাঁধী। বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গে এআইসিসি-র পর্যবেক্ষক সি পি জোশী দলের সহ-সভাপতিকে বলেন, রাজ্যে অধীরের বিকল্প নেই। কিন্তু প্রবীণ নেতারা তাঁর সঙ্গে সহযোগিতা করছেন না। আবার ঠিক তার উল্টো অভিযোগ করে বাংলায় গিয়ে নিজের ‘অপমানে’র বিবরণ দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন সহ-পর্যবেক্ষক শাকিল আহমেদ খান! এই পরিস্থিতিতে জোশীকে রাহুল পরামর্শ দিয়েছেন, বাংলায় আরও সময় দিয়ে সব নেতাকে নিয়ে বসতে হবে।